ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি

আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।
ভাষণে, একই দিনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনেরও ঘোষণা দিয়েছেন সিইসি। ২০২৪ সালের পাঁচই অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন, শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো নির্বাচন কমিশন।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সিইসি যেমন এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন, তেমনি ভোট আয়োজনে ইসির সামনে নানা চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন। সব রাজনৈতিক দল, প্রার্থীদের ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি। সেই সাথে ভোটারদেরও নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা, আর গণভোটের ব্যালট হবে গোলাপি। এবার নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায়, ভোটগ্রহণের সময় একঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা করা হয়েছে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের পার্থক্য থাকে। তবে এবার সেই সময় বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই মাস।
যে চারটি বিষয়ের ওপর জাতীয় নির্বাচনের দিনে হবে গণভোট এর আগে বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন। পরে ওই দিনই জাতির উদ্দেশে সিইসি'র ভাষণ রেকর্ড করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার।
যা থাকছে নির্বাচনের তফসিলে : ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৯শে ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই – ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৪ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপিলের তারিখ আগামী ৬ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত। মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত; আপিল নিষ্পত্তি ১২ জানুয়ারি রোজ সোমবার থেকে ১৮ই জানুয়ারি।
রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবে ২০শে জানুয়ারি পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১শে জানুয়ারি, ২০২৬। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে ২২ জানুয়ারি থেকে চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
তফসিল ঘোষণা শেষে সিইসি এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেন, "নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সকল রাজনৈতিক দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীসহ ভোটারদের আন্তরিক অংশগ্রহণ ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি"।
তিনি বলেন, "সকলের প্রতি আহ্বান, নির্বাচন ও গণভোট সফল করে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখুন"। ভাষণে যা বললেন সিইসি: সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ। তফসিল ঘোষণা উপলক্ষে দেওয়া এই ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে ও এর প্রেক্ষাপটে বর্তমান নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার হচ্ছে একটি সুষ্টু ও সুন্দর নির্বাচন। যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। বিশ্ব দরবারে ভাবমূর্তি উজ্জল করবে"।
এই নির্বাচনে বর্তমান কমিশনের সামনে নানা চ্যালেঞ্জের কথা যেমন তুলে ধরেছেন, তেমন সুষ্ঠু ভোটে নির্বাচন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল ও ভোটারদের প্রতি সহযোগিতা চেয়েছেন সিইসি। এসময় সিইসি মি. উদ্দিন বলেন, "প্রথম প্রকৃত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কঙ্ক্ষিত সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্তের নির্বাচন এটি। নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে, এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা"। "দ্বিতীয়ত, সকল রাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সক্ষমতা প্রমাণ করে ভাবমূর্তি পূনরুদ্ধার করে অনন্য সুযোগ। তৃতীয়ত, দীর্ঘ গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের পর দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলসমূহের মাঝে সৌহাদ্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতার ধারা প্রবর্তনের দাবি রাখে এই নির্বাচন," যোগ করেন সিইসি।
প্রবাসীদের জন্য ভোট চালুর প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, "চতুর্থত প্রায় অকার্যকর পোস্টাল ভোট ব্যবস্থাকে পরিমার্জন করে এই নির্বাচনে একটি কার্যকরী রূপ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম চালিকা শক্তি আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের প্রথমবারের মতো ভোটের আয়োজন করে তাদের ভোটের আওতায় আনা হচ্ছে"।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের আহ্বান জানান সিইসি।












