৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাময়িক বরখাস্তকৃত দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ আদালতে মামলা

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জানুয়ারি ২৫, ২০২২
37
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের সাময়িক বরখাস্তকৃত দুই ব্যাংক কর্মকর্তা ও এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতে এবার ঋন জালিয়াতির মামলা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আইনুল ইসলাম, বদর উদ্দীন ও মনোহরপুর গ্রামের ইন্তাজ আলী বাদী হয়ে কালীগঞ্জের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে পৃথক তিনটি মামলা করেন।

গত ২৪ ডিসেম্বর দায়েরকৃত মামলায় কালীগঞ্জ অগণী ব্যাংকের তৎকালীন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার শৈলেন কুমার বিশ্বাস, ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালাম ও আজির আলীকে আসামী করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে আগামী ১৩ ও ১৪ ফেব্রয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আরজিতে বাদী কৃষক আইনুল ইসলাম দাবী করেছেন, আসামীরা প্রতারক, বিশ্বাস ভঙ্গকারী, দুর্নীতিবাজ ও ধুর্ত প্রকৃতির মানুষ। তারা সরকারী আইন অমান্য করে কৃষকের টাকা আত্মসাতের দায়ে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হয়েছেন।

বাদী আইনুল ইসলাম মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋন গ্রহনের আগ্রহ দেখালে মামলার এক নাম্বার আসামী ব্যাংকের সহকারী মাঠ কর্মী আজির আলী ঋন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তাকে চল্লিশ হাজার টাকা ঋন দেন। পরবর্তীতে যা সার্ভিস চার্জসহ বাদী আইনুল ৫০ হাজার ৮৬৫ টাকা পরিশোধ করেন। টাকা পরিশোধের পর আজির আলী ঋন সম্পুর্ন পরিশোধ হয়েছে মর্মে একটি লিখিত দেন। পরবর্তীতে ব্যাংক থেকে বাদীর বরাবর ৫০ হাজার টাকা বকেয়ার একটি নোটিশ পাঠায়। অথচ বাদী ঋনের টাকা আগেই পরিশোধ করেন। আসামীরা পরস্পরের যোগসাজসে বাদীর দেয়া ঋনের টাকা ব্যাংকে জমা না করে নিজেরা আত্মসাৎ করেন বলে তিনি দাবী করেছেন।

এই মামলার সাক্ষি পুকুরিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, আহম্মদ আলী, তিল্লা গ্রামের আক্কাচ আলী ও আনোয়ার হোসেন ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে সুদসহ পরিশোধ করলেও তাদের টাকা ব্যাংকে জমা হয়নি। উপরন্ত সাক্ষি আহম্মদ আলী কোন ঋন গ্রহন না করেও তার বাড়িতে ২০২১ সালের ২৪ আগষ্ট ৬০ হাজার টাকা ঋন গ্রহনের নোটিশ যায়। আরেক মামলার বাদী বদর উদ্দীন তার মামলায় উল্লেখ করেছেন, তিনি কালীগঞ্জ অগ্রনী ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করেন। তিনি ঋন পরিশোধের প্রস্তুতি নিলে ২০২১ সালের ৬ আগষ্ট ব্যাংক থেকে ৬০ হাজার টাকার ঋন গ্রহনের নোটিশ যায়। অথচ তিনি ঋন নিয়েছেন ২৩ হাজার টাকা। বাকী টাকা আসামীরা বাদীকে না দিয়ে আত্মসাত করেন।

এই মামলার সাক্ষি আজিবর রহমান ব্যাংক থেকে ঋন উত্তোলন না করেও ২০২১ সালের ১৭ আগষ্ট তার নামে ৬০ হাজার বকেয়া ঋন পরিশোধের নোটিশ যায়। আসামীরা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কৃষক আজিবরের নামে ঋন তুলে আত্মসাৎ করেন। আরেক সাক্ষি কামরুজ্জামান ২০২০ সালের ১১ জুন ঋন উত্তোলনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু প্রয়োজন মিটে যাওয়ায় তিনি আর ঋন গ্রহন করেননি। তারপরও ২০২১ সালের ১৯ আগষ্ট তার নামে ৬০ হাজার টাকার নোটিশ যায়। কালীগঞ্জের মনোহরপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে ইন্তাজ আলী অপর মামলায় উল্লেখ করেন, বাদী ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৮০ হাজার টাকার ঋন নেন।

এই টাকা তিনি একই বছরের ৩ নভেম্বর তারিখে মামলার ১নং আসামী আজির আলীর কাছে জমা দেন। অথচ ২০২১ সালের ৬ আগষ্ট ঋন পরিশোধের জন্য ব্যাংক থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে ৯৩ হাজার ২৩৬ টাকা ব্যাংক পাবে বলে উল্লেখ করা হয়। এই মামলার ১ নং সাক্ষি সিরাজুল ইসলাম ইজিবাইক কেনার জন্য ২০২০ সালের ১০ মে তারিখে ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে ঋন নেন। ঋনের টাকা আসামী আজির আলীর কাছে জমা দিলেও তা আর ব্যাংকে জমা হয়নি। সিরাজুল ইসলাম নোটিশ পেয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করে জানতে পারেন তার নামে ৭০ হাজার টাকার ঋন উত্তোলন করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে তিনি ৭০ হাজারের মধ্যে পেয়েছিলেন ৫০ হাজার টাকা। বাকী টাকা আত্মসাৎ করা হয়। মামলার ২ নং সাক্ষি মুক্তার হোসেন কালীগঞ্জ অগ্রনী ব্যাংক থেকে প্রথমে ৫ হাজার টাকা ঋন গ্রহন করেন।

ওই টাকা জমা দিয়ে তিনি পুনরায় ২০২১ সালের ২০ আগষ্ট ৩০ হাজার ৮৮ টাকার ঋন নেন। অথচ তার নামে ব্যাংক থেকে তোলা হয় ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া কৃষক মুক্তারের জমির দলিল, ছবি ও জমির পড়চা ব্যবহার করে বিভিন্ন নামে ঋন তুলে আসামীরা আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় দাবী করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান সোমবার জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথা সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। মামলার বাদী কালীগঞ্জ উপজেলার পুকুরিয়া গ্রামের নওয়াব আলীর ছেলে আইনুল আসলাম জানান, ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর তদন্ত কর্মকর্তা বাবর আলী তাদের ডেকেছিলেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে বাদী ও সাক্ষিদের জবানবন্দি নেবেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ অগ্রণী ব্যাংক জোনাল অফিসের বিদায়ী উপমহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ জানান, শৈলেন কৃমার বিশ্বাস, ক্যাশ অফিসার আব্দুস সালাম ও আজির আলী ইতিমেধ্য বেশি কিছু টাকা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। তাছাড়া ব্যাংকের আভ্যন্তরীন অডিটে তাদের বিরুদ্ধে ঋন আত্মসাতের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram