সিজারের সময় কেটে গেল নবজাতকের পেটঃ ক্লিনিক বন্ধে করে দিলেন সিভিল সার্জন

আলমডাঙ্গায় ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টারে প্রসূতিকে সিজার করার সময় নাবজাতকের পেট কেটে নাড়িভুড়ি বের হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক।
জানা গেছে, শুক্রবার (১ জানুয়ারি) সকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার মাজু গ্রামের সাগর আলীর স্ত্রী রুমা খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। পরে তাকে আলমডাঙ্গার ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরে প্রসূতির সিজার করা হয়। ইউনাইটেড মেডিকেল সেন্টার প্রাইভেট হাসপাতালে প্রসূতিকে সিজার অপারেশন করার সময় মায়ের গর্ভের অভ্যন্তরে থাকা শিশুর পেট কেটে ফেলা হয়। নাড়িভুড়ি বের হয়ে আসা ভূমিষ্ঠ শিশুটির পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু ঘটে।
প্রসূতির স্বামী মাজু গ্রামের সাগর আলীর অভিযোগ, মেডিকেল সেন্টার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি ছিল একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনকে দিয়ে সিজার করাবেন। অথচ প্রতিষ্ঠানের মালিক উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক আনাড়ি হাতে নিজেই সিজার করেছেন। ডাক্তার সেজে সিজার করতে গিয়েই তিনি শিশুটির পেট কেটে ফেলেন। নবজাতকের পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ওই অবস্থায় আমার সন্তানকে তারা গোপন কক্ষে তিন ঘণ্টা রেখে দেয়। অনেক আকুতির পর নবজাতককে মায়ের কাছে দেয়া হয়। রাতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আমার সন্তানকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করে।
সেখানে নেয়া হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন- আমার সন্তানকে কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব নয়। পরে তাকে বাড়িতে নিয়ে যায়। একদিন পর শনিবার সন্ধ্যায় আমার সন্তান মারা গেছে। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রকৃত চিকিৎসকের হাতে আমার সন্তানের অনাকাঙ্খিত মৃত্যু হলে কথা ছিল। লোভের বসবর্তী হয়ে যারা চিকিতসক না, তাদের দিয়ে কেন অপারেশন করা হল। জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হল। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি- সিজারের সময় পেট কাটা হয়নি। জন্মের সময় ত্রুটির কারণে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ইউনাইটেড ক্লিনিক সেন্টারের মালিক উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক সাংবাদিকদের নিকট প্রথমে ডাক্তার বিপাশা অপারেশন করেছেন বলে দাবি করেন। যা ছিল পুরোদস্তুর মিথ্যা। পরে গতকাল বলেছেন, ‘আমি নয়, প্রসূতির সিজার করেছেন ডাক্তার আবু সালেহ ইমরান, ও ডাক্তার নজরুল । জন্মের সময় ত্রুটির কারণে শিশুর নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে আসে। এটা ডাক্তারের ত্রুটি নয়। এখানে কারও কিছু করার ছিল না।’
এ ঘটনায় মারা যাওয়া শিশুর পিতা বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গতকাল রবিবার লাশ ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
এ নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল ৩ জানুয়ারি সকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কান্তি দাস ইউনাইটেড ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। তাছাড়া, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সাঈদ আগামি ৫ জানুয়ারি ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। ক্লিনিকে কয়েক জন রোগি থাকায় তিনি ২ দিন সময় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অবশ্য বিকেলে আসেন সিভিল সার্জন ডাক্তার এস এম মারুফ হাসান। তিনি গতকালই ক্লিনিকটি বন্ধের নির্দেশ দেন।
এদিকে, আলমডাঙ্গা থানার এস আই সঞ্জীব কুমার মামলাটি তদন্ত করছেন। তিনি জানান, ক্লিনিক মালিক নাজমুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দিতে গিয়ে ডাক্তার বিপাশার নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে উল্লেখ করেছেন। অথচ, ডাক্তার বিপাশার ওই ক্লিনিকে কিংবা ওই অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ডাক্তার বিপাশাও বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করা শিশুটির ছাড়পত্রে উল্লেখ রয়েছে ডাক্তার নজরুল ইসলাম ও ডাক্তার ইমরানের নাম। কিন্তু তদন্তকালে জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুজনেই ওই অপারেশনে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ পুরোটাই জালিয়াতি। ক্লিনিকের কর্মচারিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে অপারেশনটি ক্লিনিক মালিক মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট নাজমুল ইসলাম ও ক্লিনিকে কর্মরত তানিয়া যার চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, তিনি করেছেন। নাজমুল ইসলাম ও তানিয়া দুজনই বর্তমানে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গায় মোট ১৬টি প্রাইভেট ক্লিনিক রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র দুটিতে ছাড়া কোন এমবিবিএস চিকিৎসক কিংবা প্রকৃত নার্স নেই। বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ ধরে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে।