আলমডাঙ্গার এসএসসি পরীক্ষার্থী জুয়েল রানা তমালের কুষ্টিয়া শহরের কাটাঁইখানা এলাকায় রহস্যজনক মৃত্যু
![](https://samprotikee.com/wp-content/uploads/2022/06/tomal-1.jpg)
আলমডাঙ্গার এসএসসি পরীক্ষার্থী জুয়েল রানা তমালের কুষ্টিয়া শহরের কাটাঁইখানা এলাকায় রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ১৩ জুন সকাল সোয়া ৯টার দিকে কাঁটাইখানা এলাকার সমবায় মার্কেটের সামনে থেকে ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। পরিবারের দাবি তাকে কৌশলে ডেকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তমালের দু বন্ধু সাজ্জাদ ও লিখনকে থানায় নেওয়া হয়েছে। সহজ সরল কিশোর তমালের রহস্যজনক মৃত্যুতে পরিবারসহ আলমডাঙ্গায় শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
তমাল আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক প্রচার সম্পাদক ও শহরের থানাপাড়ার বাসিন্দা মাসুদ রানা তুহিনের একমাত্র সন্তান। তমাল আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবছর অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
পরিবারসূত্রে জানা যায়, তমাল গতকাল সকাল ৮ টার দিকে বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যায়। নাস্তাও করেনি। কাউকে কিছু না বলে তড়িঘড়ি করে বাড়ি থেকে বের হয়। অনেকের ধারণা পরিচিত কারও সাথে দেখা করার জন্য তমাল দ্রæত বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু পরে আর ফিরে আসেনি। ঠিক সোয়া এক ঘন্টা পর কুষ্টিয়া শহরের কাঁটাইখানা এলাকায় তমালকে মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে চিকিতসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। দুপুরে কুষ্টিয়া থানা পুলিশ মোবাইলফোনে রিং করে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা তমালের পরিবারকে জানায়।
হাসপাতাল ও কুষ্টিয়া থানা পুলিশসূত্র জানিয়েছে, সকাল ৯টার দিকে তমালের লাশ কুষ্টিয়ার কাঁটাইখানার মোড় এলাকা থেকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিতসাধীন অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিতসক আশরাফুল আলম জানান, হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু ঘটেছে।
কাটাইখানা এলাকার কয়েক্কজন ব্যবসায়ী জানান, সকাল সোয়া ৯টার দিকে শব্দ হলে অনেকে শব্দের কারণ ও উৎস জানতে বাইরে বের হন। সে সময় সমবায় মার্কেটের সামনে রাস্তার উপর এক কিশোরের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। অজ্ঞান ওই কিশোরের চোখ বাঁধা ছিল মাস্ক দিয়ে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। বাম হাতের কনুই এর নিকট দুটি দাগ ছিল। তাদের ধারণা – সমবায় মার্কেটের ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ওই কিশোর আত্মহত্যা করেছে।
গতকাল রাতে লাশ গোসল করানোর সাথে সম্পৃক্ত কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, তমালের রাম হাতের কনুই এর নিকট দুটি দাগ ছাড়া সারা শরীরে আর কোন ক্ষত বা চিহ্ন ছিল না। শুধু নাক-মুখের ভেতর রক্ত দেখা গেছে।
তমালের বাবা মাসুদ রানা তুহিন জানান, সকাল ৮টার দিকে তমাল প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। দুপুরে পুলিশ তাকে ফোন করে জানায় যে তমাল মারা গেছে। লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ইতোপূর্বে সে কখনও একা কুষ্টিয়া শহরে যায়নি। আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আইনের আশ্রয় নেব। আমার ছেলে অত্যন্ত নিরীহ ও ভদ্র। তাকে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। আত্মহত্যার মত কোন কারণ ঘটেনি।
কুষ্টিয়া থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যে ভবন থেকে তমাল লাফ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে কোন ধরণের আলামত পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্ত রিপোর্ট আসলেই আসল রহস্য জানা যাবে।
এদিকে, এ রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় কুষ্টিয়া থানা পুলিশ ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।
কুষ্টিয়া গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন বলেন, কারা তমালকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজ করা হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরাও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তমালের দুজন বন্ধুকে থানা হেফাজতে নিয়েছি।
ময়না তদন্ত শেষে সন্ধ্যায় লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এসময় পাড়াজুড়ে শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একমাত্র ছেলের অকাল মৃত্যুতে বাবা-মাসহ নিকট আত্মীয়দের বুকফাঁটা আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠে।
জানাযা শেষে রাত ১০টার দিকে লাশ আলমডাঙ্গা দারুস সালাম প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়েছে। জানাযায় উল্লেখযোগ্য মানুষের সমাগম ঘটে। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুক, চুয়াডাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলা উদ্দিন হেলা, চুয়াডাঙ্গা জজ কোর্টের পিপি বিল্লাল গণি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহসভাপতি ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী আলহাজ লিয়াকত আলী লিপু মোল্লা, পৌর আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান পিন্টু, এ্যাড. মোখলেছুর রহমান, পৌর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম অপু মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল হক।আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, সাংবাদিকবৃন্দ তমালের মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।