জুয়ায় হেরে স্ত্রীকে দিলো বাজি: সভার মাঝে খুলে নিলো তার শাড়ি

জুয়ায় হেরে স্ত্রীকে দিলো বাজি: সভার মাঝে খুলে নিলো তার শাড়ি। ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারত এ বিবৃত একটি ভয়াবহ ও হৃদয়বিদারক ঘটনা—ধ্রুপদীর বস্ত্র হরণ—আজও নারী সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তার প্রশ্নে যুগান্তকারী প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পাণ্ডবরা জুয়ার খেলায় কৌরবদের কাছে পরাজিত হন। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র দুর্যোধনের প্ররোচনায় পাণ্ডবদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা প্রথমে নিজেদের রাজ্য, ধন-সম্পদ, এমনকি নিজেদেরকেও বাজি রেখে হারায়। অবশেষে যুধিষ্ঠির স্ত্রী দ্রৌপদীকেও বাজি রেখে হেরে যান। সেই জয়ের উন্মাদনায় দুর্যোধন ও দুঃশাসন সভা-মধ্যে দ্রৌপদীকে টেনে এনে তার শাড়ি খুলে তাকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে।
একজন রাণী, একজন স্ত্রী, একজন নারীকে রাজসভায় প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করার এ দৃশ্য যেন মানব সভ্যতার লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে ইতিহাসে গেঁথে আছে। দ্রৌপদী কাঁদছিলেন, চিৎকার করে প্রশ্ন করছিলেন—“যে নিজেই পরাজিত, সে কিভাবে আমাকে বাজি রাখে?” অথচ সভায় উপস্থিত জ্ঞানী, ন্যায়বিচারক, এমনকি গুরুজনরাও তখন নিরব দর্শক ছিলেন।
ধ্রুপদীর প্রার্থনায় ভগবান কৃষ্ণ হস্তক্ষেপ করেন। তিনি অসীম শাড়ি দিয়ে দ্রৌপদীর মান রক্ষা করেন। দুঃশাসন যতই টানতে থাকে, শাড়ি যেন শেষ হয় না। এ অলৌকিক ঘটনায় দ্রৌপদী রক্ষা পান, কিন্তু সমাজ তখনও ব্যর্থ ছিল একজন নারীর অধিকার রক্ষা করতে।
আজকের দিনে দাঁড়িয়েও নারীর সম্মান রক্ষায় বিশ্ব সমাজ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের প্রতীকী অর্থ তাই এখনো সমাজ, রাজনীতি ও নারীবাদী আন্দোলনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে আছে।
ধ্রুপদীর বস্ত্র হরণ শুধুই একটি পৌরাণিক কাহিনী নয়, এটি একটি চেতনাবোধ, একটি সামাজিক প্রতিবাদ, একটি ন্যায়বোধের উদাহরণ। যুগে যুগে এই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়—নারীর সম্মান রক্ষায় সমাজ যেন কখনো নিরব না থাকে।