৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী পরীক্ষায় দুর্নীতি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪
133
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী পরীক্ষায় দুর্নীতি। ভূয়া পরীক্ষার্থী আটক ও কারাদন্ডের পর এবার উন্মুক্ত নকলে সহযোগিতার অভিযোগে কেন্দ্র সুপারসহ অন্য এক কেন্দ্র পরিদর্শককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিএম শাখার ল্যাব সহকারী দিয়ে উন্মুক্তের ডিগ্রী পরীক্ষা গ্রহণেরও অভিযোগ উঠেছে। তুমুল আলোচিত হচ্ছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উন্মুক্তের পরীক্ষায় উন্মুক্ত নকল ও অনিয়মের বিষয়টি।

'চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি।' এই প্রাচীন প্রবাদবাক্য সত্যতায় উদ্ভাসিত করেছেন আলমডাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত প্রায় তিন বছরব্যাপী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে কলেজ কেন্দ্রটি। কেন্দ্র সচিব, হল সুপারভাইজারসহ পরীক্ষা গ্রহণের সাথে জড়িত হাতে গোণা কয়েকজন শিক্ষক এই অপকর্মে জড়িত। এই চক্রের হাতে জিম্মি কলেজ প্রশাসন। কলেজ কর্তৃপক্ষের এই অপকীর্তির সংবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের দূর দূরান্ত থেকে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট কিনতে আসেন পেশাজীবিরা। যারা চাকুরী করেন, তাদের প্রমোশনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট প্রয়োজন। অনেকটা ইন সার্ভিস কোর্সের মত। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পরীক্ষায় সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কম বেশি প্রত্যেক শিক্ষার্থির নিকট থেকে পাঁচ হাজার ও ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিলে পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে থাকে কলেজের এই চক্রটি। যাদের কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়, তাদের বেশি সুযোগ দেওয়া হয়। তাদের পরীক্ষাও দিতে হয় না। তাদের জন্য ভুয়া পরীক্ষার্থী যোগাড় করে রাখা হয়। ভুয়া পরীক্ষার্থীদেরও টাকা দেওয়া হয়। অনেক সৌভাগ্যবানের পরীক্ষার উত্তরপ্ত্র কলেজের আলোচিত দুই শিক্ষক ও এক কর্মচারীর তত্বাবধানে হলের বাইরে লেখা হয়। এ অপকর্মের কাহিনি কলেজের সকল স্টাফ অবহিত। গত ১০ ফেব্রæয়ারি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিতুর পক্ষে পরীক্ষায় পক্সি দেওয়ার সময় সালমা খাতুন নামের এক ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সহকারী কমিশনার রেজওয়ানা নাহিদ তাকে ১ বছরের কারাদন্ডাদেশের আদেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমনিতেই কলেজের হাতে গোনা কয়েকজন দুর্নীতিবাজ শিক্ষক ছাড়া অন্যরা উন্মুক্তের পরীক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি এড়িয়ে চলেন। বিশেষ করে ১০ ফেব্রæয়ারি কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পর থেকে।
১৬ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার যথারীতি পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও হলের বাইরে উত্তরপত্রে বই দেখে লেখার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। বিএম শাখার ল্যাব সহকারী শারমিন আক্তারের তত্বাবধানে ওই অপকর্মে চলছিল। সে সময় সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সহকারী কমিশনার রেজওয়ানা নাহিদ। তিনি গুরুতর অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে হল সুপার শামসুল আলম ও শারমিন আক্তারকে অব্যাহতির নির্দেশ দেন। পরে কেন্দ্র সচিব তাদেরকে বাধ্য হয়ে অব্যাহতি দেন। শামসুল আলম মহিলা ডিগ্রী কলেজের দর্শনের প্রভাষক।

শারমিন আক্তারের বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের কথা শহরে আলোচিত হচ্ছে। তিনি বিএম শাখার ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাশ। তিনি কীভাবে উন্মুক্তের ডিগ্রী পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শক থাকতে পারেন? এটা থেকেই অনুমিত হয় যে উন্মুক্তের পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এখানে কত বেশি নয় ছয় শুধু নয়, ছিয়ানব্বই নয় হয়।

এখানেই শেষ নয়, শারমিন আক্তারের কোয়াটার কলেজ সংলগ্ন। তার ঘরেই পরীক্ষার পর বই দেখে ভুয়া পরীক্ষার্থী দিয়ে উত্তরপত্র প্রস্তুত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই সব অপকর্মের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগের তীর কলেজের অধ্যক্ষের তাক করছেন আলমডাঙ্গাবাসী।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস জানান, অনিয়মের জন্য দুই পরিদর্শককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র সচিব তাদেরকে অব্যাহতি দেন। শারমিন আক্তার কক্ষ পরিদর্শক ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব অধ্যক্ষ আশুরা খাতুনের ব্যবহার করা মোবাইল ফোনে রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram