চলাচলের অনুপযোগী ব্রীজ নিজেরা মেরামত করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন নাগদাহ গ্রামবাসি
সদিচ্ছা ও নিষ্ঠা থাকলে যে অনেক কিছু করা সম্ভব, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করলেন নাগদাহ ও বলিয়ারপুর গ্রামবাসি। সরকারি কর্তাব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধিদের জন্য অপেক্ষা না করে তারা নিজেরাই স্ব- উদ্যোগে নিজ এলাকার ব্যাবহার অনুপযোগী ব্রিজকে পুনঃনির্মাণ করেছেন।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সরিষাডাঙ্গা গ্রামের ভেতর দিয়ে গঙ্গা-কপোতাঙ্গ সেচ প্রকল্পের (জিকে) ক্যানেল প্রবাহিত। সরিষাডাঙ্গা গ্রামে ক্যানেলের উপর ৬০'র দশকে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়। দীর্ঘ ৫০/৬০ বছরে তা এতটাই ভেঙ্গে পড়ে যে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। অথচ, ওই ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন এলাকাবাসি ঘোলদাড়ি বাজার, খাসকররা বাজার, সরোজগঞ্জ বাজার ও চিলাভালকী মোড় হয়ে আলমডাঙ্গা শহরে যাতায়াত করেন। অন্যদিকে, নীলমণিগঞ্জ বাজার হয়ে জেলা শহর চুয়াডাঙ্গায় যাওয়ার একমাত্র সড়ক। অথচ, এই অধিক জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘ প্রায় ২ বছর ধরে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ছিল।
বলিয়ারপুর গ্রামের শিপন আলী জানান, “দীর্ঘদিন এলাকাবাসির কষ্টের কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোন কাজের কাজ হয়নি। শুধু আশ্বাস পেয়েছি। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাপজোক। শেষ পর্যন্ত কাজ আমাদেরই করতে হোল।‘
নাগদাহ গ্রামের সরোজ মিয়া জানান, "নাগদাহ ও মোমিনপুর ইউনিয়নের এই অঞ্চলে কয়েক শ মৎস্য খামারী রয়েছেন। তাদের মাছ বহনকারি গাড়ি প্রতিনিয়ত ওই ব্রীজের উপর দিয়ে চলাচল করে। অথচ, এই ব্রিজটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনেক পথ ঘুরে ঘুরে যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছতো। যা অনেক ঝুকিপূর্ণ ছিল। এমতাবস্থায় নাগদাহ গ্রামের আহমেদ, রাসেল জোয়ার্দ্দার, বলিয়ারপুরের হাতেম আলী ও শিপনের নেতৃত্বে কিছু যুবক গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি মেরামতের উদ্যোগ নিলেন। তাদের উদ্যোগে গ্রামবাসিরা অকৃপণভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাইতো ব্রিজটি সহজেই সংস্কার করা সম্ভব হল।"
শরিষাডাঙ্গা গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শি একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ১৬ জুলাই গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে বেহালদশা ব্রিজটি মেরামত করেন। একদিন পরই ওই ব্রিজের উপর দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে যানবাহন। শরিষাডাঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শামসুল আলম জানান, “ব্রিজটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে দীর্ঘদিন মোটরসাইকেল নিয়ে সোজা পথে ঘোলদাড়ি ও খাসকররা বাজারে যেতে পারতাম না। অনেক ঘুরে কাঁচা রাস্তায় যাতায়াত করতে হতো।“
আলমসাধুচালক মিরাজ আলী জানান, “তিনি দীর্ঘদিন ওই ব্রিজ দিয়ে গাড়ি নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় যাতায়াত করতে পারেন না। কাথুলি গ্রামের ভেতর দিয়ে কাঁচা রাস্তায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতেন। এখন ব্রিজটি মেরামত করায় বেশ সুবিধা হয়েছে।“
নাগদাহ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল জোয়ার্দ্দার জানান, “ব্রিজটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী ছিইল। অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধি মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু শেষাবধি আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে কাজ হয় নি। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশ কয়েক মাস পূর্বে মাপজোক করে নিয়ে গেলেও ব্রিজটি সংস্কার করা হয়নি। এমতাবস্থায় নাগদাহ গ্রামের এক বড় ভাইয়ের সাথে এ সমস্যা নিয়ে আলাপ করি। তার অনুপ্রেরণায় গ্রামবাসিকে সাথে নিয়ে নিজেরাই ব্রিজটি মেরামত করেছি।“