আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়ার মুদি দোকান কর্মচারী মোস্তফাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা মালিকের ভাই সজিব ও আকরাম
পারিবারিক দোকানের ক্যাশ কাউন্টারের ড্রয়ার থেকে টাকা চুরির ঘটনা দোকান মালিক বড় ভাইকে বলে দেওয়ায় হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের কর্মচারী মোস্তফাকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এনজিও'র ঋণ পরিশোধ করতে দোকান মালিকের ছোটভাই সজিবকে ওই হত্যাকান্ড ঘটাতে সহযোগিতা করেন মোড়ভাঙ্গার আকুব্বর আলীর ছেলে আকরাম।
গ্রেফতারের পর আকরাম গতকাল সোমবার বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করতে গিয়ে উপরোক্ত তথ্য দেন।
ইতোপূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় নারায়নগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানার ১৩নং সেক্টর পূর্বাচল এলাকা হতে আকরাম আলীকে গ্রেফতার করে।
আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিতে গিয়ে আকরাম জানান, দোকানের ক্যাশ ড্রয়ার থেকে ছোটভাই সজিব টাকা চুরি করতেন। ঘটনাটি দেখে ফেলেন দোকানের কর্মচারী মোস্তফা। এ চুরির ঘটনাসহ আরও কিছু পারিবারিক সমস্যা কর্মচারি মোস্তফা দোকান মালিক বড় ভাই জাহাঙ্গীরকে বলে দেয়। এই নিয়ে তাদের পরিবারে অশান্তি চলছিল।
হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই হত্যা মামলার ১নং আসামী সজিবের সাথে মালামাল ক্রয়সূত্রে পূর্বপরিচিত ছিলেন আকরাম হোসেন। আকরাম বিভিন্ন এনজিও সংস্থার নিকট থেকে ঋণ নিয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পারিবারিক অশান্তির মাঝে তিনি সজিবের সাথে দেখা করতে আসেন। তিনি নিজের আর্থিক কষ্টের কথা সজিবকে জানান। সজিব টোপ হিসেবে গ্রহণ করেন আকরামের আর্থিক সমস্যাকে। তিনি আকরামকে প্রস্তাব দেন যে, মোস্তফাকে সরিয়ে দিতে সহযোগিতা করলে তাকে মোটা অংকের টাকা দেওয়া হবে। এই টোপ গিলে ফেলেন চরম আর্থিক কষ্টে থাকা আকরাম। পরে মাঠে বসে তারা হত্যাকান্ডের ছক আঁকেন।
দোকানের কর্মচারী মোস্তফা প্রতিদিনের মত দোকানের কাজ শেষে গত ১৪ আগস্ট রাত অনুমান সোয়া ৯ টার সময় বাড়ি ফিরছিলেন।
মাথাভাঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত স্টিল ব্রীজ পার হয়ে যাওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ওৎ পেতে আসামী সজিব ও আকরাম পিছন থেকে মোস্তফাকে ডাক দেন। তাদের ডাকে মোস্তফা ফিরে গেলে আসামী আকরাম কৌশলে ভিকটিমকে ব্রীজের পূর্ব-দক্ষিণ পাশের পানের বরজের মধ্যে নিয়ে যান। সজিব ও আকরাম চড়-থাপ্পড় মারলে ভিকটিম মোস্তফা চিৎকার করেন। সে সময় তার মুখে গামছা চেপে ধরেন। এতে ভিকটিম মোস্তফা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন আকরাম ও সজিব মোস্তফার হাত পা বেঁধে নাক-মুখে গামছা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করেন। পরে সজিব ও আকরাম ভিকটিম মোস্তফাকে মাথাভাঙ্গা নদীতে থাকা মাছ ধরা বাঁশের খুঁটির সাথে পানির নিচে নিহত মোস্তফাকে বেধে রাখেন।
ঘটনার পর দিন আকরামকে দশ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলেন সজিব।
উল্লেখ্য, অন্য আসামী সজিবকে পূর্বেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
উল্লেখ থাকে যে, আলমডাঙ্গার মোড়ভাঙ্গা গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের কর্মচারী ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে দোকান থেকে গোলাম মোস্তফা বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। ওই রাতেই হাটবোয়ালিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা নদীর নির্মানাধীন ব্রিজের নিকট থেকে কর্মচারীর মোবাইল ফোন ও সাইকেল উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজের পর থেকেই মোস্তফার পরিবার দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে আসছিলেন।
নিখোঁজের ১১ দিন পর যুবকের অর্ধগলিত লাশ ভেসে ওঠে মাথাভাঙ্গা নদীতে। ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে বাঁশবাড়িয়া ফেরীঘাট এলাকার মাথাভাঙ্গা নদীতে নিখোঁজ যুবক মোস্তফার লাশ ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয়রা।
লাশ উদ্ধারের দিনগত রাতে নিহত মোস্তফার মা বাদী হয়ে দোকান মালিক ও তার ভাইকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেন।