২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য সমন্বিত আঞ্চলিক উদ্যোগ প্রয়োজন

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
আগস্ট ২৮, ২০২০
22
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

রহমান মুকুলঃ জোর দিয়ে বলা যেতেই পারে বাংলাদেশ ছোট আয়তনের দেশ। এখানে আঞ্চলিকতা সৃষ্টিকে অপপ্রয়াস হিসেবেই দেখা হয়। বরিশাল, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চাঁদপুর- বিএনসিসিকে কেউই সমীহ দৃষ্টিতে দেখেন না। আমার মনে হয় এটা সেই আদিম যুগে যেমন শিকারের সুবিধার জন্য মানুষ গোষ্ঠিগতভাবে বসবাস করতেন, অনেকটা সেই রকম। এটাকে বর্তমান যুগে অনেকটা পশ্চাদপদতার নামান্তর। সনাতন ও সংকীর্ণতাবাদ থেকে উদ্ভুত। ঠিক তেমনি রাজনীতিতে আঞ্চলিকতা সৃষ্টি করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ। রংপুর আঞ্চলিকতা। এরপর বগুড়া।

সবশেষে সর্বগ্রাসি রুপে এ আঞ্চলিকতা প্রত্যক্ষ করছি -ফরিদপুর গোপালগঞ্জ। ' তবে এত আঞ্চলিকাবাদের নাগপাশে বন্দি থেকেও বৃহত্তর কুষ্টিয়ার মানুষ সচেতনভাবে এ সংকীর্ণতার উর্দ্ধে থেকেছে সব সময়, এখনো। দেশের অন্যত্র আঞ্চলিকতার মৎস্যন্যায়ের মধ্যে এ সচেতন দুরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে নিজেদের বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। আঞ্চলিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়েছি।

এমনকি আঞ্চলিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুথবদ্ধতার সহজ পথ থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছি। অথচ, সমন্বিত আঞ্চলিক সহযোগিতা আমাদের নিজেদের সমস্যাগুলিকে কত সহজেই না সমাধান দিতে পারে।

কয়েকটি পরিষ্কার ধারণার উদাহরণ তুলে ধরা যাক -

১)আমাদের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও যশোরের জলবায়ু এখন চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আঞ্চলিকভাবে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা খুব জরুরী হয়ে পড়েছে। এটা আঞ্চলিক সমস্যা। এ সমস্যা নিরসনে আঞ্চলিক উদ্যোগ প্রয়োজন।

২) মাওয়াতে পদ্মা সেতু না হওয়া আসলে আমাদের আঞ্চলিকভাবে অসচেতনতার ফল। পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় গত ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর (শুক্রবার)। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহবান করা হয়। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শরু হওয়ার কথা থাকলেও আজোধি তা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে, সমন্বিত আঞ্চলিক সহযোগিতা ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে পারে। দেশের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো একযোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এ দাবি সহজেই আদায় করতে পারে।

৩) আমাদের পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ের দুর্ভোগ ক্রমান্বয়ে মালুম হচ্ছে। এ সঙ্কট প্রবলতর হয়ে উঠবে পদ্মাসেতু চালু হলে। এ ক্ষেত্রে আমরা কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলাবাসি সমন্বিত সহযোগিতামূলক অভিন্ন কর্মসূচি পালন ও দাবির মাধ্যমে সহজেই কাঙ্ক্ষিত সুফল ঘরে তুলতে পারি।

৪) কুমার নদসহ অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া অভিন্ন জলাশয়গুলি পুণরুদ্ধার করে সহজেই জলাশয়গুলির প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে দিতে পারি। এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত আঞ্চলিক উদ্যোগ।

৫) চুয়াডাঙ্গা -কুষ্টিয়া ভায়া আলমডাঙ্গা সড়কটি যারপরনাই সর্পিল ও বাঁকপ্রবণ। ফলে চুয়াডাঙ্গা -কুষ্টিয়া সড়কে যাতায়াতকারি দু জেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কার ভেতর বন্দি হচ্ছেন। অন্যদিকে, তেমন দ্বিগুণ সময় লাগছে। ফলে জীবন থেকে মূল্যবান সময় অযথা অপচয় হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হচ্ছে দু জেলার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ। দু' জেলার সংযোজন রেলওয়ের পাশাপাশি সমান্তরাল সড়ক পথের সমন্বিত উদ্যোগ। এ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণসহ আন্তঃজেলা সড়ক নির্মাণ বেশ সময় সাপেক্ষ। এ জন্য ৫ কিংবা ১০ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেতে পারে। রেলওয়ের সমান্তরাল এমন একটা সড়কপথ নির্মিত হলে একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা বহুলাংশে হ্রাস পাবে। তেমন, মূলবান সময়ের অযথা অপচয় বন্ধ হবে। অর্ধেক সময়েই কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এটা সম্ভব শুধুমাত্র সমন্বিত আঞ্চলিক উদ্যোগ গ্রহণের ফলে।

৬) কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার লালন আশ্রম কিংবা শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি, অথবা মেহেরপুরের আমঝুপির বৈদ্যনাথতলা, শরৎচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত চুয়াডাঙ্গার কাশিপুর জমিদার বাড়ি, নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত আটচালা, হাজারদুয়ারী, ভারতের কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক জানকী নাথ ঘোষালের বাড়ি, মহাত্মা গান্ধিজীর প্রেমিকার গ্রাম জয়রামপুর, উপমহাদেশের একমাত্র দোতলা স্টেশন, ঘোরি আমলের মসজিদ, ঝিনাইদহে অবস্থিত উপমহাদেশের সবচে বড় বটগাছ -- এগুলি পরিদর্শনের জন্য এককভাবে পর্যটক আকর্ষণ করা বেশ কষ্টকর। কিন্তু এ ৪ জেলার দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনার একটি সমন্বিত প্যাকেজ সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে। এমন অনেক সম্ভাবনার দ্বার আমাদের সামনে উন্মোচিত করতে পারে শুধুমাত্র আঞ্চলিক সমন্বিত সহযোগিতামূলক কর্মসূচি প্রতিপালনের মাধ্যমে। তার জন্য রাজনৈতিক উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন প্রশাসনিক উদ্যোগের। আর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে এ মহৎ উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে গণদাবি প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী আন্তঃনির্রভরশীলতার এ যুগে কোন জাতিই বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। প্রত্যেক রাষ্ট্রেরই একে অপরের সাথে সম্পর্ক রাখা জরুরি। তেমনি দেশের অভ্যন্তরে এক অঞ্চলের সাথে আরেক অঞ্চলের। একে ভৌগোলিক অনিবার্যতা বলা চলে। এক-একটা অঞ্চলের বা জেলার ভৌগোলিক বিশেষত্ব ও সুবিধাসমূহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই কল্যাণকর বিবেচিত হয়ে আসছে। ভূ-রাজনীতির জনক Karl Hausofer স্পষ্টভাবে "The Dynamic aut of Geopolitics” এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। পরবর্তীতে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তারা অর্থনৈতিক ও সামরিক বিভিন্ন জোট তৈরি করেছেন। নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে ভৌগলিক অনিবার্যতা স্বীকার করে নিয়ে আমাদেরকেও আন্তঃনির্ভরশীলতা বা আঞ্চলিকতাকে আ

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram