আলমডাঙ্গার বিজ্ঞান মেলা হয়ে উঠে অপেশাদার ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা
আলমডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হল দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে ৬ ডিসেম্বর রবিবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হল। মেলায় আলমডাঙ্গা উপজেলার ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থিরা তাদের প্রজেক্ট প্রদর্শন করেন।
আলমডাঙ্গার এরশাদপুর একাডেমির শিক্ষার্থীরা বাতাস থেকে বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র আবিষ্কার করার দাবি করেছেন। প্রাকৃতিক বাতাস ব্যবহার করে তারা টারবাইনের সাহায্যে বিদ্যুত তৈরি করছেন। সেই বিদ্যুতের সাহায্যে ড্যামসহ প্রযুক্তিতে কৃষি সেচযন্ত্র চালনা করছেন। এ প্রকল্প সম্পর্কে বলতে গিয়ে এরশাদপুর একাডেমির ১০ম শ্রেণির ছাত্রি মায়া খাতুন জানান, আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপদজনকভাবে নিম্নগামী হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন ছাড়াই ফসলে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে।
আল ইকরা ক্যাডেট একাডেমির শিক্ষার্থিরা নিয়ে এসেছেন সবুজ প্রযুক্তির ইটভাটা প্রজেক্ট। পরিবেশবান্ধব এ ইটভাটার চিমনির উৎসরিত কালো ধোয়া সংগ্রহ করে তা কার্বন হিসেবে ব্যবহার করছে। অবশিষ্ট কার্বন কার্বন- ডাই অক্সাইড গ্যাস ও অ্যামোনিয়া দিয়ে ইউরিয়া সার তৈরি করা হবে।
মীর সামসুল ইসলাম পলিটেক ইন্সটিটিউট শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পরিবেশ দুষণরোধ করতে বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক প্রজেক্ট নিয়ে এসেছেন।
বয়সে ছোট হলেও মেধায় বড় তাদের উদ্ভাবিত বৃহত বৃহত প্রজেক্ট নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছেন উপজেলার আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রী কলেজ, আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রী কলেজ, খাসকররা ডিগ্রী কলেজ, আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, ব্রাইট মডেল স্কুল, বেলগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাদল স্মৃতি একাডেমি, হারদী মীর শামসুদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাটবোয়ালিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আলমডাঙ্গা সিদ্দীকীয়া আলিম মাদ্রাসা, শ্যামপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসাসহ ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থিরা।
আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ বিজ্ঞান মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেন আলমডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন।
উদ্বোধনি বক্তব্যে তিনি বলেন, কোরেয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর ৫০ বছর পূর্বে উন্নয়নের দিক দিয়ে আমাদের সম পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল ও দক্ষ ব্যবহার করে আজ তাদের সাফল্য আকাশ্চুম্বী। আর আমাদের দেশ উৎপাদন বিমুখ পরিকল্পনার জন্য পিছিয়ে রয়েছে। যখন পাকিস্তান উন্নত বিশ্ব থেকে গম সাহায্য পেয়ে খুশি থেকেছে, সে সময় ইন্ডিয়া উন্নত বিশ্বের নিকট থেকে উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য নিয়েছে। এখন ভারতে আই আই টির মত বিশ্ব নন্দিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশ্ব দরবারে ভারতের পতাকা সর্বোচ্চ সন্মান অর্জন করে চলেছে। দেশ স্বাধীনের সময় যে ভারত ভাল মানের বেøডও তৈরি করতে পারতো না, সে ভারত এখন চাঁদে রকেট পাটিয়ে পানি অনুসন্ধ্যান করছে। তাই বঙ্গবন্ধুর কন্যার সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই সুযোগ সকলকে কাজে লাগাতে হবে।
কলেজিয়েট স্কুলের উপাধ্যক্ষ শামীম রেজার উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান অ্যাড সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নীতু, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার সোহেল রানা, আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ কৃষিবীদ গোলাম ছরোয়ার মিঠু, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী, অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ইমরুল হক, আলমডাঙ্গা মহিলা কলেজ অধ্যক্ষ আশুরা খাতুন পাতা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামসুজ্জোহা, সমবায় অফিসার মুজিবুর রহমান, আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম খান, আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান।
সভাপতির বক্তেব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী বলেন, শিক্ষার্থিদের বিজ্ঞান মনস্ক করে গড়ে তুলতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস রয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে বিশ্বে নেতৃত্বের অবস্থানে যেতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানার্জনের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। সে কারণে বর্তমান সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।