১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জীববৈচিত্র সংরক্ষণ যুব সংস্থা ও ইউএনও’র মানবিক হস্তক্ষেপে রক্ষা পেল মেছোবিড়াল ও তার বাচ্চারা

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
মে ১৮, ২০২৫
102
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গা উপজেলার ডামোস গ্রামের মাঠে এক হৃদয়গ্রাহী ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রকৃতি ও প্রাণ সংরক্ষণের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ যুব সংস্থা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যকরী ও মানবিক হস্তক্ষেপ।


ডামোস গ্রামের মাঠে পানি নিষ্কাশনের একটি অপ্রশস্ত পাইপের ভেতর আশ্রয় নিয়েছিল একটি মেছোবিড়াল ও তার সদ্যজাত বাচ্চাগুলো। প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত লাজুক এবং ভয়পাওয়া এই প্রাণীটি গ্রামবাসীর অসচেতনতা ও কুসংস্কারের শিকার হতে যাচ্ছিল। অনেকে ভেবেছিল এটি ক্ষতিকর বা অশুভ প্রাণী, ফলে ১৬ মে সকালে ধীরে ধীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামজুড়ে।


সংবাদ পেয়ে ঠিক এই সময়ই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন জীববৈচিত্র সংরক্ষণ যুব সংস্থার কতিপয় সদস্য। তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাণীটির সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝান ও সচেতনতা তৈরি করেন। তবে পরিস্থিতি যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত দিকেমোড় না নেয়, সে জন্য দ্রæতই বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে মেছোবিড়াল ও তার বাচ্চাগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নির্দেশ দেন স্থানীয় গ্রাম পুলিশকে, তারা যেন পাহারার দায়িত্ব পালন করেন যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রাণীগুলোর ক্ষতি না হয়।


এই মানবিক ও দূরদর্শী পদক্ষেপ শুধু একটি মেছোবিড়াল ও তার বাচ্চাদের জীবন বাঁচিয়েছে তা নয়, বরং গ্রামীণ জনমানসে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছে প্রকৃতি ও প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি এবং সহাবস্থানের মনোভাব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গত ১৬ মে গ্রামপুলিশ মেছোবিড়াল ও বাচ্চাগুলিকে পাহারা দেন। স্থানীয় বনবিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন আজ ১৭ মে থেকে নিরাপত্তা দিতে ও বাচ্চাসহ মেছোবিড়ালটিকে উপযুক্ত পরিবেশে অভিযোজনের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ১৬ মে দিনগত রাতেই মেছোবিড়াল বাচ্চাদের নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। সম্ভবত ভয় পেয়ে এমনটি করে থাকবে।


পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এমন সম্মিলিত প্রয়াস বর্তমান প্রজন্মের জন্য যেমন শিক্ষণীয়, তেমনি ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য এক আশার আলো।


প্রকৃতি বাঁচলে আমরাও বাঁচি। ডামোস গ্রামের এই ছোট্ট ঘটনাই যেন সে সত্যকে নতুন করে মনে করিয়ে দেয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, “প্রাণিকুলের প্রতিটি সদস্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেছোবিড়াল পরিবেশবান্ধব একটি প্রাণী, একে মেরে ফেলা নয়, বরং সংরক্ষণ করাই আমাদের দায়িত্ব। ডামোস গ্রামে ঘটনার পর আমরা সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে প্রাণীগুলো নিরাপদ থাকে। স্থানীয় গ্রাম পুলিশকে পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আর গ্রামবাসীকেও সচেতন করা হচ্ছে। প্রশাসন সর্বদা মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতির সুরক্ষায়ও কাজ করে যাবে।”


জীববৈচিত্র সংরক্ষণ যুব সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরাফাত বলেন, “খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং বুঝতে পারি যে মানুষের কুসংস্কার ও ভয়ের কারণে প্রাণীটির জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা গ্রামবাসীকে বুঝিয়েছি যে মেছোবিড়াল ক্ষতিকর নয়, বরং পরিবেশের জন্য উপকারী। ইউএনও স্যারের দ্রæত পদক্ষেপে প্রাণীগুলো আজ নিরাপদ। আমরা চাই, ভবিষ্যতে মানুষ যেন আরও সচেতন হয় ও এই ধরণের বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলোর সুরক্ষায় এগিয়ে আসে।”

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram