আলমডাঙ্গায় দিগন্তজুড়ে চাষ হচ্ছে নানা জাতের সরিষা : ছাড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রা
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় গ্রাম এলাকায় দিগন্তজুড়ে সরিষা চাষ হচ্ছে। হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কম খরচে বেশি লাভ, বর্তমানে সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধি, অনেকে একে ভোজ্য তেল সয়াবিনের বিকল্প হিসাবেও ব্যবহার, বোরো আবাদের খরচ যোগাতে ও স্বল্প খরচ ও সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায় বলে সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা।
তাছাড়া, সার, ওষুধ, পানি ও অল্প পরিচর্যায় এবং সরকারি প্রণোদণা পাওয়ায় দিন দিন সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দিগন্ত বিস্তৃত হলুদিয়া সরিষা ফুল শীতের উত্তুরী হাওয়ায় আহ্লাদে দুলছে। ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত মাঠপ্রান্তর। সরিষার হলুদ ফুলে বাতাসের দোলায় একই ছন্দে দোল খাচ্ছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। চাষে সময় ও খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় সরিষা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন আলমডাঙ্গার কৃষকরা। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। সাথে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এতে কৃষকরা লাভবান হবেন, পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে দুই হাজার ২৪৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১৫০ হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এ বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় প্রত্যেক কৃষককে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ বছর টরি-৭, রাই-৫, বারি সরিষা - ৯, বারি সরিষা - ১০, বারি সরিষা -১৩, ১৪ জাতের সরিষা। এসকল জাতের মধ্যে বেশি চাষ করা হয়েছে বারি সরিষা ১৩ ও ১৪। এ জাতের সরিষায় ফলন বেশি।
আলমডাঙ্গার পাঁচলিয়া গ্রামের কৃষক বাবলুর রহমান জানান, সেচ, সার ও অন্যন্য খরচ কম হওয়ায় সরিষা চাষে লাভ হয় বেশি। তাছাড়া সরিষার তেল সয়াবিন তেলের চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এখন গ্রামের মানুষও বেশ সচেতন। তারা সয়াবিনের চেয়ে সরিষার তেল খাওয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
সরিষা তুলে নিয়ে সেই জমিতে কৃষক ধান রোপণ করতে পারবেন। সরিষা চাষ করলে ওই জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করা যায়। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন, অপরদিকে পুষ্টিকর ভৌজ্য তেলের চাহিদাও মিটবে।
কৃষকরা বলছেন, আমন কাটা ও মাড়াইয়ের পর ৩ মাসের বেশি সময় পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। এ সময়ে পতিত জমিতে বাড়তি লাভের আশায় সরিষা চাষ করেন অনেকে। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস।
মধুপুরের ইসমাইল হোসেন ও নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা আড়াই বিঘা করে সরিষা চাষ করেছি। আশা করছি, ভালো ফলন হবে। এই সরিষা বিক্রি করে বোরো আবাদের তেল ও সার কেনার টাকা জোগাড় হয়ে যাবে। এছাড়া বর্তমানে সয়াবিন তেলের দাম বেশি। তাই বিকল্প হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভীন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর আলমযাঙ্গা উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে ২৩০ হেক্টর। গত বছর উপজেলায় সরিষার আবাদ হয়েছিল ২১৫০ হেঃ জমিতে। এ বছর এটা বেড়ে হয়েছে ২৪৮০ হেক্টর। এই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো সরকারি প্রণোদনা। এ প্রণোদনা সরিষা চাষে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ৮৬৪০ জন কৃষক সরিষা আবাদের জন্য সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন।
সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শও সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আমরা কৃষকদের সরিষা চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পাশাপাশি উঠান বৈঠক করেছি, লিফলেট বিতরণসহ মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন চাষের স্টল বা যেখানে লোক সমাগম বেশি ছিল সেখানেই সরিষা চাষের ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় সরিষা ক্ষেতে মৌবক্স বসানো হয়েছে। ফলে সরিষার সাথে আমরা সরিষা ফুলের মধুও পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আশা করছি ভবিষ্যতে সরিষার আবাদ আলমডাঙ্গা উপজেলায়ে আরো বৃদ্ধি পাবে।