আলমডাঙ্গার ডম্বলপুরের জনপ্রিয় পল্লিচিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামকে হত্যা করে জামাই ও বিয়াই
বাপ ও ছেলে দুজন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ডম্বলপুরের জনপ্রিয় পল্লিচিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামকে। পরে বাড়ি থেকে দড়ি নিয়ে এসে মরদেহের গলায় বেঁধে ব্রীজে ঝুলিয়ে রাখে।
রবিবার নিহত তৌহিদুল ইসলামের জামাই জীবন আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিতে গিয়ে উপরোক্ত তথ্য দেন।
হত্যাকান্ডের দুদিন পর নিহতের স্ত্রী বিউটি খাতুন বাদী হয়ে গতকাল রবিবার সকালে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ আসামী নিহতের বেয়াই ও জামাই যথাক্রমে মাধবপুর গ্রামের সানোয়ার হোসেন ও তার ছেলে জীবনকে আটক করে। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই জীবন শ্বশুরের হত্যাকান্ডে নিজে ও তার বাপ জড়িত বলে স্বীকার করেন। পরে আদালতে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে জীবন স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তিতে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, জীবন তার বাপ সানোয়ার হোসেনের সাথে যুক্তি পরামর্শ করে বাপ-বেটা মিলে ডাক্তার তৌহিদকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক তারা ডাক্তার তৌহিদকে হত্যার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ঘটনার রাতে জীবন তার শ্বশুরকে বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের দরবারে যেতে দেখে তার বাপকে জানান। দ্রুত বাপ-বেটা নিকটবর্তী ব্রীজের উপর অবস্থান নিয়ে ডাক্তার তৌহিদের ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। ব্রীজের উপর ছিলেন বাপ। ছেলে ব্রীজে উঠতে বাম পাশেই লুকিয়ে ছিলেন। রাত রাতে দরবার থেকে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন ডাক্তার তৌহিদ। ব্রীজের উপর তার গতিরোধ করে সামনে দাঁড়ান জীবনের বাপ। তিনি বিয়াই তৌহিদের সাথে কথা বলে সময় কালক্ষেপন করছিলেন। এই সুযোগে জীবন পেছন দিক থেকে শ্বশুরের গলায় গামছা বেধে ফাঁস লাগিয়ে টানতে টানতে পার্শ্ববর্তী মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে শ্বশুরের বুকের উপর উঠে জামাই গলার গামছা দুদিকে টানতে থাকেন। আর বিয়াইয়ের হাত ধরে রাখেন বাপ। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তারা পূনরায় লাশ ব্রীজে নিয়ে যান। পরে বাড়ি থেকে দড়ি এনে লাশের গলায় ফাঁস লাগিয়ে ব্রীজে ঝুলিয়ে রাখেন।
কেন এ নির্মম হত্যাকান্ড?
সে সম্পর্কে জীবন জানান। ২ মাস আগে জীবন প্রেম করে তৌহিদ ডাক্তারের মেয়েকে বিয়ে করেন। এ বিয়ে ডাক্তার তৌহিদ মেনে নিতে পারেনি। সম্প্রতি জীবনের মা-বাপ তৌহিদের বাড়ি যান তাদের বৈমাকে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তৌহিদ তাদের অপমান করে ফিরিয়ে দেন। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতেই বাপছেলে তৌহিদকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে আলমডাঙ্গার ডম্বলপুর গ্রামের জনপ্রিয় পল্লী চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ডম্বলপুর গ্রামের একটি ব্রীজের কার্নিশের সাথে গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় তৌহিদের মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও মুখে গামছার অংশ ঢোকানো ছিল।
শুক্রবার ভোরে প্রাতভ্রমণকারিরা তৌহিদের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গ্রামের কবরস্থানে তৌহিদের লাশ দাফন করা হয়।