বন্ডবিল-বাড়াদী সড়কে ডাকাতির এক সপ্তা পার হতে না হতেই একই রাতে দুই স্থানে ডাকাতি: এলাকাবাসী আতঙ্কিত
বন্ডবিল-বাড়াদি সড়কে ডাকাতির ৭ দিন পর আলমডাঙ্গায় আবারও একই রাতে দু'টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৮জুন) রাত ৯ টার দিকে প্রথমে মুন্সিগঞ্জ-নাগদাহ সড়কের পুটিমারী মাঠে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ডাকাতদল রাত পৌণে ৪টার দিকে বন্ডবিল গেট সংলগ্ন পৌর সীমানার সন্নিকটে হানা দেয়। এখানেও ডাকাতদল সড়কে গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরী করে। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্স, একটি ট্রাক ও দুটি আলমসাধু ডাকাতির কবলে পড়ে। এসময় ডাকাত দল প্রায় ১০/ ১২ লাখ টাকা অস্ত্রের মুখে লুট করে নিয়ে যায় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
বন্ডবিলে ভয়াবহ ডাকাতির ৭দিন পার হলেও আজোবধি আসামী চিহ্নিত কিংবা আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। এরই মধ্যে পূনরায় একই রাতে ডাকাতির ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, বুধবার দিনগত রাতে ছোট পুটিমারী সড়কের জাকের মÐলের পরিত্যক্ত বাড়ির সন্নিকটে সড়কে গাছ ফেলে বেরিকেড দেয় হাফপ্যান্ট বাহিনীর ৭/৮ জন ডাকাত। একটি গরুবাহী লাটাহাম্বারের গতিরোধ করে তারা। পরে লাটাহাম্বার রাস্তার ওপর রেখে পথ আটকে দেয় ডাকাতদল।
প্রায় আধা ঘন্টা ধরে ইজিবাইক, পাখিভ্যান, মোটরসাইকেলসহ ২০-২৫ জন যাত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, সোনার গয়না ও মূল্যবান মালামাল লুট করে পালিয়ে যায় হাফপ্যান্ট বাহিনী। জেহালা ইউপির ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য হাসেম মাহমুদও ওই ডাকাতির কবলে পড়েন। তার নিকট থেকে ১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় ভুক্তভোগীরা চিৎকার করলে এলাকাবাসী ছুটে গেলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গার থানা পুলিশ, মুন্সিগঞ্জ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
একই রাতে ভোর পৌণে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পূর্বাশা পরিবহন ও নদীয়া ডিলাক্স চুয়াডাঙ্গা থেকে আলমডাঙ্গা বাস টার্মিনালের দিকে যাচ্ছিল। সড়কে আলমসাধু ও গাছ ফেলে প্রথমে নদীয়া ডিলাক্সের গতিরোধ করে ডাকাতদল। বাসে থাকা যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪০ হাজার টাকা লুট করে নেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠিক এসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পূর্বাশা পরিবহণও ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতরা হামলে পড়ে পুর্বাশা পরিবহনে। ভয়ে পুর্বাশার চালক বাসের দরজা খুলে দেন। ডাকাতদল অস্ত্র হাতে বাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা লুট করে নেয়। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা চার গরু ব্যবসায়ীর একজনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকার একটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় হাফপ্যান্ট পরিহিত ডাকাতদল।
নদীয়া ডিলাক্সের সুপারভাইজার সৈয়দ আলী বলেন, বাসে বেশী যাত্রী ছিল না। বাস থেকে ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে ডাকাতরা।
পূর্বাশা পরিবহনের সুপারভাইজার মিরাজ বলেন, তার গাড়ির চালক এর আগেও একবার ডাকাতির কবলে পড়েছিলেন। ডাকাতরা তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এজন্য ভয়ে চালক বাসের দরজা খুলে দিয়েছেন। মিরাজও ১০/১২ লক্ষ টাকা লুট হওয়ার কথা স্বীকার করেন।
ঘটনার পরপরই পুলিশ নিয়ে এএসআই জালাল উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা সড়কের পাশের মাঠের দিকে পালিয়ে যায়।
এদিকে, বন্ডবিল- বাড়াদী সড়কে ভয়াবহ ডাকাতির আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই মাত্র এক সপ্তার মাথায় একই রাতে দুটি ডাকাতির ঘটনা আলমডাঙ্গাবাসীকে রীতিমত আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিশেষ করে ভোর রাতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনা ঘটে বন্ডবিলেই। পৌর সীমানা পিলারের নিকট। এ হাফপ্যান্ট বাহিনি পুলিশ প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করেই একের পর এক দু:সাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে নির্বিঘ্নে। অথচ, আজোবধি এ চক্রের কাউকে চিহ্নিত কিংবা আটক করতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। ফলে জনমনে একদিকে যেমন আতঙ্ক বেড়েছে, অন্যদিকে পুলিশের প্রতি বাড়ছে অসন্তষ্টি।
তাছাড়া, মাত্র এক সপ্তাহ আগে ৩১ মে রাতে আলমডাঙ্গার বন্ডবিল - বাড়াদী সড়কে গাছ ফেলে হাফপ্যান্ট বাহিনি তান্ডব চালায়। রাতের সুন্দরবন এক্সপ্রেস টেনের যাত্রিসহ আলমডাঙ্গা শহরে যাতায়াতকারীদের যানবাহন আটকিয়ে মারধর, অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয় এ হাফপ্যান্ট বাহিনির ডাকাতরা।
গুঞ্জন উঠেছে -- পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক বাবা ঢাকায় থাকা দুই বিবাহিত মেয়েকে নিয়ে ভ্যানযোগে স্টেশনে যাওয়ার পথে ডাকাতদলের কবলে পড়েন। বাবাকে ডাকাত দল আটকে রেখে দুই মেয়েকে মাঠের ভেতর নিয়ে যায়। তাদের ভাগ্যে কি জুটেছে তা জানা যায় না।