এসএম সুলতানের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে “এসএম সুলতানঃ বৈশ্বিক সুলতান” শীর্ষক আলোচনাসভা
আলমডাঙ্গায় বিশ্বনন্দিত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৬ তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে “এসএম সুলতানঃ বৈশ্বিক সুলতান”শীর্ষক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১০ আগস্ট সন্ধ্যায় জাস্টিজ রাধা বিনোদ পাল মেমোরিয়াল বাংলাদেশ’র সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল খন্দকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক রহমান মুকুল, প্রভাষক কবি আসিফ রহিম জোয়ার্দ্দার, রোটার্যাক্ট ক্লাব বাংলাদেশের জেলা সমন্বয়কারি ডাক্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক মাসুদ রানা তুহিন, অনলাইন পত্রিকা সাম্প্রতিকী ডট কমের বার্তা সম্পাদক আতিকুর রহমান ফরায়েজী ও সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম রোকন।
এ সময় বক্তারা উল্লেখ করেন, এসএম সুলতান আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী চিত্রশিল্পী। ইউরোপীয় অনেক শিল্পবোদ্ধা তাকে ভ্যান গগ, মাতিস কিংবা ভিঞ্চির চেয়েও বড় শিল্পীর মর্যাদা দেন। প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন হতদরিদ্র এ অসাধারণ ব্যক্তি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন এক ভিন্নমাত্রিক উচ্চতায়। কোন প্রতিষ্ঠিত শিল্পধারা অনুসরণ না করেই তিনি নিজেকে নির্মাণ করেছিলেন এমন ঈর্ষনীয় উচ্চতায় যে পৃথিবীর তাবৎ শিল্পবোদ্ধারা মাথা উঁচু করে অবাক বিস্ময়ে তাকে অবলোকন করেন।
তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন এমন এক স্বাতন্ত্র্য শিল্পধারা। তিনি জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তাঁর শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণি সংঘাত এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হালও অনেকটা ফুটে উঠেছে। তাঁর ছবিগুলোতে উঠে এসেছে গ্রাম এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিলো জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিলো 'আধুনিকতা', অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ রমণীদের দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে।
নারীর মধ্যে উপস্থিত চিরাচরিত রূপ-লাবণ্যের সাথে তিনি শক্তির সম্মিলন ঘটিয়েছিলেন। একই সাথে তাঁর এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণী-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির কিছু ক্রুর বাস্তবতা উঠে এসেছে। তাঁর এরকম দুটি বিখ্যাত ছবি হচ্ছে: হত্যাযজ্ঞ (১৯৮৭) এবং চরদখল(১৯৮৮)।
তিনি ছিলেন একজন সুর সাধক এবং বাঁশিও বাজাতেন। অত্যন্ত ছন্নছাড়া ও বোহেমিয়ান স্বভাবের এস এম সুলতানের অধিকাংশ সৃষ্টিকর্ম হারিয়ে ও নষ্ট হয়ে গেছে। সুলতানের বাল্যবয়সের চরিত্র-গঠন সম্পর্কে আহমদ ছফা লিখেছেন: “কোনো কোনো মানুষ জন্মায়, জন্মের সীমানা যাদের ধরে রাখতে পারে না। অথচ যাদের সবাইকে ক্ষণজন্মাও বলা যাবে না। এরকম অদ্ভুত প্রকৃতির শিশু অনেক জন্মগ্রহণ করে জগতে, জন্মের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য যাদের রয়েছে এক স্বভাবিক আকুতি।
শেখ মুহাম্মদ সুলতান সে সৌভাগ্যের বরে ভাগ্যবান, আবার সে দুর্ভাগ্যের বরে অভিশপ্তও।“
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আতিক বিশ্বাসের উপস্থাপনায় অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন –উই ফর অল’র কো-অর্ডিনেটর আব্দুর রাজ্জাক রাজু, সাংবাদিক সুজন ইভান, মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, রাকিব উদ্দীন রনি, প্রকৌশলি কানিজ তাসমিমা সরণি, তাজুল আহমেদ প্রমুখ।