বড্ড অসময়ে চলে গেলেন সৎ ও প্রতিবাদের উচ্চকিত কণ্ঠস্বর অধ্যাপক আলম স্যার
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলম হোসেন (৫৭) আর নেই ( ইন্না লিল্লাহি ---রাজিউন)। হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার দীর্ঘ মাস পর তিনি গত সোমবার ভোরে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রায় তিন বছর পূর্বে তিনি স্ট্রোকজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২৬ জুন বাদ জোহর দারুস সালাম ঈদগা ময়দানে জানাযার নামাজ শেষে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যু সংবাদে সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও পরিচিত মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিনি মিরপুর উপজেলার মাজিহাট গ্রামের মরহুম আজিজুল বিশ্বাসের ছেলে। চাকরিসূত্রে দীর্ঘ বছর তিনি আলমডাঙ্গা শহরের মাদ্রাসাপাড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলেন। মরহুমের আত্মার কল্যাণ কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র সন্তান অয়ন সকলের নিকট দু'আ চেয়েছেন।
বড্ড অসময়েই চলে গেলেন আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলম হোসেন।
তাঁর কর্মস্থলসহ আলমডাঙ্গা শহরে একজন সৎ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যের পক্ষে ক্ষমাহীন পক্ষপাত ছিল স্যারের। কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে তিনি দু'বার ভাবতেন না। আলমডাঙ্গার হাইরোডের অনেক মানববন্ধন কর্মসূচীতে তাঁকে স্বেচ্ছায় অংশ নিতে দেখেছি। পেশাগত আন্দোলনেও তিনি থাকতেন সামনের কাতারে।
এনিমেল ফার্মের লেখক জর্জ অরওয়েল বলেছেন, "শঠতার যুগে সত্যি বলাই একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ।" সত্যিই বর্তমানে ব্যক্তি জীবনে সততার চর্চা নেই বললে অত্যূক্তি হয় না। তার সাথে যুগপৎভাবে প্রতিবাদী সত্তা আরও বিরল। এমনই বিরলপ্রজ মানুষ ছিলেন তিনি।
একজন শিক্ষক হিসেবে সততা ও সাহসিকতার চর্চা অত্যাবশ্যক। অথচ, আমাদের সমাজে কয়জন শিক্ষকের মাঝে এ গুণাবলি খুঁজে পাওয়া যাবে? বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য সাহসী হওয়া।
আমেরিকান সাহিত্যিক এরিকা জং বলেছেন,
প্রত্যেকেরই প্রতিভা আছে। কিন্তু খুব কম আছে যারা অন্ধকারের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার সাহস রাখে ।
নানাবিধ অন্যায় আর অনিয়মের অরাজক অন্ধকারে নিমজ্জিত এ সমাজে একজন আলম স্যারের অভাব আমাদের দারুণভাবে পীড়িত করবে।
একটা শিক্ষাল্রতিষ্ঠানে এ ধরণের শিক্ষকের যে কত প্রয়োজন তা কবি ও চিত্রশিল্পী এডওয়ার্ড এস্টলিন কামিংস'র উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় -- "বড় হওয়ার এবং সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে সাহস লাগে।"
শ্রদ্ধেয় আলম হোসেন স্যারের বিদেহী আত্মার কল্যাণ কামনা করছি।