২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার সম্ভাবনাময় ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চলছে ধুঁকে ধুঁকে

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ১৩, ২০২৩
96
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


শরিফুল ইসলাম রোকন : প্রাণি সম্পদের উন্নয়ন, সুরক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায়। দেশের ২য় ও সর্ব শেষ প্রতিষ্ঠান এটি। নানা সমস্যায় জর্জরিত ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নিজেই ধুঁকছে। বন্ধ রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ২ বছর মেয়াদী ইন সার্ভিস মেকাপ কোর্সসহ অন্য প্রশিক্ষণ গুলো। ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে সহযোগি অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক, ভেটেরিনারি সার্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পদ শূন্য রয়েছে। স্টাফকোয়াটার, অডিটোরিয়াম, ছাত্র হোস্টেল, প্রাণি রাখার শেডসহ অন্য স্থাপনা গুলো ব্যবহারের অনুপযোগি, ঝুঁকিপূর্ণ ও জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রাণিসম্পদ বিভাগকে আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধশালি করতে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে সরকার। নামমাত্র তিন দিনের খামারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে খামারিদের। স্থানীয়দের দাবি, ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত ও কার্যক্রম স্বাভাবিক করা হোক। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বলছেন, সমস্যা চিহিৃত করে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারি গ্রামে ১৯৭৮ সালে ১০.৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠত হয় ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুনামের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কার্যক্রম পরিচালিত হত। এখান থেকে প্রাণিসম্পদের উপর দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারী-বেসরকরাী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। যা দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতো। ব্যাক্তি উদ্যোগে প্রশিক্ষণ নেওয়ারা নিজ এলাকায় গিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকারত্ব দুর করে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মরতরা বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

সুনামের সাথে চলা প্রতিষ্ঠানটি নানা সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে সকল প্রশিক্ষণ। বেশির ভাগ ভবন পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রাণি সম্পদের উন্নয়ন, সুরক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে সরকার প্রতিষ্ঠিত করলেও তা কাজে আসছেনা।

ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সীমানা প্রাচীর না থাকায় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষাণার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। দিনে রাতে থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ।

৫৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য বসবাসের স্টাফকোয়াটার গুলো ব্যবহারের উপযোগি থাকলেও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সংস্কার না করায় পরিত্যাক্ত এবং জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। স্টাফকোয়াটার গুলোর জানালা, দরজা ভেঙে নষ্ট হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। পানির ব্যবস্থা নেই তেমন একটা। ভবন গুলোর পোলস্তরা খোসেখোসে পড়ছে। লতাপাতা, আগাছায় ভরে গেছে কোয়াটার গুলো। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। জঙ্গলের কারণে সাপ, ব্যাঙ, পোকা মাকড়ের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। অডিটোরিয়াম, ছাত্র হোস্টেল, প্রাণি পালন শেড, ল্যাবসহ প্রয়োজনীয় বিভাগ গুলো দীর্ঘ দিন বন্ধ রয়েছে।

হাসপাতালটি চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। প্রয়োজনীয় লোকবল সংকট রয়েছে। কয়েক জনকে দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত ওষুধ সংকট রয়েছে। বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত সংকট থেকেই যাচ্ছে। হাসপাতালে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষসহ অন্য প্রাণির চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয়রা ভোগান্তির শিকার হন।

জনবল সংকট দীর্ঘ দিনের। ৫৪টি পদের বিপরিতে শূণ্য রয়েছে ২৯টি পদ। ১ বছর মেয়াদী প্রি-সার্ভিস, ২ বছর মেয়াদী ইন সার্ভিস মেকাপ কোর্স বন্ধ রয়েছে। ২ বছর মেয়াদী ইন সার্ভিস মেকাপ কোর্স তিন বছর চালু সংক্রান্ত জটিলতায় বন্ধ রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দশম থেকে ২০তম গ্রেডের স্টাফদের প্রশিক্ষণও বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র তিন দিনের খামারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পদ শূন্য রয়েছে সহযোগি অধ্যাপক ১টি, সহকারী অধ্যাপক ১টি, প্রভাষক ৪টি, ভেটেরিনারি সার্জন ১টি, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১টি, ইন্সট্রাক্টর পদ ১টি, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পোল্ট্রি প্রোডাকশন ২টি, স্টোনাগ্রাফার ১টি, নি¤œমান সহকারী লাইব্রেরিয়ান ১টি, ডেইরি টেকনিসিয়ান ১টি, মেকানিক ১টি, পাম্প চালক ১টি, গাড়ি চালক ২টি, মিলকার ১টি, অফিস সহায়ক ১টি, হসপিটাল এ্যাটেনডেন্ট ১টি, এনিম্যাল এ্যাটেনডেন্ট ১টি, বুল এ্যাটেনডেন্ট ১টি, ডেইরি এ্যাটেনডেন্ট ১টি, পোল্ট্রি এ্যাটেনডেন্ট ১টি, মালী ১টি ও নিরাপত্তা প্রহরী ১টি।

আলমডাঙ্গা কুমারি গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম, হারুন ও জহুরুল বলেন, এক সময় প্রাণ ছিল। এখন মৃত প্রায়। দেখলে কষ্ট হয়। কত মানুষের আসা যাওয়া ছিল। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ধ্বংসের দার প্রান্তে। যারা দায়িত্ব রত আছেন ঠিক মত অফিসে আসেননা। দেখার কেউ না থাকায় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। হাসপাতালটির বেহাল দশা। সরকার প্রতিষ্ঠানটি আবার চালু করবে বলে আশা স্থানীয়দের।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা কুমারি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ পিন্টু বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ এখানে এক সময় নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে আসতেন। এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। আর ভবন গুলো ব্যবহারের উপযোগি থাকলেও কোন স্টাফ না থাকায় পরিত্যাক্ত হয়েছে। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সরকারী একটি প্রতিষ্ঠান অবহেলায় হুমকির মুখে পড়েছে। যোগাযোগের জন্য নতুন করে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আগের অবস্থানে ফিরে আসুক।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা ভেটেরিনারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক গোলাম হায়দার জানান, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সমস্য গুলো চিহিৃত করেছি। ইন সার্ভিস মেকাপ কোর্সসহ অন্য প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে কিছু জটিলতার কারণে। লোকবল সংকট, যন্ত্রপাতি, সেড, কোয়াটার গুলো ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ছেলেদের হোস্টেলটি বন্ধ থাকলেও অল্প দিনে মেয়েদেরটি চালু করেছি। সীমানা প্রাচীর না থাকায় স্টাফ ও প্রশিক্ষানার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সকল সমস্য কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রæত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি তার হারানো গৌরব আবার ফিরে পাবে। আবার শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকবে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram