ঝিনাইদহে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড দেওয়ার অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ অবৈধ আর্থিক সুবিধা নিয়ে একজনের জমি অন্যের নামে রেকর্ড করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের সাবেক দুই সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। জমি উদ্ধার ও মালিকানা ফিরে পেতে প্রকৃত জমির মালিকরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের হামদহ মৌজার ১৬৮৮ ডিপি খতিয়ানে মাঠ জরিপে যথাক্রমে ৩৭৪৮, ৩৭২৫, ৩৭২৪, ৩৭১৭ ও ৩৭০৮ দাগে সর্বমোট ১০৬.৮৬ শতক জমি রেকর্ড হয় হামদহ এলাকার মরহুম মকবুল হোসেনের নামে। মাঠ জরিপের পর ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসে ৩০ ও ৩১ ধারা শুরু হলে ঝিনাইদহ শহরের ভুটিয়ারগাতি, হামদহ ও কালিকাপুরের কতিপয় ভুমিদস্যু ও প্রভাবশালীরা উক্ত জমির রেকর্ড কেটে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সুত্রমতে তৎকালীন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল ৩৭২৫ দাগে ৩৩ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক কালিকাপুরের আব্দুল গনি জোয়ারদারের ছেলে বাবুল জোয়ারদার নিজ নামে শুনানী কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।
এরমধ্যে ৩৭১৭ দাগের ১৬.৫০ শতক জমি বিনা নোটিশে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমান ভুটিয়ারগাতি গ্রামের আনসার আলী জোয়ারদারের ছেলে আবুল কালাম, আলমগীর কবীর, নজরুল ইসলাম ও ফিরোজ কবীরের নামে রেকর্ড করে দেন। এই মামলায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশ হিসেবে জনৈক বাবু নাকে এক ব্যক্তিকে বিবাদী দেখানো হয়েছে। ২০০৬ সালের ১৭ মে তারিখে ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে ১৭০৫ নং স্মারকে মকবুল হোসেনের যে ১২ জনের নামে ওয়ারেশ কায়েম সাটিফিকেট ¤েওয়া হয়েছে তাতে বাবু নামে কেও নেই। এখন প্রশ্ন উঠেছে কে এই বাবু ? ২০১৫ সালের ১৮ মে তারিখে ৫টি হাল দাগের জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করেন মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন। ৩১ ধারায় ৩৭২৫ সহ বেশ কিছু দাগের জমি ফিরে পায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন। একই ভাবে ৩৭০৮ দাগের ১৬.৩৭ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক কেটে হামদহ এলাকার শাহিনুরের স্ত্রী স্মৃতি খাতুন ও ওলিয়ারের স্ত্রী রিনা খাতুনের নামে রেকর্ড করে দেন, যার বাটা দাগ ৩৮১৬ ও ৩৮১৭।
সবচে জালিয়াতির কান্ড ঘটানো হয়েছে ৩৭২১ দাগের ৩.৭৫ শতক জমি নিয়ে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে এই দাগের জমি জনৈক জাবেদ আলী মাঠ জরিপের আগে ৩ জনের কাছে বিক্রি করে যান। আর খাসে থাকে ৩.৭৫ শতক জমি। জবেদ আলীর মৃত্যুর পর তার ওয়ারেশগন হাল ৩৭২১ দাগ থেকে উক্ত জমি রিনা ও খালেদার কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু ৩১ ধারায় রিনা ও খালেদার জমির রেকর্ড দেওয়া হচ্ছে মকবুল হোসেনের হাল ২১০৮ দাগ থেকে ৬ শতক। ৩১ ধারায় মকবুল হোসেনের ওয়ারেশগন উক্ত জমির রেকর্ড সংশোধনের আবেদন করলে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মোঃ মতিয়ার রহমান ও বায়োজিদ মোস্তফা সব কেসগুলো আমলে নিয়ে নিস্পত্তি করলেও একটি কেস ০৩/০৯/২০১৫ তারিখে ভুমি মন্ত্রনায়ের চিঠির বরাত দিয়ে খারজি করে দেন। অথচ মকবুল হোসেনের পক্ষে রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয় ১৮/০৬/২০১৫। এদিকে মকবুল হোসেনের ওয়ারেশ হিসেবে তার সন্তান নজরুল ইসলাম ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট অফিসে ন্যায় বিচার পাবেন না আঁচ করতে পেরে আগেই তার মামলাগুলো যশোরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে স্থানান্তর করার জন্য আবেদন করেন। একই সাথে তিনি দুদকে আবেদন করেন।
বিষয়টি ব্যাপক ভাবে জানাজানি হয়ে পড়লে সে সময় জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা এমডি আব্দুস সালাম জবাব চেয়ে ১০৭১ স্মারকে ২০১৭ সালের ১১ সেপ্টম্বর তারেিখ পত্র দেন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মতিয়ার রহমানের কাছে। নোটিশ দেন শুনানীর জন্য। শুনানীতে উভয় পক্ষ উপস্থিত হন। তবে রহস্যজনক কারণে শুনানীও করা হয়না। এদিকে সেটেলমেন্ট অফিসার মতিয়ার রহমান জোনাল অফিসের চিঠির জবাব না দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেন। মকবুল হোসেনের জমি কেটে অন্যের নামে দিয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করে দিয়ে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যাবহার ও সেচ্ছেচারিতার নজীর স্থাপন করেন। এই মহাজালিয়াতির মাধ্যমে একজনের জমি অন্যজনের নামে রেকর্ড করিয়ে দেওয়া হলেও ওই দুই সেটেলমেন্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থায় নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে তৎকালীন ঝিনাইদহ সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (বর্তমান অবসরে) মোস্তফা কামাল মুঠোফোনে জানান, আমিসহ অন্যান্য অফিসারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। সঠিক কাগজপত্র দেখেই আমরা রায় দিয়েছি। এখানে কোন স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি করা হয়নি।