২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ বছর পর কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ১৮, ২০২০
26
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

যুক্তরাষ্ট্রে গত ৭০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম একজন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিচার বিভাগ।

লিসা মন্টগোমারি নামের এই নারী ২০০৪ সালে মিসৌরি রাজ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার পেট কেটে গর্ভস্থ শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যান।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ৮ই ডিসেম্বর ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে এর আগে সবশেষ যে নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল তার নাম বনি হেডি। মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্র বলছে, ১৯৫৩ সালে মিসৌরির একটি গ্যাস চেম্বারে তার সাজা কার্যকর করা হয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছেন, "লিসা মন্টগোমারি ঘৃণ্য অপরাধ করেছেন।"

ট্রাম্প প্রশাসন গত বছরেই জাতীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড পুনরায় শুরু করার কথা ঘোষণা করেছিল।

কে এই লিসা মন্টগোমারি

ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে লিসা মন্টগোমারি একটি বাচ্চা কুকুর কেনার জন্য ক্যানসাস থেকে গাড়ি চালিয়ে ভিকটিম ববি জো স্টিনেটের বাড়িতে আসেন। স্টিনেট তখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

‘ঘরের ভেতরে ঢোকার পরই লিসা মন্টগোমারি স্টিনেটকে আক্রমণ করেন এবং তার গলা টিপে ধরেন। এক পর্যায়ে স্টিনেট জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এর পর রান্নার একটি ছুরি দিয়ে মন্টগোমারি স্টিনেটের তলপেট চিরে ফেলেন। তখন স্টিনেটের জ্ঞান ফিরে আসে। এর পর তাদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয়। মন্টগোমারি তখন স্টিনেটের গলা টিপে শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে হত্যা করেন।’

মন্টগোমারি পরে স্টিনেটের পেট থেকে শিশুটিকে বের করে তাকে নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি বাচ্চাটিকে নিজের বাচ্চা বলে চালানোর চেষ্টা করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হলে একজন বিচারক অপহরণ ও হত্যার দায়ে মন্টগোমারিকে দোষী সাব্যস্ত করেন। সর্বসম্মতিক্রমে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার রায় ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু মন্টগোমারির আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আদালতে যুক্তি দেওয়া হয় যে শৈশবে তাকে পেটানোর কারণে তার মস্তিষ্কের ক্ষতি হওয়ায় তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। একারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া ঠিক হবে না।

ফেডারেল রাজ্য পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড: তফাৎ কী

যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা অনুসারে দুটো পর্যায়ে অপরাধের বিচার হতে পারে। এই বিচার হতে পারে জাতীয় পর্যায়ে ফেডারেল আদালতে অথবা আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজ্যের আদালতে।

কিছু কিছু অপরাধের বিচার সঙ্গে সঙ্গেই ফেডারেল আদালতে শুরু হয়ে যায়। তার মধ্যে রয়েছে মুদ্রা জাল ও চিঠি চুরি করা।

অপরাধের মাত্রা কতো বেশি তার ওপর নির্ভর করেও ফেডারেল আদালতে সেসব অপরাধের বিচার হতে পারে।

১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক রায়ে রাজ্য ও জাতীয় এই দুই পর্যায়েই মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও যতো মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় ছিল সেগুলোও তখন বাতিল করা হয়।

এর চার বছর পর ১৯৭৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের আরেকটি রায়ে রাজ্য পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড পুনরায় কার্যকর করার অনুমতি দেওয়া হয়। ১৯৮৮ সালে সরকার একটি আইন করে- যার ফলে ফেডারেল পর্যায়েও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বৈধ হয়ে যায়।

মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত তথ্য কেন্দ্রের হিসেবে ১৯৮৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ৭৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং এগুলোর মধ্যে মাত্র তিনজনের সাজা কার্যকর করা হয়েছে।

ডিসেম্বর মাসে মন্টগোমারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সেটি হবে জাতীয় পর্যায়ে এবছরের অষ্টম মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নীতির পরিবর্তন কেন

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে দীর্ঘ বিরতির পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার গত বছর এই সাজা পুনরায় কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে।

সেসময় এক বিবৃতিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন: ‘দুটো দলের সরকারের সময়েই ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের পক্ষ থেকে ভয়ানক অপরাধীদের ব্যাপারে মৃত্যুদণ্ড পুনরায় চালু করার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল।

‘জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চায়। অপরাধের শিকার যিনি হন, তিনি এবং তার পরিবারের কাছে আমরা ঋণী থাকি অপরাধীর যে সাজা হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে, বলেন তিনি।  সুত্র –বিবিসি বাংলা।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram