৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারাবীহ সালাত; রাকআত সংখ্যা বিতর্ক : উপেক্ষিত অবিতর্কিত সুন্নাত

প্রতিনিধি :
ইমদাদুল হক
আপডেট :
এপ্রিল ২৫, ২০২১
235
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

মাওলানা ইমদাদুল হক: কাজ করা কষ্টকর। কিন্তু কর্মহীন বিতর্ক আয়াসহীন মজাদার বিষয়। তাই আমরা কল্যাণময় রমাযান মাসেও নানা অনুষঙ্গে শুধু বিতর্ক করে চলি। যেমন তারাবীহ সালাতের রাকআত সংখ্যা। মসজিদে-মিম্বারে, মঞ্চে-ময়দানে, মাদরাসা-মিডিয়ায় ও কলমে-যবানে আমরা কতই না বিতর্ক, কাদা ছোড়াছুড়ি করে চলেছি এ রাকআত সংখ্যা নিয়ে। কিন্তু নবীজি, সাহাবি, তাবিয়ি ও সালাফের চর্চিত অবিতর্কিত প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত তারাবীহ সালাতের দৈর্ঘ-স্থিরতা, কিরাআতের সৌন্দর্য ও তারতীলের চর্চা আমরা করছি না। সবচেয়ে দীর্ঘ ও ধীর-স্থির নামাযটি আমাদের কাছে হয়ে গেছে সবচেয়ে তাড়াহুড়ো ও দ্রুতগতির নামায।

আসুন, আমরা বিভিন্ন পক্ষের দেওয়া দলীল থেকে অবিতর্কিত সুন্নাতটি খুঁজে দেখি। আট রাকআত পক্ষীয়দের দলীল আয়িশা রা. বর্ণিত হাদীস। আবু সালামা ইবন আব্দুর রাহমান থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা রা.কে জিজ্ঞাসা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রমাযানের নামায কেমন ছিল? আয়িশা রা. বলেন, তিনি রমাযান ও তার বাইরে এগারো রাকআতের উপর বাড়াতেন না। তিনি চার রাকআত পড়তেন; তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ সম্পর্কে প্রশ্ন কোরো না। তারপর তিনি চার রাকআত পড়তেন; তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ সম্পর্কে প্রশ্ন কোরো না। তারপর তিন রাকআত পড়তেন। (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-২৪০৭৩; সহীহ বুখারি, হাদীস-১১৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস-৭৩৮; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১৩৪১; সুনান তিরমিযি, হাদীস-৪৩৯; সুনান নাসায়ি, হাদীস-১৬৯৭)। এ হাদীসে আমরা দেখছি, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রাতের নামাযের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ এমন ছিল যে, আয়িশা রা. তার বর্ণনা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করছেন।

এমনকি যে হাদীসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের রমাযানের রাতের নামায দুই বা চার রাকআত বর্ণিত হয়েছে, সে নামাযও সারারাতব্যাপী দীর্ঘ ছিল। হুযায়ফা ইবন ইয়ামান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রমাযানের এক রাতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম। অতপর তিনি যখন সালাতে দাঁড়ালেন তাকবীর বলে বললেন, ‘যুল মালাকুতি ওয়াল জাবরুতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল আযমাতি’। তারপর সূরা বাকারাহ পড়লেন, তারপর সুরা নিসা, তারপর সূরা আল ইমরান পড়লেন। প্রত্যেক ভীতিপ্রদর্শনমূলক আয়াতেই তিনি থামলেন। তারপর ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম’ বলে রুকু করলেন যে পরিমাণ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলে মাথা তুললেন এবং পূর্বের দণ্ডায়মানকাল পরিমাণ অপেক্ষা করলেন। তারপর ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলে সিজদা করলেন এবং পূর্বের দণ্ডায়মানকাল পরিমাণ সিজদাতে থাকলেন। তারপর ‘রাব্বিগফির লি’ বলে মাথা উঠালেন এবং পূর্বের দণ্ডায়মানকাল পরিমাণ অপেক্ষা করলেন। তারপর ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ বলে সিজদা করলেন দণ্ডায়মানকাল পরিমাণ। তারপর মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। এভাবে তিনি রাতের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র দু’রাকআত বা চার রাকআত সালাত শেষ করতেই বিলাল এসে তাঁকে (ফজরের) সালাত বিষয়ে অবগত করলেন (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস- ২৩৩৯৯; সুনান নাসায়ি, হাদীস-১৬৬৫; মুস্তাদরাক হাকিম, হাদীস-১২০১)।

আয়িশা রা. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম রমাযানের তারাবীহর ব্যাপারে কড়া তাকিদ না করে উৎসাহিত করতেন; তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রমাযানের তারাবীহ আদায় করবে তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে (সুনান নাসায়ি, হাদীস-২১৯২)। আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাযানে ‘ঈমান’ ও ‘ইহতিসাব’র সাথে (তারাবীহর) সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ হয়ে যায়। ইবন শিহাব বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকাল হয়ে যায় এবং তারাবীহর বিষয়টা এভাবেই থেকে যায়। এমনকি আবু বকর রা.র খিলাফতকালে এবং উমার রা.র খিলাফতকালের প্রথম ভাগেও তা এমনই ছিল। (সহীহ বুখারি, হাদীস-২০০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস-৭৫৯; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১৩৭১; সুনান তিরমিযি, হাদীস-৮০৮)।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের এ উৎসাহবাণী পেয়ে সাহাবি কিরাম রা. পূর্ণ মনোযোগ ও যত্ন প্রয়োগ করেন তারাবীহর প্রতি। নবীজি শুধু সালাতের উৎসাহ দিয়েছেন, জামাআতের ব্যাপারে কিছুই বলেন নি। তবুও তাঁরা সামান্য সুযোগ পেয়েই নবীজির পেছনে জামাআতে শরিক হয়ে গেছেন। আয়িশা রা. ও যায়দ ইবন সাবিত রা. বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম রমাযান মাসে মসজিদে চাটাইয়ের একটি কক্ষ বানালেন, অতপর কয়েক রাত সেখানে সালাত আদায় করলেন। কিছু সংখ্যক সাহাবিও তাঁর সাথে সালাত আদায় করলেন। শেষের রাতে তাঁদের উপস্থিতি এত বেশি হল যে মসজিদে আর স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন তখন (নিজের ঘরেই) অবস্থান করলেন। অতপর (সকালে ফজর পর) তাঁদেরকে বললেন, আমি তোমাদের কার্যকলাপ বুঝতে পেরেছি। তবে আমার না আসার কারণ, আমি আশঙ্কা করেছি, হয়তো তোমাদের উপর আবশ্যক করে দেওয়া হবে, তখন তোমরা অক্ষম হয়ে পড়বে। সুতরাং হে লোক সকল, তোমরা আপন গৃহে সালাত আদায় করো। কেননা ফরয সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত আপন গৃহে আদায় করাই উত্তম। (সহীহ বুখারি, হাদীস-৭৩০, ৭৩১ ও ৭২৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস-৭৬১, ৭৮১; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১০৪৪, ১৩৭৩; সুনান তিরমিযি, হাদীস-৪৫০; সুনান নাসায়ি, হাদীস-১৫৯৯; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-২১৬২৪)।

আবু যার রা. ও নু’মান ইবন বাশীর রা. বলেন, রমাযানে আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রোযা রাখলাম। তিনি তেইশতম দিনে আমাদের নিয়ে রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন। পঁচিশতম রাতে আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন অর্ধরাত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, অবশিষ্ট রাতটুকুও যদি আপনি আমাদের নিয়ে নফল আদায় করতেন। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে সালাত শেষ করে ঘরে ফিরে যায় তার জন্য আল্লাহ পূর্ণরাতের সাওয়াব লেখেন। তারপর সাতাইশতম রাতে তিনি আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করতে থাকেন এবং পরিবার-পরিজনদেরকেও একত্রিত করলেন। আমরা সাহরির সময় না পাওয়ার আশঙ্কা করছিলাম। (মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-১৮৪০২, ২১৪৪৭; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-১৩৭৫; সুনান তিরমিযি, হাদীস-৮০৬; সুনান নাসায়ি, হাদীস-১৩৬৪, ১৬০৫, ১৬০৬; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস-১৩২৭; তাহাবি, শারহু মাআনিল আসার, হাদীস-২০১৩)। এই হাদীসে আমরা দেখছি, প্রথম রাতে নবীজি সাহাবিদেরকে নিয়ে রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন। দ্বিতীয় রাতে অর্ধরাত পর্যন্ত সালাত আদায়ের পর সাহাবিগণ বাকি অর্ধরাতও সালাত আদায়ের আবদার করছেন। আর তৃতীয় রাতে তো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পরিবার-পরিজন ও সাহাবিদেরকে নিয়ে সুবহে সাদিকের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সালাত আদায় করেছেন।

উমার রা. তাঁর খিলাফাতের যামানায় জামাআতের সুন্নাত পুনরায় চালু করেন। সাহাবি সায়িব ইবন ইয়াযীদ রা.র বর্ণনায় সে জামাআতের রাকআতের বিষয়ে ভিন্নভিন্ন দুটি সংখ্যা উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু উভয় বর্ণনায় নামায ও কিরাআতের দৈর্ঘ ও সৌন্দর্যের বর্ণনা হুবহু এক।

ইমাম মালিকের বর্ণনায় সায়িব ইবন ইয়াযীদ রা. বলেন, উমার রা. উবাই ইবন কা’ব ও তামীম দারি রা.কে আদেশ করেন মানুষদেরকে নিয়ে এগারো রাকআত সালাত আদায় করতে। তিনি বলেন, ইমাম শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরা পড়তেন। আমরা দীর্ঘ কিয়ামের কারণে লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতাম এবং ফজরের আগমুহূর্তে (নামায শেষ করে) ফিরে আসতাম (মুআত্তা মালিক ১/১১৫)।

ইমাম আব্দুর রাযযাক সানআনির বর্ণনায় সায়িব ইবন ইয়াযীদ রা. বলেন, উমার রা. রমাযানে উবাই ইবন কা’ব ও তামীম দারির ইমামতিতে লোকদেরকে একুশ রাকআতের উপর একত্রিত করেন। তাঁরা (প্রত্যেক রাকআতে) শতাধিক আয়াতবিশিষ্ঠ সূরা পড়তেন এবং ফজরের আগমুহূর্তে ফিরে যেতেন (মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাক, হাদীস-৭৭৩০)।

সাহাবি সায়িব ইবন ইয়াযিদ রা. কর্র্তৃক সাহাবিদের তারাবীহর আরেকটি বর্ণনা। তিনি বলেন, সাহাবিগণ উমার রা.র যুগে বিশ রাকআত (তারাবীহ) পড়তেন আর প্রত্যেক রাকআতে (শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরা বা) দুইশত আয়াত পড়তেন। এবং তাঁরা (উসমান রা.র যুগেও) দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ের ক্লান্তিতে লাঠিতে ভর দিতেন। (ফিরইয়াবি, কিতাবুস সিয়াম, হাদীস-১৭৬; বায়হাকি, আস সুনানুল কুবরা, হাদীস-৪২৮৮)।

উমার রা. কর্তৃক পুনরায় জামাআত চালুর উদ্দেশ্যও কিরাআতের সৌন্দর্য। একরাতে তিনি মসজিদে গেলেন। তখন লোকেরা বিক্ষিপ্ত ছিল। কেউ একা একা, আবার কিছু লোক কোনো ইমামের পিছে সালাত আদায় করছে। তিনি তাদেরকে এক ইমামের পিছে একত্রিত করতে চাইলেন। তাবিয়ি আবুল আলিয়া বলেন, উমার রা. উবাই ইবন কা’ব রা.কে রমাযানে লোকদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করতে আদেশ দিয়ে বললেন, লোকেরা দিনভর সিয়াম পালন করে তবে, তারা সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না, যদি আপনি রাতে তাদের নিয়ে কুরআন পড়তেন। তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন, এভাবে তো আগে হয় নি। তিনি বললেন, আমি জানি, তবে কাজটি উত্তম। এরপর উবাই রা. তাদের নিয়ে বিশ রাকআত (তারাবীহ) পড়লেন। (মাকদিসি, আল আহাদীসুল মুখতারাহ, হাদীস-১১৬১)।

উল্লেখিত হাদীসগুলোতে আমরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের তারাবীহর অবস্থা ও প্রকৃতি দেখতে পাচ্ছি। নবীজির সে নামাযের দৈর্ঘ ও সৌন্দর্য ছিল বর্ণনাতীত। সাহাবিগণ রা.ও নবীজির আমল দেখে এবং উৎসাহবাণী শুনে একই সুন্নাত অবলম্বন করেছিলেন। তাঁরা দীর্ঘরাত জেগে দীর্ঘ কিয়ামে সুন্দর ও তারতীলের কিরাআতে ধীর-স্থিরতার সাথে তারাবীহ আদায় করতেন। সে সালাত এত দীর্ঘ হত যে, তাঁরা মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরে সুবহে সাদিক হওয়ার ভয়ে তাড়াতাড়ি খাবার দেওয়ার জন্য খাদিমদেরকে তাড়া দিতেন।

উমার রা. তারাবীহর জামাআত চালু করতে গিয়ে বললেন, ‘লোকেরা দিনভর সিয়াম পালন করে, তবে তারা সুন্দর করে কুরআন পড়তে পারে না...’। উমার রা. কর্তৃক বর্ণিত এই ‘লোকেরা’ তো কুরআনের ভাষায় কথাবলা, কুরআন নাযিলের যুগ ও তৎসংলগ্ন যুগের আরব সাহাবি ও তাবিয়িগণ। তাদের তিলাওয়াত ছিল আমাদের যে কারো চেয়ে শতগুণ সুন্দর। কিন্তু উমার রা. চাইলেন, তারাবীহর কিরাআত হোক আরো সুন্দর। তাই তিনি উবাই রা.র ইমামতিতে তাঁদেরকে একত্রিত করে দিলেন। কিন্তু আজ আমরা জামাআতে কুরআন খতমের নামে যেভাবে কুরআনকে ‘খতম’ করছি উমার রা. কর্তৃক জামাআত চালু করার উদ্দেশ্যের সাথে তার ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। আমরা বরং সে উদ্দেশ্যকে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ ও ব্যহত করছি।

আমাদের মতো জামাআতে রাকআতগণা নামায তাঁদের ছিল না। আর তাঁদেরকেই মহান আল্লাহ জান্নাতিদের মডেল বানিয়েছেন। ভিন্নমুখি দুটি গাড়ি একই গন্তব্যে মিলিত হয় না। আমাদেরকে তাই তাঁদেরকেই টার্গেট করে একই গতিপথ অবলম্বন করে চলতে হবে। কিন্তু আমরা এসব এড়িয়ে চলতে চাই; নানান অজুহাত, ওযর-আপত্তি তৈরি করি। এর জন্য দায়ি মূলত আমাদের ঈমানের দুর্বলতা, পলায়নপর মানসিকতা ও দুনিয়ামুখি দৃষ্টিভঙ্গি। তাঁদের শারীরিক শক্তি হয়তো আমাদের চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল। কিন্তু একথাও তো মনে রাখতে হবে, তাঁদের দেশ আমাদের দেশের মতো সবুজ-শ্যামল, ছায়াঢাকা ছিল না। আমাদের মতো তাঁদের ঘরে দীর্ঘদিনের খাবার জমা থাকত না। দুমুঠো খাবারের জন্য সারা দিনমান তাঁদেরকে মরুসূর্যের নিচে কাজ করতে হত। আর রাতে সেই ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহেই দীর্ঘ কিয়াম করতেন।

সাহাবিদের তারাবীহর প্রকৃতি বর্ণনায় আরেকজন তাবিয়ির সাক্ষ্য হাযির করি। আবু দাউদ ইবন হুসাইন থেকে বর্ণিত, তিনি আব্দুর রাহমান আ’রাজকে বলতে শুনেছেন, আমি লোকদেরকে, অর্থাৎ সাহাবিদেরকে পেয়েছি, তাঁরা রমাযানে (বিতরের কুনুতে) কাফিরদেরকে অভিশাপ দিতেন। তিনি বলেন, আর ইমাম (তারাবীহর) আট রাকআতে সূরা বাকারা পড়তেন। কখনো বারো রাকআতে বাকারা পড়লে লোকেরা মনে করতেন, তিনি হালকা করে ফেললেন (মুআত্তা মালিক, হাদীস-৩৮১)।

আমাদের তারাবীহ বিষয়ক অধিকাংশ আলোচনার বিষয়বস্তু রাকআত সংখ্যা। কিন্তু এ বর্ণনার আ’রাজ রাহ.সহ অন্যান্য বর্ণনার সবাই নবীজি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের তারাবীহর বর্ণনা দিতে গিয়ে জোর দিয়ে বর্ণনা করেছেন তাঁদের সালাত ও কিরাআতের দৈর্ঘ ও সৌন্দর্যের কথা। এসব হাদীসকে একত্রে সামনে রেখে শায়খুল ইসলাম ইবন তায়মিয়া রাহ. যে ব্যাখ্যা করেন তার সারমর্ম হচ্ছে, তাঁরা কখনো সখোনো রাকআত সংখ্যা কমবেশ করলেও সালাতের সময় ও তিলাওয়াত একই থাকত এবং ধীর-স্থিরতা থাকত একই রকম। যেমন আ’রাজের বর্ণনায় দেখছি, তাঁরা আট বা বারো রাকআতে বাকারা পড়তেন। অর্থাৎ আট রাকআতে ছয় পৃষ্ঠা করে হোক আর বারো রাকআতে চার পৃষ্ঠা করে হোক, রাকআত কমবেশি হলেও সূরা বাকারা তাঁরা পূর্ণই পড়ছেন। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা সেভাবে ঈমান আনো যেভাবে লোকেরা (অর্থাৎ সাহাবিরা) ঈমান এনেছেন ( আলকুরআন ২ : ১৩)। তিনি আমাদেরকে প্রত্যেক বিষয়ের গুরুত্বগত পর্যায় বোঝার ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন।

ইমদাদুল হক, শিক্ষক- দারুস সুন্নাহ, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram