১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাতি সরালি ও দশ ছানার জীবন বাঁচানোর নায়ক আলমডাঙ্গার কতিপয় তরুণ

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জুলাই ১, ২০২৫
68
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

রহমান মুকুল: একটা মায়ের কাঁপা কণ্ঠে ছিল না কোনো ভাষা, ছিল শুধুই বাঁচার আকুতি। আর ছিল ফুটফুটে দশটি ছানার ক্ষুধার্ত ডাক—সে ডাক যে শুধুই শব্দ ছিল না, ছিল অমোঘ এক টান, এক তীব্র ভালোবাসার নীরব অনুরোধ। সেই ডাকেই জেগে উঠল আলমডাঙ্গার প্রকৃতি-পাগল কিছু তরুণ।

সেই ডাকেই থমকে গেল হানাদারের হাত, ফিরে এল জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত স্পন্দন। পেছনের গল্পটা এক বিকেলের। ২৭ জুন, শুক্রবার।  চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নওদা দুর্গাপুর গ্রামের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া কুমার নদ আর ধানক্ষেতের ফাঁক গলে হাঁটছিল এক মা পাতি সরালি। পেছনে তার ছায়ার মতো ছুটে চলা দশটি ছানা। এ দৃশ্য দূর থেকে দেখছিলেন নওদা দূর্গাপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম। তিনি লোভ সংবরণ না করতে পেরে ঘাতকের মত নিরবে মা সরালির পিছু নেন। ধরে ফেলেন ওই মা হাঁসটিকে ও তার ফুটফুটে ১০ সন্তানদের।

কিন্তু প্রকৃতি যেন সব সময় চুপ থাকে না। গ্রামেরই এক তরুণ সেই দৃশ্য দেখে ফোন করলেন ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ যুব সংস্থা, আলমডাঙ্গা’তে। আর তাতেই বদলে গেল দৃশ্যপট। সেই ফোন পাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই, গাঁয়ের মেঠোপথে শহর থেকে ছুটে এল একদল তরুণ।

তাদের চোখে মায়া, কাঁধে দায়িত্ব। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন সহ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত রহমান এবং দপ্তর সম্পাদক আল রাব্বি।

তারা মায়ের মর্ম বুঝলেন। ছানাদের ঘুমহীন আর্ত চাহনি দেখলেন। স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করলেন মা পাতি সরালি ও তার দশটি ছানা। তারপর তুলে দিলেন প্রকৃতির কোলে— এক সবুজ, নিরাপদ, শান্ত আশ্রয়ে। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেননি তারা। গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেন সচেতনতার লিফলেট। বলার চেষ্টা করেন— প্রকৃতি নিঃস্ব হয়ে গেলে, মানুষও আর নিরাপদ থাকে না। বন্যপ্রাণী ধরা, রাখা, বিক্রি করা কিংবা কোথাও নিয়ে যাওয়া— আইনত অপরাধ।

এই পাখিরাও আমাদের মতোই এই মাটির পৃথিবীর সন্তান। সেদিন নওদা দুর্গাপুরে মানুষ শুধু একটা মা হাঁসকে বাঁচায়নি, তারা বাঁচিয়েছে মানবতার স্পন্দন। সেদিন ছানাগুলো শুধু মা পেল না, আমরা পেলাম একটা বার্তা— জীবন বড়, যত ছোটই হোক সে প্রাণ।

পাখি কেবল আকাশের অলংকার নয়— তারা আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার অন্যতম বাহক। পাতি সরালির মতো জলচর পাখিরা পানির পোকা-মাকড় খেয়ে জলাশয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। বনচর পাখিরা কীটপতঙ্গ খেয়ে কৃষকের ক্ষতি কমায়। পাখির ডাকে ভোর হয়, পাখির ডানায় ভেসে আসে ঋতু পরিবর্তনের বার্তা। পাখি নেই মানে প্রকৃতির বেসুরো তানে। পাখি হারিয়ে যাচ্ছে মানে মানুষ হারাচ্ছে তার নিজস্ব সৌন্দর্য, ছন্দ আর জীবনীশক্তি।

পাখিদের রক্ষা করা মানে শুধু প্রাণ বাঁচানো নয়— এটা আমাদের ভবিষ্যৎ, কৃষি, জলবায়ু, এমনকি সংস্কৃতি বাঁচানো।  এ মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে আলমডাঙ্গা  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ যুব সংস্থা — প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে নিবেদিত একটি তরুণপ্রাণ সংগঠন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে বন্যপ্রাণী উদ্ধার, সচেতনতা সৃষ্টি, গাছ রোপণ ও পরিবেশবিষয়ক লিফলেট প্রচারের মাধ্যমে তারা কাজ করে চলেছে। এ সংগঠনের মূল বার্তা— “প্রকৃতিকে ভালোবাসো, সে তোমায় বাঁচাবে।” এই সংগঠন নিয়মিত স্কুল-কলেজ পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালা এবং শিক্ষামূলক আয়োজন করে থাকে।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram