আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবসে প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণে আলমডাঙ্গার তরুণদের দীপ্ত অঙ্গীকার

জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। অথচ সেই প্রকৃতিই আজ মানুষের অসচেতনতা, ভোগবাদী মানসিকতা ও নগরায়নের চাপের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে ‘পরিকল্পনার অংশ হোন’—এই আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে আলমডাঙ্গায় পালিত হলো আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস '২৫।
আলমডাঙ্গা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ যুব সংস্থা ও চুয়াডাঙ্গার পানকৌড়ি কনজারভেশন ক্লাবের যৌথ আয়োজনে ২২ মে (বুধবার) আলমডাঙ্গা শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ থেকে শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। হাতে ছিল বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব বার্তাসংবলিত ফেস্টুন, গলায় ছিল গাছের পাতা ও প্রাণীর ছবি আঁকা কার্ডবোর্ড। শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে।
স্বাধীনতা স্তম্ভের পথসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশীষ কুমার বসু। তিনি বলেন, “জীববৈচিত্র্য শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এটি মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে গভীরভাবে প্রোথিত। তরুণরা যদি এখন থেকেই সচেতন না হয়, ভবিষ্যৎ পৃথিবী আরও সংকটময় হয়ে উঠবে।”
পথসভায় আরও বক্তব্য দেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হক, উপজেলা বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন, আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আমিরুল ইসলাম জয়, পানকৌড়ি কনজারভেশন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বখতিয়ার হামিদ এবং আলমডাঙ্গা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ যুব সংস্থার সভাপতি সাঈদ হিরণ।
বক্তারা বলেন, প্রকৃতি কেবল উপভোগের বস্তু নয়। এটি রক্ষা করা আমাদের নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্ব। তারা সবাইকে নিজেদের অবস্থান থেকে পরিবেশবান্ধব আচরণ করার আহ্বান জানান।
দিবসের শেষভাগে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবীরা আলমডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের শতবর্ষী কাঠগোলাপ ও পামগাছে পরিচয়পত্র ও ইতিহাসভিত্তিক নামফলক স্থাপন করেন। এতে গাছগুলোর ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক গুরুত্ব ও বয়স সম্পর্কে সাধারণ মানুষের জানার সুযোগ তৈরি হলো।
এছাড়াও, আলমডাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, গল্প ও প্রশ্নোত্তর পর্বের মাধ্যমে শিশুদের মনে প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তোলা হয়।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, তারা শুধু দিবসকেন্দ্রিক কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। বরং বছরের প্রতিটি দিনকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লড়াইয়ের অংশ হিসেবে দেখতে চান।
এই আয়োজন প্রমাণ করে, ব্যবসাকেন্দ্রিক ছোট্ট মফস্বল শহর আলমডাঙ্গার পরিবেশপ্রেমী তরুণরাও জাতীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে ভাবার মতো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। জীবনের জন্য প্রকৃতি—এই উপলব্ধিই হোক আমাদের সকলের নৈতিক সংকল্প। আয়োজকরা এমন প্রত্যাশা বুকে ধারণা করেন।