২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের কাজ শুরু হলেও পরিবর্তন হয়নি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
আগস্ট ৬, ২০২০
30
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


আলমডাঙ্গা পৌরসভার পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে জেলা প্রশাসক আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর মেয়রকে লিখিত নির্দেশ প্রদান করেছেন। আলমডাঙ্গা পৌরসভার পানিবন্দী বিভিন্ন এলাকার মানুষের দুর্ভোগের সংবাদ গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক ওই নির্দেশনা দেন। এক্সচেঞ্জপাড়া ও ওয়াবদা চত্বর এলাকার পানি কিছুটা কমলেও আলমডাঙ্গা পৌরসভার পানিবন্দী এলাকার দুর্ভোগের চিত্রের তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে পৌরসভার ওয়াবদা চত্বর, কোর্টপাড়া, উপজেলা চত্বর, এক্সচেঞ্জপাড়া ও হাউসপুর ও গোবিন্দপুর মাঠপাড়ায় এমন দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আলমডাঙ্গা পৌরসভা এলাকায় দীর্ঘদিনেও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় এ জনদুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।


জানা যায়, দেশের অনেক অঞ্চলেই বন্যা সমস্যা দেখা দিলেও আলমডাঙ্গাসহ বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও ঝিনাদহ জেলার মানুষের নিকট বন্যা সমস্যা অজানা। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে আলমডাঙ্গা পৌরসভা এলাকার ওয়াবদা চত্বর, স্টেশনপ[ড়া, গোবিন্দপুর মাঠপাড়া, কোর্টপাড়া, উপজেলা চত্বর, হাউসপুর ও এক্সচেঞ্জপাড়ায় বহু বাড়িতে পানি ঢুকেছে। অনেকের বসতঘরের ভেতর হাঁটুপানি। বেশ কয়েকদিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবারগুলি।


গত পরশু সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আলমডাঙ্গা ওয়াবদা চত্ত্বরে বসবাসকারি দিনমজুর স্বপন আলী ও আলম হোসেন। তাদের ঘরের মেঝেতে হাঁটুপানি। তারা জানান, গত কয়েক দিন নিজ বাড়িতে রান্না করা করা সম্ভব হয় নি। পরিচিতদের বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আনা হচ্ছে। ঘরের চৌকি উঁচু করে নিয়ে রাতে চৌকির উপর অবস্থান করলেও ঘুমাতে পারছেন না সাপের ভয়ে।


একই এলাকার বিধবা নূর জাহান জানান, বাড়িঘরে পানি থৈ থৈ করছে। খড়িও ভেজা ছিল তাই গত কয়েক দিন বাড়িতে রান্না করা সম্ভব হয়নি। পরের বাড়ি চেয়েচিন্তে চলেছে। আজই প্রথম ঘরের দাওয়ায় ইট সাজিয়ে উঁচু করে চুলা তৈরি করেছেন।


একই অবস্থা দিনমজুর আশাদুল হক, মহাবুল হক, আল্লাদী খাতুন, আরজিনা খাতুন ও নূরী খাতুনের। বেশ কয়েকদিন ধরেই তারা পানিবন্দী। ঘরের ভেতরে হাঁটুজল। সন্তান-সন্ততি নিয়ে তাদের কষ্টের সীমা নেই বলে জানান। আলমডাঙ্গা পৌরসভা এলাকায় পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না উঠায় এ জনদুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। তবে, গতকাল থেকে পানি নিষ্কাশনের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলি অপসারণের কাজ শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।


এদিকে, গতকাল সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওয়াবদা চত্বর ও এক্সচেঞ্জপাড়ার পানি কিছুটা কমলেও এখনও বেশিরভাগ এলাকায় অবস্থার দৃশ্যমান কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

ওয়াবদা কলোনির দিনমজুর শমসের আলী জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পানি কিছুটা কমেছিল। কিন্তু দুপুরের পর বৃষ্টি শুরু হলে আবারও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।


এক্সচেঞ্জপাড়ায় বসবাস করেন মেহেদী হাসান বাবুল। তিনি জানান, আমার নিজের বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকেছে। এলাকার অনেক পরিবারের মত আমার পরিবারও পানিবন্দী হয়ে মানবেতর দিন যাপন করছি। গতকাল কিছুটা পানি কমলেও অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি।


মাঠপাড়ার দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের নতুন পাড়ায় সকলেই পানিবন্দী। এখানকার পানি নিষ্কাশনের সহজ উপায় নেই। পৌরসভার পক্ষ থেকেও কোন উদ্যোগ নিতে দেখেননি।


উপজেলা পরিষদের পেছনের কোর্টপাড়া এলাকার বাসিন্দা ডাক্তার আতিক বিশ্বাস জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বর ও কোর্টপাড়া পানিতে একাকার। পানিতে রোড তলিয়ে আছে গত কয়েক দিন। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। গতকাল অবধি এই এলাকার পানিবন্দী অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। ঘর থেকে তিনি জরুরী প্রয়োজনেও মোটরসাইকেল বের করতে পারছেন না। বাড়ির সামনের কালভার্ট্টির দুপাশের মাটি ধ্বসে গেছে।


আলমডাঙ্গা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কোর্টপাড়া, উপজেলা চত্বর ও ওয়াবদা চত্বর পানিবন্দী। সংশ্লিষ্ট ১ নং ওয়ার্ডের কান্সিলর আলাল আহমেদ জানান, পৌরসভার ইতোমধ্যেই পানি নিষ্কাশনের পথের বাঁধা অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজটি খুব শক্ত। পানি নিষ্কাশন হত সে সকল খাল দিয়ে তা এখন দখল হয়ে গেছে। সেগুলি পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করতে হবে।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিইটন আলী জানান, পানিই নিষ্কাশনের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের সাথে কথা বলেছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের পথে বাঁধাগুলি অপসারণের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজেও এ বিষয়ে অনেকের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আজ শুক্রবার পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি সরেজমিন ঘুরে দেখবেন বলে উল্লেখ করেছেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram