আলমডাঙ্গায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছেনা আলু-পেয়াজ-ডিম
সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে এ খবরে যারা কম দামে কেনার আশায় বাজারে গেছেন, তাদের অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরেছেন। কারণ আলমডাঙ্গা বাজারে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না বিক্রেতারা। আলু, পেঁয়াজ, ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। গতকাল শনিবারের চিত্র ছিল পূর্বাপর।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। তবে গত দুদিনেও সেটা হয়নি।
গতকাল শনিবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডিম, আলু ও পেয়াজ আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ আরও অধিক মূল্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রেতাদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন তারা নাকি বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়টি জানেন-ই না। তবে অধিকাংশরা বলছেন তারা অধিক দামে কিনেছেন আড়ত থেকে। তাই সরকারের নির্দেশনা মানা সম্ভব না। বাপ্পী স্টোরের মালিক তো বলেই বসলেন " সরকারি মাল বিক্রি করিনে যে সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে। নিজের টাকা খাটিয়ে ব্যবসা করছি।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, " " সরকারের হিসাব আমাদের জানা নাই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি। ইউএনও আজ এসেছিলেন। তাঁকে সব বলেছি। তিনি যত টাকায় কিনি তার চেয়ে কিছু লাভে বিক্রি করতে বলে গেছেন।"
তবে ব্যবসায়ীদের এমন যুক্তিতে সন্তোষ্ট নন ক্রেতা সাধারণ। দোকানে সবজি কিনতে আসা এক ক্রেতা উষ্মা প্রকাশ করে বিক্রেতাকে বলেন, 'কেন দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তো আপনারা (বিক্রেতারা) বাড়তি দামে বিক্রি শুরু করেন। তবে কমলে কেন এত অজুহাত?"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিক্রেতা বলেন, ক্যাশমেমো আছে। সেই দামের হিসাবে পণ্য বিক্রি করছি। হুট করে বললেই কমানো যায় না। আগে দেখি কমে কিনতে পারি কি না।"
গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তখন তিনি জানান, ওই দিন থেকেই খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। তবে গত শুক্রবার ও শনিবার সরকারি নির্দেশনার প্রতিফলনের চিত্র দেখা যায়নি।
এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে।
তবে, গত দুদিনেও সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন সংস্থাকে বাজারে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ কিংবা কৃষি। তবে গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাজার মনিটরিং করেছেন বলে জানা যায়।
রহিদুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারেন, কমাতে পারেন না। বাজারে নিয়মিত তদারকি করাতে হবে। জিনিসের এত দাম, আর কুলাতে পারি না। হাবিবুর নামের আরেক ক্রেতা বলেন, একের পর এক জিনিসের দাম বাড়ছে। শক্ত হাতে বাজার তদারকি না করে শুধু ঘোষণা দিলে দাম কমবে না।
ক্রেতা সুজন ইভান বলেন, দর বেঁধে দেওয়াকে স্বাগত জানাই। কিন্তু বাজারে সেই চিত্র দেখা যায়নি। তাই দর নির্ধারণ করে দায় সারলে হবে না। মাঠ পর্যায়ে এটি কার্যকর করতে হবে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নিয়ে সমন্বিত বাজার তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। তবে গত দুদিনেও অন্য কোনো সংস্থা তদারকিতে মাঠে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।