১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় লট বা পিচ হিসেবে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
এপ্রিল ২৬, ২০২১
27
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 


লট অথবা পিচ হিসেবে কিনে দ্বিগুণ /তিনগুণ বেশি দামে কেজি হিসেবে তরমুজ বিক্রি করছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অরমুজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ায় জেলা প্রশাসন ও চুয়াডাঙ্গায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে নামলেও -আলমডাঙ্গায় তার প্রভাব পড়েনি। গতকালও -আলমডাঙ্গায় যথারীতি ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করা হয়েছে।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা -চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীরা তরমুজ কিনছেন একভাবে আর বিক্রি করছেন অন্যভাবে। তারা লট হিসেবে কিংবা পিচ হিসেবে ক্রয় করে কয়েক গুন বেশি দামে কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। এলাকার অসাধু তরমুজ ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রকাশ্যে ক্রেতাদের ঠকিয়ে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষক পর্যায় থেকে পাইকাররা পিস হিসেবে বা ক্ষেত ধরে কিনে আনা তরমুজ খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছেন কেজি দরে। যার ফলে দামে ঘটছে বিস্তর ফাঁরাক। প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৪০/৫০ টাকা পিচ কিনে খুচরা পর্যায়ে তা ৫৫/৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে। ফলে একটা বড় সাইজের তরমুজের দাম ভোক্তা পর্যায়ে প্রকৃত মূল্যের দ্বিগুণ/ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে তিন গুণ পর্যন্ত গুণতে হচ্ছে।


সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার পশুহাটের পাইকারী তরমুজ ব্যবসায়ী বেনু প্রথমে টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকা থেকে ক্ষেত ধরে তরমুজ কিনে এনে কেজি প্রতি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। শহরের রাজ আলী চুয়াডাঙ্গা থেকে পিচ হিসেবে তরমুজ কিনে কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন। চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়িরা বরিশাল থেকে লট হিসেবে কিনে চুয়াডাঙ্গায় পিচ হিসেবে বিক্রি করছেন। অনেকে কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া থেকে পিচ হিসেবে ক্রয় করে এনে ভোক্তা পর্যায়ে কেজি দরে বিক্রি করছেন।


কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ‘তরমুজ আগে আনা হতো চট্টগ্রাম থেকে, তখন দাম কম ছিল। এখন খুলনা, সাতক্ষীরা ও চুয়াডাঙ্গা থেকে আনা হচ্ছে। পরিবহন, শ্রমিক খরচ মিলিয়ে ১ হাজার ৭শ টাকা পড়ে যায় দাম। এরপর লাভ করেন খুচরা বিক্রেতারা।’


ওয়াকিবহাল অনেকে জানান, মোটামুটি ৬ কেজি ওজনের একটি তরমুজ ৪৫/৫০ টাকায় কিনে তা ভোক্তা পর্যায়ে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলেন, ‘কেজিপ্রতি কিছুটা দাম বাড়িয়ে দিলেই একটি তরমুজের দাম বেড়ে যাচ্ছে অনেক। অথচ রমজানের আগে তরমুজ ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে।’


ক্রেতা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কেজিতে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিলেই ছোট তরমুজে ২৫-৩০ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। অথচ, কেজি প্রতি ডবলের বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। “


আলমডাঙ্গা শহরের আব্দুল জব্বার বলেন, ‘রোজার শুরুতে যে তরমুজ কিনেছি ৪০ টাকা কেজি। এখন কিনলাম ৬০ টাকা। একটি ছোট তরমুজ কিনতেই সাড়ে ৩০০ টাকা লাগল। দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। দেখার কেউ নেই।“
বেসরকারি চাকরীজীবি উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘রমজানের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তরমুজের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোক্তা অধিকার শুধুই বুলি মাত্র।“

একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার সর্বত্র। তবে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন মাঠে নেমেছে। গতকাল ২৬ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ফল বাজারে মনিটরিং কার্যক্রম এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে তরমুজের মূল্য বেশি রাখার দায়ে কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮ এর ১৯ ধারায় ৪ টি মামলায় ৪ টি প্রতিষ্ঠান কে মোট ১১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে ও অন্যান্য তরমুজ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।


একই দিনে চুয়াডাঙ্গা শহরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তরমুজ ব্যবসার আড়তে অভিযান পরিচালনা করে সতর্ক করে দিয়েছেন।


ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কিছু তরমুজ ব্যবসায়ীর আড়তে গিয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলেছি। এমনকি দেশে সবচে বেশি যে সব অঞ্চলে তরমুজ উৎপাদন হয়, সেই বরগুনা, বরিশাল অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে দেখেছি যে দাম সর্বত্রই বেশি। তবে আমাদের নজর রাখতে হবে যে ভোক্তা পর্যায়ে যেন তরমুজের দামের ফাঁরাক অবাস্তব না হয়। তাছাড়া, সরকার কয়েকটি কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে, তরমুজের ব্যাপারে আমাদের আইন স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। এ ব্যাপারে কৃষি বিপণন আইন রয়েছে।


আলমডাঙ্গা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী ফলের ক্ষেত্রে কেজিতে ১০ টাকা লাভ করতে পারবেন এমন বিধান রয়েছে। তবে তরমুজের ক্ষেত্রে বিশেষ নির্দেশনা আছে। কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকার বেশি লাভ করতে পারবেন না। আর কেজি বা পিস যেভাবেই কিনবেন সেভাবেই বেচতে হবে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram