২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দর্শনার চেকপোস্টে করোনার থাবা

প্রতিনিধি :
সুজন ইভান
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০
33
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টে করোনার থাবায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে । শুনশান নীরবতা নেমে এসেছে এখানে। চেকপোস্ট চলাকালীন সময়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জয়নগর সীমান্তে হাজার হাজার মানুষের পদভারে মুখরিত থাকলেও বর্তমানে চলমান করোনা সংকটে তা জনমানবহীনে রূপ নিয়েছে।

চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে এখানে বেশকিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন ইজিবাইক ও ভ্যানচালকসহ কয়েক শত মানুষ।

গত সাড়ে পাঁচ মাস ধরে এ রুটে একজন ব্যক্তিও বাংলাদেশ-ভারত যাতায়াত করেনি। এ কারণে সাড়ে পাঁচ মাসে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে দশ কোটি টাকার উপরে। 

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত ২০১৯ সালে সকল রেকর্ড অতিক্রম করে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩২ বছরের মধ্যে এক বছরে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮০২ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে এ রুটে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধের সাড়ে তিন মাসে ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন।

বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দুরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অতীতের বছরগুলোতে যেখানে সারা বছরে ২০-২৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো, সেখানে গত বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১৫ জন যাত্রী।

একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৭ জন যাত্রী। অর্থাৎ গত বছর সর্বমোট ৬ লাখ ১৪ হাজার ৮০২ জনের রেকর্ড পরিমান যাত্রী যাতায়াত করেছে।

তবে করোনার প্রভাবে চলতি বছরের ১৩ মার্চ থেকে এই চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশ সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে দেয় দেশটির সরকার। তবে যেসব বাংলাদেশি ভারতে ছিল তাদের আসার সুযোগ ছিল।

কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী বাদে সবারই আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। যা আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

চলতি বছরের ১৩ মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১৯ হাজার ৩৩৬ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে (করোনার কারণে ১৩ মার্চ থেকে চেকপোস্ট বন্ধ আছে)। যা ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একই সময়ে ২ লাখ ৭৬ হাজার ১৮৬ জন যাত্রী কম যতায়াত করেছে।

ফলে সরকার ১০ কোটি টাকার উপরে রাজস্ব হারিয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন চেকপোস্টের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক শত মানুষ। ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বিজিবি সদস্যরা এক প্রকার গল্প গুজব করেই সময় পার করছেন।

চেকপোস্ট এলাকার দোকানি বাবলু জানান, চেকপোস্টকে কেন্দ্র করে এখানে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক দোকান রয়েছে। যাত্রীদের আনা-নেয়ার জন্য পায়ে চালিত ১৫০টি ভ্যানগাড়ি, ৪০-৫০ টি অটোবাইক চলাচল করে।

কিন্তু করোনার কারণে গত সাড়ে পাঁচ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় আমরা একদম বেকার হয়ে পড়েছি।

চেকপোস্ট এলাকার ভ্যানচালক মো. আব্দুল করিম জানান, বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানসহ আমার ৫ সদস্যের পরিবার। চেকপোস্ট থেকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী আনা-নেওয়া করে যে টাকা রোজগার হতো তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলতো।

কিন্তু করোনার কারণে সাড়ে ৫ মাস ধরে চেকপোস্ট বন্ধ থাকায় একেবারে বেকার হয়ে পড়েছি। ধার-কর্য করে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছি। 

দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল আলিম জানান, কোনও যাত্রী নেই। আমরা ইমিগ্রেশনের ১৬ জন পুলিশ সদস্য, কাস্টমস, বিজিবি ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা প্রতিদিন ডিউটি করছি।

করোনার কারণে বর্তমানে যাত্রীশূন্য হয়ে পড়ায় রাজস্ব আয় বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে অনেকে কাজ করতো, তারাও বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram