পাকিস্তানে আবারও ক্রিকেটে আঘাত হানল সন্ত্রাসীদের গুলি
এক গোলাগুলির জের পাকিস্তানের ক্রিকেট টেনেছে প্রায় ১০ বছর। এখন আস্তে আস্তে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে পাকিস্তানের মাটিতে, তবু দলগুলো এখনো পাকিস্তানে যাওয়ার আগে দশবার ভাবে। পাকিস্তানে যেতে দলগুলোকে রাজি করাতে ঘাম ছুটে যায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি)।
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসীদের গুলির ধাক্কা এখনো বয়ে চলা পাকিস্তানে আবারও ক্রিকেটে আঘাত হানল সন্ত্রাসীদের গুলি। এবার অবশ্য অনেকটা অখ্যাত এক ম্যাচে। পাকিস্তানের পত্রিকা দ্য নিউজের প্রতিবেদন, গতকাল বৃহস্পতিবার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কোহাট বিভাগের ওরাকজাই জেলার দ্রাদার মামাজাই অঞ্চলে আমন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি করেছে।
এমন সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে তো আর ক্রিকেট চলতে পারে না! ম্যাচটা পণ্ড হয়ে গেছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে সৌভাগ্য সবার, হতাহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে দ্য নিউজ লিখেছে, ছানায় গ্রাউন্ড নামের মাঠে অনুষ্ঠেয় ফাইনালে অনেক দর্শকই ছিলেন। এর মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা ছিলেন, সংবাদকর্মীরা তো ছিলেনই। কিন্তু ম্যাচ শুরু হতেই দুঃস্বপ্নের শুরু। মাঠের কাছেই থাকা পাহাড় থেকে সন্ত্রাসীরা মাঠের দিকে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে।
গুলি শুরু হতেই খেলোয়াড়, আম্পায়ার, সংবাদকর্মী, দর্শক—যে যেদিকে পেরেছেন, জীবন বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করেন। সৌভাগ্যবশত, পালিয়ে বাঁচতে পেরেছেন সবাই। কারও গায়ে গুলি লাগার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে এক দর্শককে উদ্ধৃত করে লেখা, গোলাগুলি এত বেশি হচ্ছিল যে আয়োজকেরা সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচ বাতিল করে দেন।
ওরাকজাই জেলার পুলিশ কর্মকর্তা নিসার আহমাদ জানিয়েছেন, ওই পাহাড়ি অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের আনাগোনার কিছু খবর তাঁদের কানে এসেছিল আগে। পুলিশ এখন সন্ত্রাসী ও অন্যান্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে।
যেকোনো জায়গায়ই এমন ঘটনা শঙ্কা বাড়িয়ে তুলবে, তবে পাকিস্তান ক্রিকেটে ঘটেছে বলেই ঘটনাটা বেশি আলোচনার খোরাক জোগাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট তো কম ভোগেনি! ২০০৯ সালে জয়াবর্ধনে-সাঙ্গাকারাদের বহনকারী শ্রীলঙ্কার বাসে সন্ত্রাসী হামলার জের এখনো বয়ে নিয়ে চলেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট। প্রায় দশ বছর নিজভূমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ বলতে গেলে পানইনি পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তান সে সময়টাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ‘ঘর’ বানিয়ে সেখানেই খেলেছে সব ‘হোম’ সিরিজ। ২০১১ বিশ্বকাপ বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের স্বত্বও এ কারণে হারায় পাকিস্তান।
গত দু বছরে যদিও পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেশ কিছু দেশ পাকিস্তান সফর করেছে। পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) এবারের আসর করোনায় স্থগিত হয়ে যাওয়ার আগে তো সব ম্যাচই হয়েছে পাকিস্তানে। পঞ্চম আসরে এসে প্রথমবারের মতো পিএসএলের সব ম্যাচ হলো পাকিস্তানে। তবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো বড় দেশগুলো এখনো পাকিস্তানে আসার ব্যাপারে তেমন রাজি নয়।