প্রাণ দিয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করলেন আলমডাঙ্গার তরুণ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী
প্রাণ দিয়ে সুদের টাকা পরিশোধ করলেন আলমডাঙ্গার তরুণ ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী। সুদের টাকা আদায় নিয়ে জটিলতা সংক্রান্ত মামলার আসামি হিসেবে আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় চুয়াডাঙ্গার ঘোড়ামারা ব্রীজের নিকট সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। একই মোটরসাইকেলের চালক আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম স্বপন আহত হন।
আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার এরশাদপুর গ্রামের নুর ইসলামের স্ত্রী হালিমুন ওরফে হালিমা ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, এরশাদপুর গ্রামের মৃত খয়বার আলীর ছেলে ইদ্রিস আলী (৩০) এরশাদপুর চাতাল মোড়ে মুদি দোকানি ছিলেন। ব্যবসায় গতি ফেরাতে তিনি নিজ গ্রামের নুর ইসলামের স্ত্রী সুদে কারবারি হালিমার নিকট থেকে কয়েক বছর আগে চড়া সুদে দুই লাখ কুড়ি হাজার টাকা নেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে ইদ্রিস আলী সুদে নেওয়া সমুদয় টাকার চেয়ে অনেক বেশি টাকা পরিশোধ করেন। অথচ, সুদে কারবারি হালিমা ইদ্রিস আলীর নিকট আরো আড়াই লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করতে থাকেন। এই বিষয় নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠকও বসে।
সালিশকারীদের অন্যতম ছিলেন আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন। তিনি জানান, " চাতাল মোড়ের ব্যবসায়ী রেজাউলের বাড়িতে অনুষ্ঠিত সালিশে উপস্থিত ছিলাম। ইদ্রিস আলী দাবি করেছিলেন যে তিনি যে পরিমাণ টাকা সুদে নিয়েছিলেন তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা পরিশোধ করেছেন। তার কাছে সুদ পাবে ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু সুদে কারবারি মহিলা আড়াই লাখ টাকা পাবেন বলে দাবি করেন। কারণ সুদে মহিলা টাকা দেওয়ার সময় বøাঙ্ক চেক ও বøাঙ্ক স্ট্যাম্প ইদ্রিসের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে ওই সালিশ মীমাংসা ছাড়াই শেষ হয়। "
এদিকে, সুদখোর মহিলার লাগাতার তাগাদা ও হুমকি ধামকিতে মানসম্মানের ভয়ে এক পর্যায়ে ইদ্রিস আলী আত্মগোপন করেন। সে সময় ইদ্রিস আলীর খোজ না পেয়ে তার ভাই আলমডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেছিলেন বলেও জানা যায়।
এরই এক পর্যায়ে হালিমা সুদের ৩৫ হাজার টাকাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে ৫ লাখ টাকা পাবেন মর্মে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলায় হাজিরা দিতে গতকাল আদালতে যাচ্ছিলেন ইদ্রিস আলী। হাজিরা দিতে গেলে তাকে বিজ্ঞ আদালত গ্রেফতারের আদেশ দিতে পারেন, এমন আশঙ্কার কথা সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বার বার বলেছিলেন ইদ্রিস আলী। এ তথ্য জানিয়ে পরিবারের লোকজন বলছেন,তার কথায় সত্য হল। তিনি আর কখনও বাড়ি ফিরবেন না। হালিমার সুদের ব্যবসা, তার সীমাহীন অর্থলোলুপতার কারণে যুবক ইদ্রিস আলীর প্রাণ গেল। একটা পরিবার ভেসে গেল।
এদিকে, সুদের জালে আটকিয়ে ইদ্রিস আলী মারা যাওয়ার পর হালিমার সুদে কারবারির অনেক খবর জনসমক্ষে আসছে। অনেকেই হালিমার কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে সর্বশান্ত হওয়ার পথে রয়েছেন বলে বাতাসে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে।
আহত অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে প্রথমে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ইদ্রিস আলীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া পথে তিনি মারা যান। রাতেই এরশাদপুর গ্রামের কবরস্থানে ইদ্রিস আলীর মরাদেহ দাফন করা হয়েছে।