২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা ডম্বলপুরের জনপ্রিয় পল্লী চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৩
41
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গার ডম্বলপুর গ্রামের জনপ্রিয় পল্লী চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে ডম্বলপুর-মাধবপুর গ্রামের কুমার নদের ব্রীজের পাখার সাথে গলায় দড়ি প্যাঁচানো অবস্থায় তৌহিদের মরদেহ ঝুলতে দেখা যায়। এ সময় তার গলায় গামছা পেঁচিয়ে ও মুখে গামছা এবং গেঞ্জির অংশ ঢোকানো ছিল। কিছুটা দুরে তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও মাথার টুপি পড়ে ছিল। মোটরসাইকেলের পাশেই ধস্তাধস্তির কিছু নমুনা পায় পুলিশ।


শুক্রবার ভোরে প্রাতভ্রমণকারিরা তৌহিদের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় গ্রামের কবরস্থানে তৌহিদের লাশ দাফন করা হয়।


রাতে এ সংবাদ লেখা অবধি এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।


নিহত তৌহিদের স্ত্রী বিউটি খাতুন তার স্বামীকে হত্যার অভিযোগ তুলে বলেন, সদ্য বিবাহিত তার মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন এক সপ্তাহ ধরে হুমকি দিয়ে আসছিল। এ ঘটনায় থানায় জিডিও করা হয়েছিল।
গ্রামের একাধিকসূত্র জানিয়েছে, মাস তিনেক আগে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের ছেলে জীবন নিহত তৌহিদের মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে উধাও হয়। এ ঘটনায় তৌহিদুল থানায় জীবনের বিরুদ্ধে মেয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ তামান্নাকে উদ্ধার করে পিতা তৌহিদের হেফাজতে দিয়ে দেয়। ওইদিনই তামান্না আবারও জীবনের সাথে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তামান্না মাধবপুরে তার স্বামী জীবনের কাছেই ছিল।


প্রতিবেশীরা জানান, তামান্না কিছুদিন হয় শ্বশুরবাড়িতে ভাল ছিল না। থানায় শ্বশুর তৌহিদের করা মামলার ঘটনা জীবন ভুলতে পারেনি। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে জীবন ও তামান্নার মধ্যে দিনে দিনে সংকট তৈরি হচ্ছিল। দাম্পত্য সংকট তীব্র হলে গত ২২ সেপ্টেম্বর তামান্না বিষ পান করে। খবর পেয়ে মেয়েকে দেখতে ছুটে যান তৌহিদুল ইসলাম। সুস্থতার জন্য মেয়েকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এরপরই সংকটকে আরো ঘনীভুত করে তোলে জীবন। সে শ্বশুর তৌহিদকে নানাভাবে হুমকিধামকি দিতে থাকে। এমনকি জীবননাশেরও হুমকি দেয়। হুমকি পেয়ে তৌহিদুল গত রবিবারে জামাই জীবনের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরির এক সপ্তাহ পরেই তৌহিদের লাশ পাওয়া যায়।


ডম্বলপুর গ্রামের হারুন অর রশীদ জানান, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২ টার দিকে গ্রামের একটি চায়ের দোকানে তৌহিদসহ বেশ কয়েকজন চা পান করছিলেন। এ সময় তৌহিদের মোবাইলে একটা রিং আসে। রিং পেয়ে তৌহিদ নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে কুমার নদের দিকে চলে যান। এরপর সারারাত তৌহিদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাতভর তৌহিদের মোবাইলে রিং বাজলেও মোবাইল রিসিভ হয়নি। উৎকণ্ঠার ভেতর দিয়ে সারারাত কাটিয়ে দেয় তৌহিদের পরিবার।


শুক্রবার ভোরে ডম্বলপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মহসিন আলী কুমারনদের ব্রীজ পার হতেই ব্রীজের ওপর একটি মোবাইল পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি মোবাইলটা হাতে নেন। এরপর তৌহিদের স্ত্রী রিং করেন। মহসিন আলী মোবাইল রিসিভ করে জানতে পারেন মোবাইলটা রাতে বাড়ি না ফেরা পল্লী চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের। এর কিছুক্ষণ পর সকালে প্রাতভ্রমনে বের হওয়া মুরুব্বীরা ব্রীজের পাখার সাথে বাঁধা দড়িতে তৌহিদের ঝুলে থাকা লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে। ব্রিজের পাশেই পল্লি চিকিৎসক তৌহিদুলের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মাথার টুপি পাওয়া যায়। মোটরসাইকেলের পাশেই ধস্তাধস্তির নমুনা দেখতে পাওয়া যায়।


এর পরপরই গ্রামে চাউর হয় তামান্নার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তৌহিদকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মুখে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে দড়িতে বেঁধে ব্রীজের পাখার সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে।


গ্রামবাসি জানায়, ঘটনার পরপরই তামান্নার স্বামী জীবন ও শ্বশুর ছানোয়ার হোসেনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি।


লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সাার্কেল আনিসুজ্জামান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ বিপ্লব কুমার নাথ, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত একরামুল হোসাইন। এসময় চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আনিসুজ্জামান লালন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গলায় দড়ি বেঁধে ব্রীজের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্রিজের কিছুটা দুরে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মাথার টুপি ও স্যান্ডেল পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্তপূর্বক বিস্তারিত জানানো হবে।


ময়নাতদন্তের পর সন্ধ্যার পর লাশ গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়।


পল্লি চিকিৎসকের নিহতের খবর পেয়ে পরিবার শোকে ভেঙ্গে পড়ে। মা বাবা, স্ত্রী সন্তানের বুকফাটা আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে উঠে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram