চুয়াডাঙ্গায় বেগুনি রঙের ধান চাষ শুরু
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ শখের বশে চুয়াডাঙ্গায় এক কৃষক বেগুনি রঙের ধান চাষ শুরু করেছেন। বেগুনি রঙের ধান গাছ মাঠের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। এ মৌসুমে এক বিঘা জমিতে বেগুনি রঙের ধান চাষ হচ্ছে। অন্য কৃষকরা এ ধান চাষে আগ্রাহ দেখাচ্ছেন। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। আমাদের দেশীয় প্রজাতির ধানের চাইতে ফলন কম হওয়ায় কৃষকরা রঙিন ধান চাষে আগ্রাহ কম দেখায়। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার দোস্ত, বেগমপুর, হিজলগাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা বেগুনি রঙের ধান চাষে বেশ আগ্রহি। বেগুনি রঙের ধান দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, আগামি বছর জেলায় ব্যাপক ভাবে এ ধান চাষ করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা ধানের বিজের মধ্যে থেকেই পাওয়া যায় বেগুনি রঙের ধান বিজ। এ ধানের জাতটি গবেষণার জন্য ধান গবেষণা ইনিষ্টিউটিটে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামের কৃষক ছাদেক আলি প্রধান শখের বশে বেগুনি রঙের ধান চাষ শুরু করেছেন। তিনি ঝিনাইদহ জেলায় এক আত্নীয় বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে দেখেন গ্রামের মাঠে বেগুনি রঙের ধান চাষ হচ্ছে। ধানের রঙ দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তারপর সেখান থেকে ২৭টি বেগুনি রঙের ধান বিজ নিয়ে আসেন চুয়াডাঙ্গায়। দুই বছরে ২৭টি বিজ থেকে প্রায় ৭ কেজি বেগুনি রঙের ধান বিজ তৈরি করেন। এ মৌসুমে গ্রামের মাঠে এক বিঘা জমিতে ধান রোপন করেন। ধান গাছ গুরো বড় হওয়ার সাথে সাথে বেগুনি রঙ বেশি গাঢ় হতে থাকে। ধানের রঙও বেগুনি হয়। স্বাভাবিক চালের রঙ থেকে আলাদা হয়। বেগুনি রঙের চাল অফ হোয়াইট রঙের হয়। এ জাতের ধানের ফলন বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। ধান রোপন করার পর যখন গাছ গুলো বড় হতে থাকে গ্রামের অন্য কৃষকরা বিজ নেওয়ার জন্য আগ্রিম বলে রাখেন। বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা দল বেধে দেখতে আসেন এ ধান। রঙিন ধান চাষে অন্য কৃষকরা আগ্রাহ দেখাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বিদেশ থেকে ধান বিজ রপ্তানি করা হয়। ২০১০ সালের দিকে জীবননগর সরকারী দত্তনগর খামারে বিজ উৎপাদনের জন্য ধান চাষ করা হয়। সেখানে প্রথম বেগুনি ধান গাছ দেখা যায় বেশ কয়েকটি। সে গাছ গুলো ধান পাকার পর সংরক্ষণ করা হয়। সেখান থেকে কৃষকরা কোন ভাবে সংগ্রহ করে শখের বশে জমিতে চাষ করেন অল্প পরিসরে। দীর্ঘ সময়ের জন্য কৃষকরা চাষ করেন না। ফলন অন্য ধানের চেয়ে কম। সোন্দর্য বেশি থাকায় আগ্রহ জাগে কৃষকদের মাঝে। বেগুনি ধান বিজটি গবেষণার জন্য ধান গবেষণা ইনিষ্টিউটিটে পাঠানো হয়েছে। এ জাতের কোন নাম করণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। স্থানীয় ভাবে কৃষকরা তাদের পছন্দ মত নাম রাখেন। এ ধানের চাল মোটা হয়। স্বাদের দিক দিয়ে ভালই আছে।
বেগুনি ধান চাষের কৃষক ছাদেক আলি প্রধান বলেন, সামন্য কিছু বিজ সংগ্রহ করে দুই বছর ধরে বিজ তৈরি করছি। এ মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ধানের গাছ খুব ভাল হয়েছে। ফলন ভাল হয়। শখের বশে এ ধান চাষ করা। অন্য কৃষকরা বিজ নেওয়ার জন্য আমাকে আগে থেকে বলে রেখেছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ারিয়া গ্রামের কৃষক সোহেল হুদা বলেন, চুয়াডাঙ্গার দোস্ত গ্রামে বেগুনি রঙের ধান চাষ হচ্ছে শুনার পর আমি দেখতে আসি। ধান গাছের রঙ দেখে খুব ভাল লেগেছে। বিজ পেলে আমি গ্রামে চাষ করবো। ফলন যাই হোক না কেন সেটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সুফি মো: রফিকুজ্জামান বলেন, বীজ বাছাইকৃত একটি জাত। ধান গাছের রঙ দেখতে খুব সুন্দর ও আকর্ষনীয়। আগামিতে বেশি বেশি বীজ উৎপাদন করতে পারে সে ব্যাবস্থা নেব আমরা। জেলায় বাণিজ্যিাক ভাবে চাষ করা যায় সেটাই মূল উদ্দেশ্য আমাদের। এ ধানের চাহিদা একদিন বাড়বে।