১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় আত্ম‌গোপ‌নের দোহায় দি‌য়ে ১১ দিন পার কর‌লেও মাথাভাঙ্গা নদীতে ভেসে উঠলো লাশ

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
আগস্ট ২৫, ২০২৩
118
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া থেকে নিখোঁজের ১১ দিন পর যুবকের অর্ধগলিত লাশ ভেসে ওঠে মাথাভাঙ্গা নদীতে। ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার দিকে বাঁশবাড়িয়া ফেরীঘাট এলাকার মাথাভাঙ্গা নদীতে নিখোঁজ যুবক মোস্তফার লাশ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা। সংবাদ পেয়ে ছুটে সনাক্ত করে এটাই নিখোঁজ মোস্তফার লাশ।


গত ১৪ আগস্ট রাত ৯টার দিকে হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী ষ্টোরের কর্মচারী মোস্তফা হোসেন বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। ওই রাতেই হাটবোয়ালিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মাথাভাঙ্গা নদীর নির্মানাধীন ব্রিজের নিকট থেকে ওই কর্মচারীর মোবাইল ফোন পাওয়া যায় এবং পরদিন সকালে কিছুটা দূরে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার ব্যবহৃত বাইসাইকেলটিও পাওয়া যায়। নিখোঁজের পর থেকেই মোস্তফার পরিবার দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে আসছিল। এ ব্যাপারে মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন থানায় জিডিও করেন। তবে নিখোঁজের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় পুলিশের গাফিলতিরও অভিযোগ তোলেন মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন।


রাকিব হোসেন জানান, হাটবোয়ালিয়া বাজারের জননী স্টোরের মালিক জাহাঙ্গীরের দোকানে কর্মচারী হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমার ভাই মোস্তফা কাজ করে আসছিল। দোকান মালিক জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই সজিব দোকান থেকে নিয়মিত টাকা চুরি করতো। টাকা চুরির ঘটনা মোস্তফা দোকান মালিক জাহাঙ্গীরকে জানিয়ে দিলে সজিবের সাথে তার মতদ্ব›দ্ব দেখা দেয়। টাকা চুরির বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে মতদ্ব›দ্বর কারণে মোস্তফা দোকানে না আসলে জাহাঙ্গীর বাড়িতে গিয়ে তাকে নিয়ে আসতো। এ নিয়ে নিখোঁজের ক'দিন আগে সজিব মোস্তফাকে মারধরও করে। এরপরই ১৪ আগস্ট রাতে মোস্তফার নিখোঁজের ঘটনা ঘটে।


নিহত দোকান কর্মচারী মোস্তফা হোসেন(৩০) উপজেলার হারদী ইউনিয়নের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের মৃত হবিবার রহমানের ছেলে। মোস্তফার একটি সাত মাসের কন্যা সন্তান রয়েছে।
মোস্তফা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার বড় ভাই রাকিব হোসেন ও মা সাহেদা খাতুন একবার হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্প ও আরেকবার আলমডাঙ্গা থানায় ঘুরতে থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয় তদন্ত চলছে। কিন্ত ১১ দিন পরও নিখোঁজ মোস্তফার কোন খোঁজ করতে পারেনি । এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার মাথাভাঙ্গা নদীর বাশবাড়িয়া ফেরিঘাট এলাকায় একটি অর্ধগলিত লাশ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা। নিখোঁজ মোস্তফার পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে এসে তার পরনের গেঞ্জি ও প্যান্ট দেখে শনাক্ত করে এটা মোস্তফার লাশ। এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের গ্রাম থেকে শত শত মানুষ নদীর পাড়ে ভীড় করে। এসময় থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে আসে। একদিকে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করতে থাকে, অন্যদিকে গগনবিদারী আহাজারী করতে থাকে মোস্তফার পরিবারের লোকজন।


মোস্তফার বড় ভাই রাকিব হোসেন কাঁদতে কাঁদতে জানান, রাতে মোস্তফা নিখোঁজ হওয়ার পরদিন সকালে আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়ে দেখি দোকান মালিক জাহাঙ্গীর আগে থেকেই থানায় বসে আছেন। পরে শুনলাম জাহাঙ্গীর আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধেই উল্টো ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাবে বলে থানায় অভিযোগ করেছে। পরে আমিও মোস্তফার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করি। কিন্ত নিখোঁজের ১১ দিন ধরেও পুলিশ আমার ভাইয়ের কোন হদিস করতে পারেনি বলেও জানান রাকিব হোসেন। রাকিব ও মা সাহেদা খাতুন দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবকে হত্যাকারি বলে বিলাপ করছিলেন।

হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পের আইসি কামরুল ইসলামের সাথে অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের দহরমমহরম আছে বলেও তারা অভিযোগ করতে থাকেন।


এদিকে, লাশের সন্ধান পাওয়ার পরপরই পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রাত অবধি হাটবোয়ালিয়া এলাকায় অবস্থান নেন। কর্মকর্তারা মোস্তফা হত্যার বিভিন্ন মোটিভ খুঁজতে থাকেন। তারা প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত দোকান মালিক জাহাঙ্গীর ও তার ভাই সজিবকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকার কয়েকটি সূত্র।


রাতেই মোস্তফার মা বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর ও সজীবকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে বলে জানা গেছে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গার হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাতেই মোস্তফার মা বাদী হয়ে জাহাঙ্গীর ও সজীবকে আসামী করে লিখিত দিয়েছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram