আলমডাঙ্গায় গৃহবধু হাসিনা খাতুন তার স্বামীর নির্যাতন ও প্রতারণা বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

আলমডাঙ্গার জাহাপুর গ্রামের হাসিনা খাতুন নামের এক গৃহবধু স্বামীর নির্যাতন ও প্রতারণা বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার স্বামী জাহাপুর গ্রামের শুকুর আলী দফায় দফায় স্ত্রীর বাবার বাড়ির জমি বিক্রয় করে টাকা নিয়ে বিদেশ গেলেও এখন স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে বলে ভূয়া তালাক নামা দেখালে স্ত্রী হাসিনা খাতুন দুটি সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে, বেলগাছী ইউনিয়নের ফরিদুপুর গ্রামের মৃত আশারফ আলীর মেয়ে হাসিনা খাতুন বলেন, প্রায় ২০ বছর পূর্বে উপজেলার জাহাপুর গ্রামের ঘোষপাড়ার মৃত মসলেম মন্ডলের ছেলে শুকুর আলীর সাথে শরীয়াহ মোতাবেক তার বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের ১৬ বছরের একটি মেয়ে ও ১২ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
বিয়ের কিছুদিন পর সংসারের কথা চিন্তা করে হাসিনা খাতুন বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে ২ লাখ টাকা এনে স্বামী শুকুর আলীকে দেন । যার মুল্য এখন প্রায় ২০ লাখ টাকা। মাঝে মাঝে তাদের সংসারে ছোটখাট ঝামেলা হতে থাকে। গত প্রায় ৮ বছর আগে তার স্বামী শুকুর আলী বিদেশ যাওয়ার জন্য তাকে আবারও বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে নিয়ে আসতে বলে। ছেলে-মেয়ে ও সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে বাবার বাড়ির থেকে জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার জন্য ৫ লাখ টাকা প্রদান করে। সেই জমির মূল্য এখন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সেই টাকা নিয়ে তার স্বামী মালয়েশিয়ায় যায়।
মালয়েশিয়া গিয়ে মাঝে মাঝে টাকা পাঠাতো। ৫ বছর পর ছুটিতে বাড়ি আসে শুকুর আলী। বাড়ি এসে স্ত্রীর উপর নির্যাতন শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে পরিবারের লোকজন বসে বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়। কয়েক মাস পর শুকুর আলী আবারও মালয়েশিয়া ফিরে যেতে চাই । বাধ্য হয়ে হাসিনা খাতুন আবারও তার বাবার বাড়ি থেকে শেষ সম্বল বাড়ির ভিটা বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা এনে দেন। এবার মালয়েশিয়া গিয়ে স্ত্রী-সন্তানের কোন খোঁজ খবর নেওয়া বন্ধ করে দেয় শুকুর আলী। অনেকবার সে তার স্বামীর সাথে যোগযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় । পরে বাধ্য হয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে সে তার মামার বাড়িতে গিয়ে উঠে।
গত কয়েকদিন আগে তার ভাসুর মেছের মন্ডল ও দেবর ঝন্টু মন্ডলের মাধ্যমে জানতে পারে তার স্বামী বাড়ি আসবে। তিনি ছেলে-মেয়ে নিয়ে জাহাপুর গ্রামে যান। ৬ এপ্রিল তার স্বামী বাড়িতে এসে তাকে ও তার ছেলে মেয়েদের গালিগালাজ করে। রাতে ঘরে ঘুমাতে গেলে ঘর থেকে বের করে দেয়।
৭ এপ্রিল সকালে তার স্বামী তাকে ঘরে আটক করে নির্যাতন শুরু করে। ঝাটা দিয়ে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত জখম করে দেয়। সে চিৎকার করতে গেলে তার গলা চেপে ধরে হত্যা করার চেষ্টা করে। ঘরের বাইরে থেকে মাকে নির্যাতন করতে দেখে ছেলে-মেয়ে চিৎকার করে প্রতিবেশিদের ডেকে তাকে উদ্ধার করে। পরে তার মামারা গিয়ে তাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হারদী নিয়ে ভর্তি করে। ৮ এপ্রিল হাসিনার মামারা জাহাপুর গিয়ে শুকুর আলীর বাড়িতে গেলে সে একটি কম্পিউটারের টাইপকৃত ভূয়া তালাক নামা দেখিয়ে বলে ২৩ সালে হাসিনাকে তালাক দিয়েছি। এ কথা শুনে হাসিনা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
তিনি তার দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে বিচারের দাবীতে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এমতাবস্থায় তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে সু-বিচার প্রার্থনা করেছেন।