কালীগঞ্জে দুই মেধাবী সন্তানকে লেখাপড়া করাতে বিপাকে রিক্সাচালক পিতা
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ বড় ভাই জাহিদ হাসান আর ছোট ভাই জিহাদ হাসান। তাদের বাবা একজন রিকশা চালক। ঠিকমতো পড়াশোনার খরচ দিতে পারেন না বাবা। তাই নিজেরাই প্রাইভেট টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালায়। তারা দুই ভাই যেন অভাবের সংসারে দুই প্রদীপ।
তবে সেই প্রদীপে তেলের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র বাবা। দরিদ্র বাবা পেশায় একজন রিকসা চালক। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ঊঠে চোলে যান যশোর শহরে রিকসা চালাতে। জাহিদ ও জিহাদ ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামের হতদরিদ্র্র রিকশা চালক শাজাহানের ছেলে। টিনের ছাউনির নিচে বাঁশ দিয়ে ঘেরা একটি ঘরে মা-বাবা ও তিন ভাই-বোনের বসবাস তাদের। বসতবাড়ির মাত্র ৫ শতক জমি ছাড়া মাঠে কোনো চাষের জমিও নেই তাদের।
জাহিদ এবং জিহাদের মা জাহানারা খাতুন জানান, দুই ছেলে আর এক মেয়ে তার। স্বামী শাজাহান আলী রিকশা চালিয়ে যা রোজগার করেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালান। সংসারে অভাব সব সময় লেগেই থাকে। এরমধ্যে চলে ছেলেদের লেখাপড়া। কিভাবে তাদের নিয়ে আছি তা আল্লাহ ভাল করে জানেন। তাই হাজার কষ্ট হলে ও ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করানোর চেষ্টা করছি। হাড় ভাংগা পরিশ্রম করছে জাহিদ ও জিহাদের বাবা। তা একমাত্র উপার্যন রিকসা চালানো।
তিনি আরও জানান, বড় ছেলে জাহিদ হাসান ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। বর্তমানে সে যশোরের কাজী নজরুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজে মানবিক বিভাগের এইচএসসির ছাত্র। আর এ বছর ছোট ছেলে জিহাদ হাসান এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতদিন এক ছেলের লেখাপড়ার খরচ দিতে হত এখন দুই ছেলের কলেজে লেখাপড়ার খরচ কিভাবে জোগাড় করবেন সে চিন্তায় আছেন তারা।
জিহাদ হাসান জানায়, তার বাবা যশোর শহরে রিকশা চালায়। সেখান থেকে যা আয় হয় সেটা দিয়েই দুই ভাইয়ের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ চালান। এছাড়া সে নিজে প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ চালিয়েছে। তার ইচ্ছা আছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কিন্তু টাকার জন্য সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা জানে না সে। প্রতিবেশী রুহুল আমিন খোকন জানান, জাহিদ ও জিহাদ অত্যান্ত মেধাবী।
শত অভাবের মধ্যেও বিনয়ী ও ভদ্র দুই ভাই ভালো ফলাফল করে গ্রামের সবাইকে চমকে দিয়েছে। রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, জাহিদ ও জিহাদ তার স্কুলেরই শিক্ষার্থী ছিল। অভাবি পরিবারের সন্তান তারা। তবে লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী। যে কষ্ট করে তাদের বাবা লেখাপড়ার খরচ চালান সেজন্য তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। জাহিদ ও জিহাদ যেন লেখাপড়া করে ভালো চাকরি করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে সেই দোয়া করি।