৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহেশপুরে অসুস্থ বাবার সামনেই সন্তানের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য করার অভিযোগ

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
ডিসেম্বর ১১, ২০২১
48
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহের মহেশপুরে অসুস্থ বাবার সামনে এক তরুণকে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাসের পা ধরেও ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই তরুণকে। এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে পড়েন হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অসুস্থ পিতা গিয়াস উদ্দিন সরকার।

গত ৮ ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন (৬২)। ছাত্রলীগ সভাপতির প্ররোচনায় নিজের ছেলে মুখে জুতার বাড়ি মারতে দেখে আরো অসুস্থবোধ করেন গিয়াস উদ্দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। ভুক্তভোগী ওই তরুণের নাম এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার। তিনিও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

ৎতাঁদের বাড়ি মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে। মুখে জুতা মারার ঘটনার পর দুঃখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এস এম সরকার লিখেছিলেন, ‘মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?’। এদিকে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে পিতার মৃত্যুর পর তিনি কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছেন। শুধু বলছেন, ‘ওরা আমাকে জুতা মারতে বাধ্য করার কারণে অসুস্থ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন, যে কারণে তাঁকে বাঁচানো গেল না।’ জুতা মারার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেননি ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান। তবে ঘটনা নিয়ে তাঁর ভাষ্য, তাঁরা ওই কর্মীর অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় এস এম সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এত দিন আপনাদের সঙ্গে বিরোধ করে এসেছি, অথচ আপনারা আমার বাবাকে দেখতে এসেছেন। আমি এতদিন ভুল করেছি, এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।

’ ছাত্রলীগ নেতা আরও দাবি করেন, ওই কর্মী নিজেই তাঁকে জুতা দিয়ে মারতে বলেন। তখন তিনি নিজে না মেরে পা থেকে জুতা খুলে এগিয়ে দেন। তখন তিনি নিজেই জুতা মারেন। এস এম সরকারের ভগ্নিপতি মোমিনুর রহমান বলেন, এস এম সরকার ছাত্রলীগ করেন। মাঝে কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। অল্প দিন হলো বাড়িতে এসেছেন। তিনি ছাত্রলীগের একটি গ্রæপের বিপক্ষে ছিলেন। দুই পক্ষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ে লেখালেখি করে। এই লেখালেখি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

মোমিনুর রহমান বলেন, তাঁর শ্বশুর গিয়াস উদ্দিন সরকার ৭ ডিসেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং কিছুটা সুস্থতার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালে বাবার পাশে ছিলেন ছেলে এস এম সরকার। সেখানে তাঁর মা মোছা. খাদিজা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। এক দিন পর ৮ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান বিপাস তার অনুসারী নিয়ে সেখানে যান।

তাঁরা এস এম সরকারকে পেয়ে অসুস্থ বাবা ও পাশে থাকা মায়ের সামনেই তাঁর ওপর চড়াও হন। ফেসবুকে নানা কথা লেখার প্রসঙ্গ তুলে চাপ সৃষ্টি করেন। এ সময় এস এম সরকার তাঁদের আক্রমণাত্মক পরিস্থিতি দেখে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে পায়ে ধরেও ক্ষমা ভিক্ষা চান। এরপরও ছাত্রলীগ সভাপতি নিজের পায়ের জুতা খুলে এগিয়ে দেন। হুকুম দেন নিজের মুখে জুতার বাড়ি মারতে। উপায় না দেখে এস এম সরকার নিজের মুখে জুতা দিয়ে বাড়ি মারেন। মোমিনুর রহমান বলেন, এই ঘটনার পর তাঁর শ্বশুর মানসিক কষ্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁরা কাছে গেলে শুধু প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন ছেলেকে দিয়ে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দেওয়ানো হলো।

তাঁর ছেলে কী অপরাধ করেছেন? কিন্তু তিনি কোনো উত্তর খুঁজে পাননি, ছেলেও পিতার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন গিয়াস উদ্দিন। তখন তাঁরা যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি মারা যান। কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোমিনুর রহমান। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলেন, ছেলের ওপর এই নির্যাতন সইতে না পেরেই তিনি চিরদিনের মতো চলে গেলেন। তাঁরা এই ঘটনার বিচার চান। এস এম সরকার সরকার বলেন, ‘জুতা মারার দৃশ্যটি দেখলেই বুঝতে পারবেন, আমার ওপর কী অত্যাচার করা হয়েছে।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে পারেননি, শুধু কান্নাকাটি করেছেন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram