কালিদাসপুর ইউনিয়নে এলজিএসপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ
আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নে এলজিএসপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চেয়ে গ্রামবাসির অনেকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর দাখিলকৃত ওই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা -১ আসনের সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক, চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যানকে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কালিদাসপুর ইউনিয়নের ডম্বলপুরের আনোয়ারের বাড়ি হতে রফিকুলের বাড়ি পর্যন্ত ভায়া সাত্তারের বাড়ি হতে সোহরব মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ভায়া হারেজ আমিনের বাড়ি হতে তাইজেলের বাড়ি পর্যন্ত ভায়া মতিয়ারের বাড়ি হতে নাজিম উদ্দীনের বাড়ি পর্যন্ত ডবলিউবিএমকরণ কাজের বরাদ্ধ ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯শ টাকা। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, ওই রাস্তাগুলি কাঁচা দেখিয়ে এলজিএসপি থেকে বরাদ্ধ চাওয়া হয়। অথচ, ওই রাস্তাগুলির সবই জেলা পরিষদ কর্তৃক ফ্ল্যাট সোলিং করা হয়েছিল। পরে রাস্তাগুলির পুরনো ইট তুলে খোয়া করে তা দিয়ে ডবলিউবিএমকরণ করে এলজিএসপি প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রাস্তা ডবলিউবিএমকরণে ৬ ইঞ্জি পুরু করে ইটের খোয়া দেওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ২/৩ ইঞ্জি পুরু করে খোয়া বিছানো হয়েছে।
এছাড়া, চরশ্রীরামপুর ব্রীজ থেকে বটতলা পিচ রাস্তা পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার এবং চরশ্রীরামপুর ব্রীজ হতে পরিবারকেন্দ্র অভিমুখের ২ লাখ টাকার এলজিএসপি প্রকল্পের দুটি রাস্তায় ডবলিউবিএমকরণ কাজেও একই অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। এক রাস্তার ফ্ল্যাট সোলিং-র ইট তুলে দুটি রাস্তার ডবলিউবিএমকরণ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে।
তাছাড়া, জগন্নাথপুর মসজিদ হতে জগন্নাথপুর পিচ রাস্তার ব্রীজ পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার ডবলিউবিএমকরণ কাজে একই অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা দেখতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তাগুলির শুধুমাত্র এজিং করণে ব্যবহৃত ইটগুলি নতুন দেখা গেছে। তাছাড়া সব পুরাতন ব্যবহৃত ইটের খোয়া ছিল। সকল রাস্তাগুলিতেই গড়ে ৩ ইঞ্চি করে খোয়া ঢালা হয়েছে।
চরশ্রীরামপুর গ্রামের সাবেক মেম্বর নজরুল ইসলাম জানান, মইন উদ্দীন চেয়ারম্যানের সময়ে এ সকল রাস্তা ফ্ল্যাট সোলিং করা হয়েছিল। সেই ইটখোয়া তুলে এলজিএসপির ডবলিউবিএমকরণ করা হয়েছে। এটা বড় ধরণের অনিয়ম।
ডম্বলপুর গ্রামের মন্ডল আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমাদের অধিকাংশ রাস্তায় ফ্ল্যাটসোলিং করা ছিল। সেই ইট তুলে এবার ডবলিউবিএমকরণ করা হয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে কুমারী গ্রামের এক সংখ্যালঘুর ঘরভাঙ্গা পুরনো ইটের খোয়াও দেওয়া হয়েছে।
কালিদাসপুর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য নূর বানু চরশ্রীরামপুর ব্রীজ থেকে বটতলা পিচ রাস্তা পর্যন্ত ৫ লাখ টাকার এবং চরশ্রীরামপুর ব্রীজ হতে পরিবারকেন্দ্র অভিমুখের ২ লাখ টাকার এলজিএসপি প্রকল্পের দুটি রাস্তার ঠিকাদার। এ রাস্তা দুটি নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে কি না তা জানোতে চাইলে তিনি বলেন, এই দুটি রাস্তা আগে হেরিংবন্ড ছিল। সেই ইট তুলে খোয়া বানিয়ে এখন ডবলিউবিএমকরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কাজ দুটির ঠিকাদার যে আমি তা জানতাম না। একদিন ইউনিয়ন পরিষদে গেলে পরিষদের সচিব তাকে বিলে স্বাক্ষর করে দিতে বলেন। সেই সময় সচিবের সাথে অনেক ঝগড়াও হয়েছিল। আমি নিজেই জানিনা, কাজ করলাম না, অথচ ঠিকাদার হয়ে গেলাম। এ অনিয়মের বিচার আমিও চায়।
কালিদাসপুর ইউনিয়নের এলজিএসপি প্রকল্পের কাজগুলি দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকোশলি শামসুল হক। তিনি জানান, অ্যাস্টিমেট করার আগেই রাস্তার কাজ শেষ করে ফেলেছে। পরে পুরনো ইটের দাম অ্যাস্টিমেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। অ্যাস্টিমেটের আগেই রাস্তা করা যায় কি না তা জানোতে চাইলে তিনি সদোত্তর দিতে পারেননি।