কঠিন হিসেবের উপর দাঁড়িয়ে বিশ্বঃ বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে
টিপু সুলতানঃ ১৯৪৫ সাল, আগষ্টের ৬ ও ৯ তারিখ Little boy & Fat man বিস্ফোরিত হল জাপান তথা এশিয়ার মাটিতে। আর অমনি করে পৃথিবির কতৃত্ব বা মোড়লিপনা মার্কিনিদের হাতে এসে ধরা দিল। সেই থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পৌণে এক শতাব্দী মার্কিনিরা আমাদের এই পৃথিবিকে শাসন ও বেশির ভাগ সম্পদ ভোগ করে আসছে তার NATO মিত্রদের সাথে নিয়ে। কিন্তু গত ২০১৬ সালে সেদেশের মানুষ একজন সাবেক TV অভিনেতা এবং বর্তমান ধনাঢ্য ব্যবসায়ি ডোনাল ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করায় বর্তমান গতানুগতিক ৭৫ বছরের বিশ্ব রাজনীতির ধারার পরিবর্তন হতে চলেছে। সেখানে পরিবর্তনের নতুন কারিগর হতে চলেছে এক সময়ের আন্ডার ডগ বা শুধুই জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতিসংঘের স্হায়ি কমিটির সদস্যপদপ্রাপ্ত রাষ্ট্র চিন। চিনাদের হাতে মার্কিন বা পশ্চিম ইউরোপীয়দের মত পরিক্ষিত কার্যকর গোলা বারুদ না থাকলেও আছে ঋণমুক্ত কাড়ি কাড়ি টাকা যা সারা পৃথিবির কাছে ঈর্ষার বিষয়।
এমবতাবস্থায়, মার্কিনিরা ধীরে ধীরে তাদের সম্প্রসারণবাদী নীতি থেকে সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণ করছে। ফলে তারা সারা পৃথিবি থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিচ্ছে এবং সেখানে চিনারা মার্কিনিদের শুন্যস্হান পুরণ করছে। ইতোমধ্যে চিনের সাথে আমেরিকার দুটি ক্ষেত্রে ব্যাপক বাক আর প্রক্সি যুদ্ধ চলছে। এক হুয়াওয়ে ৫জি টেলিকম আর অপরটি দক্ষিণ চিন সাগরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে আমেরিকানরা চিনের এখনও দৃশ্যমান কিছু করতে না পারলেও গুগল পুরোপুরি আমেরিকার আধিপত্য থাকার ফলে হুয়াওয়ে নিয়ে চিনারা বেশ বিপদে আছে বলেই মনে হচ্ছে।
এমত পরিস্থিতিতে, চিন বিশ্বের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরানোর জন্য হঠাৎ ভারত সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটাল এবং খুবই ছোট ঘটনা যাকে বলে হাতাহতি পর্যায়ের খন্ড যুদ্ধে উভয় পক্ষের কিছু সৈন্য হারানোর বিনিময়ে আপাতত কিছুটা শান্ত হল। মজার বিষয হচ্ছে - এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার হল বিশ্বের কাছে আর তা হচ্ছে চিন এবং ভারত উভয়েরই প্রতিবেশির সাথে সম্পর্ক অতি খারাপ। যেমন - চিনের পক্ষে এখন সরাসরি দুটি দেশ। একটি তার অতি নিকট প্রতিবেশি উত্তর কোরিয়া আর অপরটি একটু দূরের পাকিস্তান। যারা কিনা উভয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেউলিয়া এবং আমার মতে যুদ্ধ শুরু হলে তার রসদ যোগানোর সামর্থ্য রাখেনা। কারন স্বরূপ বলতে পারি - পাকিস্তান মাত্র তিন বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে এমএফ এর নিকট বেইল আউটপ্রাপ্ত রাষ্ট্র সেখানে কিসিন্ঞ্জারের ভাষায় আমাদের তলাবিহীন ঝুড়ি ক্ষেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশ এখন ৩৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার রিজার্ভ ফান্ড বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত।
অপরদিকে, চিনের বিপক্ষের প্রতিটি রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে খুবই স্বাবলম্বী। যেমন - জাপান,দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, ভিয়েতনাম, ফিলিপিনস, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং তাদের সামরিক পার্টনার আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া চিনের অবশস্থাটা উপরে তুলে ধরা হল। সঙ্গত কারণেই, এখন ভারত প্রসঙ্গে আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে চিন ও ভারত উভয়ই একই দোষে দুষ্ট, আর তা হচ্ছে - প্রতিবেশিকে সন্মান না করা এবং প্রাপ্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। যেমন - চিন-ভারত যুদ্ধ উন্মাদনায় দেখা গেল বাংলাদেশ ব্যতিত সকল দক্ষিণ এশিয়ান রাষ্ট্রই কার্যত সরাসরি ভারতবিরোধী অবস্হানে। কিন্তু ভারতের জন্য কিছু আশার বাণী এই যে আমেরিকা তার বর্হিবিশ্ব থেকে সরে গেলেও ভারতকে তার মিত্র বা চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাড় করাতে এবং তার সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তা করছে। যেমন - আমেরিকা এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অতি উচ্চমানের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন চিনের পরিবর্তে ভারতে তাদের কোম্পানি স্হানান্তর করছে।
অপরদিকে, পৃথিবির বেশ কিছু উন্নত দেশে বর্তমানে ভারতীয় বংশদ্ভূদরা সরকার প্রধান। যার প্রধান কারণ কুটনীতি এবং অর্থনীতি। যেমন - বর্তমানে বৃটেনের ট্রেজারি সেক্রেটারি বা অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি ইন্ডিয়ান বংশদ্ভূত, আয়ারল্যা্ন্ডের প্রধানমন্ত্রি,পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রি,কানাডার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি এবং আমেরিকার নিকট ভবিষ্যৎ ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনিত ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থি এবং বর্তমান ক্যালফোরর্নিয়ার সিনেটর,কামালা হ্যারিস।
সুতরাং, খেলা এখন আমাদের দোর গোড়াতে। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূল হলে আমাদের অনেক পিছনে পড়ে যেতে হবে। কারণ, আর একটু যদি পরিষ্কার করি - বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সাথেই নতূন জন্ম নেয়া কৃষি নির্ভর রাষ্ট্রটিকে সিকিম বানানোর জন্য নদিতে বাঁধ দিয়ে আমাদের মেরুদন্ড ভাঙার চেষ্টা করা হয়। এরপর সীমান্ত হত্যা, অসম বাণিজ্য, সব শেষে দেশের চাকরি দখল করে আমাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা লুন্ঠণকারি একটিপক্ষ। অপরপক্ষ বর্তমানে দেশে ২৪বিলিয়ন ডলারের উন্নয়নের কাজ করছে। দেশের উৎপাদিত প্রায় সমস্ত পণ্যের সে দেশে বিনা শুল্কে প্রবেশাধিকার প্রদান করেছে। তাছাড়া আরও নানান প্রণোদনা ও উন্নয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশা দেখাচ্ছে।|
সুতরাং, আমার লেখায় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছ যে -,একপক্ষ বাংদেশের উন্নয়ন করছে আর অপর পক্ষ দেশের সে উন্নয়নকে লুটে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আপনারই দেশের নাগরিক হিসেবে সিদ্ধান্ত নিন - আমাদের কোন পক্ষে থাকা উচিৎ?
লেখক: সাবেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্হার কর্মী,লন্ডন চার্চিল কলেজে অধ্যায়নকারী এবং বর্তমান ইউরোপ প্রবাসি।