আলমডাঙ্গায় বিসিক শিল্পনগরী গঠনে সম্ভাবনা ও অন্তরায়

রহমান মুকুল: চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় শহর আলমডাঙ্গা। ভৌগোলিক অবস্থান, সড়ক ও রেলপথের সহজগম্যতা এবং কৃষিপণ্যভিত্তিক অর্থনীতির কারণে এখানে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার প্রকৃষ্ট সুযোগ রয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে গেলেও এই শহরটি এখনো শিল্প অবকাঠামোর বাইরে পড়ে আছে।

>< আলমডাঙ্গার ভৌগোলিক সুবিধা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা:
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রবেশদ্বার বলা হয় আলমডাঙ্গাকে। আলমডাঙ্গা ছাড়াও এ মফস্বল শহরের উপর নির্ভরশীল মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলা, ইবি থানা ও ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলা। বাণিজ্যসফল এ শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক ও রেললাইন। ঢাকা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া—সব শহরের সঙ্গে এখানে রয়েছে সরাসরি ট্রেন ও বাস যোগাযোগ।
এছাড়াও শহরের পূর্বাংশে রয়েছে কুমার নদ, যদিও তা বর্তমানে নাব্য হারিয়েছে। নদী পাড়েই বিসিক শিল্পনগরী গঠনের জন্য উপযুক্ত উঁচু জমি রয়েছে। উপযুক্ত স্থান রয়েছে আলমডাঙ্গা- চুয়াডাঙ্গা সড়কের দিকেও।
>< স্থানীয় অর্থনীতি ও শিল্প সম্ভাবনা:
আলমডাঙ্গা কৃষিপ্রধান এলাকা হলেও, এখানে প্রতিদিন কাঁচা পাট, ধান, ভুট্টা, চাল, গম, সবজি, আম, কলা ইত্যাদি বিপুল পরিমাণে বাজারজাত হয়। এগুলোর প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।
পাশাপাশি এখানে তাঁতশিল্প, হস্তশিল্প, গ্রামীণ পোল্ট্রি খামার, মুরগির খাদ্য প্রস্তুত এবং কুটিরভিত্তিক পোশাক শিল্পও বাড়ছে। বিসিক শিল্পনগরী হলে এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শিল্প ভিত্তি পাবে এবং বহু মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।
>< বিসিক শিল্পনগরী গঠনের প্রয়োজনীয় শর্তসমূহ
১. কয়েক শ' একর খালি জমি, যা বন্যা ও জলাবদ্ধতামুক্ত। ২. ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা: শহরের সঙ্গে সংযুক্ত সড়ক ও রেলপথ। ৩. বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সংযোগের সুযোগ। ৪. দক্ষ শ্রমিক এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিবেশ। ৫. স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত সহযোগিতা।
>< আলমডাঙ্গায় বিসিক শিল্পনগরী গঠনে অন্তরায়:
১. উপযুক্ত জমির সংকট: শহরের উপকণ্ঠে সরকারি খাসজমি থাকলেও তা অনেকাংশে দখল বা বিরোধপূর্ণ। ২. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক অনাগ্রহ: বহু বছর ধরে স্থানীয়ভাবে দাবি উঠলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। ৩. নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব: জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে আলমডাঙ্গার নাম বিসিকের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার তালিকায় নেই। ৪. অর্থ বরাদ্দ না থাকা: বিসিকের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় বাজেট প্রয়োজন হয়, যা এখনো এখানে বরাদ্দ হয়নি। ৫. জনসচেতনতার ঘাটতি: স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজ পর্যাপ্ত সক্রিয় নয়।
>< সমাধানের পথ:
১. সরকারি খাসজমি চিহ্নিত ও অধিগ্রহণ: কুমার নদের ধারে পৌর শহরের পাশেই বিসিকের জন্য প্রায় ৩০ একরের জমি এখনো অব্যবহৃত রয়েছে। একে দ্রুত বরাদ্দ দিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে উদ্যোগ থাকতে হবে।
২. উদ্যোক্তা প্ল্যাটফর্ম তৈরি: স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নিয়ে চেম্বার অব কমার্স বা বিজনেস কাউন্সিল গঠন করে একযোগে দাবি তোলা জরুরি।
৩. রাজনৈতিক সদিচ্ছা সৃষ্টি: স্থানীয় এমপি ও উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে উন্নয়ন বোর্ড ও বিসিক কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি-পত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি ও সভা: স্কুল, কলেজ, বাজার, ব্যবসায়ীদের সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরে আলোচনা সভা করে দাবি জনগণের মুখে তুলে ধরলে প্রশাসন ও মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দেবে।
উপসংহার:
আলমডাঙ্গা শুধু কৃষিনির্ভর নয়, বরং একটি সম্ভাবনাময় শিল্প শহরও হতে পারে বটে। এখানকার মানুষের কর্মক্ষমতা, বাজার ব্যবস্থা ও যোগাযোগ এমন যে একটি বিসিক শিল্পনগরী পুরো অঞ্চলকে বদলে দিতে পারে। তাই সময় এসেছে দাবি না করে, প্রয়োজনে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই দাবিকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় স্থান দেওয়ার।












