ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে রাস্তা মেরামতে শিক্ষার্থীরা
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাধুহাটি থেকে তৈলটুপী সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারে অভাবে রাস্তার বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে।সড়কটি দেখার কেউ নেই। সড়কটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে, এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কটির বেহালদশার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
উপজেলা এলজিইডি জানায় , শহরের দোয়েল চত্তর থেকে তৈলটুপী পর্যন্ত সড়কটি ১৬ কিলোমিটার। ২০০০ সালে সড়কটির কার্পেটিং কাজ করা হয়। ভবানিপুর বটতলা থেকে জোড়াদহ বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলামিটার রাস্তা পাঁচ বছর পূর্বে সংস্কার করেছিল এলজিইডি’র অর্থায়নে ।
স্থানীয়রা জানায়, রাস্তাটি বিগত প্রায় ৩/৪ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় ছোট-বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার সময় অল্প পানিতেই সড়কটি প্রায় সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে প্রায় হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সঙ্গে জোড়াদহ, ভায়না, তাহেরহুদা ও কুষ্টিয়া জেলার কিছু অংশের কয়েক হাজার মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক এটি। এছাড়াও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসাসহ নানা প্রয়োজনে পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া, চুয়াডাংগা ও ঝিনাইদহে শহরে যাতায়াত করে।সড়কটি দিয়ে শত শত যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে । সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটির প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার অংশের এতটাই বেহাল দশা গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে তাদের দ্বারা গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে খানাখন্দ পার করা হচ্ছে।প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে ভারী যান চলাচল। ছোট খাটো দু-একটি যান চলাচল করলেও তা প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। মাঝে মাঝেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বাধ্য হয়ে মানুষ অন্য রাস্তা হিসাবে বেছে নিচ্ছে, গ্রামীণ সড়কগুলো এতে যেমন তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে ও বাড়তি ব্যয় বেড়েছে, নষ্ট হচ্ছে গ্রামের রাস্তাগুলো।
এরই মধ্যে রাস্তাটির সংস্কাররে জন্য এগিয়ে এসেছে কয়েক জন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, তারা সকলে ভেড়খালী যুব উন্নয়ন সংঘের সদস্য। এই ভাঙ্গা সড়কটি সংস্কারের জন্য বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ২০ থেকে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও যুবক সকাল থেকে বিকাল পযর্ন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, গ্রামের রাস্তার এত খারাপ অবস্থা দেখে আমরা নিজেদের ভিতরে আলোচনা করে নিজেদের উদ্যোগে রাস্তা সংস্কারের কাজ করছি।এ রাস্তায় প্রায় ২০ টলি ইটের টুকরা ও ৫টলি বালি ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের নিজেদের অর্থ দিয়ে অনেকদুর থেকে মালামাল নিয়ে এসে খানাখন্দ ভরাট করেছি। স্বেচ্ছাশ্রমে যুবকেরা মালামাল উঠানো, নামানোসহ সব কাজই করেছে।
রাস্তায় চলাচলকারী গাড়ী চালকরা জানিয়েছে, রাস্তার ভাঙ্গা অংশগুলো খুবই ঝুকিপূর্ণ ছিল। এ রাস্তা সংস্কারে আমরা বড় রকমের বিপদ থেকে রহায় পেয়েছি। ঢাকা কলেজের ছাত্র মোঃ মঞ্জুর রশীদ বলেন, স্বাভাবিক ভাবে চলাচল করতে পারে এ জন্য দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে আমরা এ সংস্কার কাজ করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমুর রশীদ বলেন, শহর বা গ্রামের যে সব রাস্তা বৃষ্টির কারণে ভেঙ্গে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সব স্থানে যুবকেরা নিজ দায়িত্বে কাজ করলে সাময়িক ভাবে হলেও দেশের মানুষের উপকৃত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইখতিয়ার উদ্দিন সংস্কার কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন ।
তরুণদের এই কাজকে স্বাগত জানিয়ে জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, ওই সড়কটির প্রায় ৫ কিলোমিটার ভবানিপুর থেকে জোড়াদাহ ও বাকচুয়া কালীমন্দির পর্যন্ত রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ। এতে জোড়াদহ, ভায়না ও তাহেরহুদাসহ তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। তিনি সড়কটির দ্রুত সংস্কারের দাবী জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সড়কটির ওই এলাকার ৫ কিলোমিটার অংশের সংস্কারের জন্য এলজিইডির ফ্লাড প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।আমি আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাবে।