৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় মুফতি আমির হামজার তাফসির মাহফিলে সাংবাদিক নিষেধাজ্ঞা।। সমালোচনার ঝড়

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
নভেম্বর ৬, ২০২৫
217
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
ছবি : 

আলমডাঙ্গায় মুফতি আমির হামজার তাফসির মাহফিলে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করার ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ৪১তম তাফসিরুল কুরআন মাহফিল-র শেষ দিনে সোমবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে।

ওই দিন প্রধান তাফসিরকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমির হামজা। তাঁর আলোচ্য সূরা ছিল সূরা তওবা, আয়াত নম্বর ১১১—যেখানে আত্মত্যাগ ও জিহাদের চেতনা নিয়ে ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার কথা ছিল।

কিন্তু রাত প্রায় ৯টার দিকে হঠাৎই মাহফিলস্থ মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়—“কেউ মোবাইল বা ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ বা সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না।” ঘোষণার পর উপস্থিত সংবাদকর্মীরা হতবাক হয়ে যান এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্থান ত্যাগ করেন।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,

“মুফতি আমির হামজার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার না করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সতর্ক করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করা উপস্থাপকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, যা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়।”

তিনি ঘটনাটিকে “দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত” বলে মন্তব্য করেন।

তবে মুফতি আমির হামজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ঘটনাটি সামাজিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলেছেন—একটি ধর্মীয় মাহফিলে সাংবাদিক নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন কী? সেখানে এমন কী বলা হচ্ছিল যা জনসমক্ষে আসা অনুচিত?

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা না এলেও স্থানীয় সূত্রের দাবি, মাহফিলে রাজনৈতিক ইঙ্গিত, বিতর্ক উস্কে দেয় এমন বক্তব্য বা নির্বাচনী বক্তব্য যা প্রচার হোক এমনটা চায় না জামায়াত। —এ ধরণের আশঙ্কা থেকেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তথ্য অনুযায়ী, মুফতি আমির হামজা গত মে মাসে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের এক বৈঠকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হন। তিনি বর্তমানে জামায়াতের ওলামা শাখায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত।

ধর্মীয় বক্তা হিসেবে বহু বছর ধরে খ্যাত এই আলেমের বক্তৃতায় ইসলামি মূল্যবোধ ও সামাজিক সংস্কারের বার্তা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর বেশ কিছু মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এক অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র ছিলেন, এবং ওই বিভাগের পরিবেশ নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছিলেন—যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন “ভিত্তিহীন ও মনগড়া” বলে জানিয়েছে।

এছাড়া, অন্য এক মাহফিলে তিনি বলেন, “নবী শব্দের অর্থ সংবাদবাহক—তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সাংবাদিক।”

তাঁর এই মন্তব্য দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং পরে তিনি ক্ষমা-প্রার্থনার ভিডিও প্রকাশ করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর এমন ধারাবাহিক বিতর্কিত ও অনির্ভরযোগ্য মন্তব্য ধর্মীয় আবেগকে অযথা উত্তেজিত করছে এবং সমাজে বিভাজনের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।

ফলে আলমডাঙ্গার সাম্প্রতিক এই মাহফিলে সাংবাদিক নিষেধাজ্ঞা—বিতর্কিত বক্তার নতুন অধ্যায় হয়ে উঠেছে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram