সাহরির শেষ সময় : ফজরের আযান নয়, বরং সুবহে সাদিক উদিত হওয়া-মাওলানা ইমদাদুল হক

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও সকল পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বা রোজা বলে। সুতরাং সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত হালাল পানাহার ও কামাচারের অনুমোদন থাকে। রোজাদারের জন্য সূর্যাস্তের আগে এবং সুবহে সাদিকের পরে খাওয়া ও পান করা বৈধ নয়। সূর্যাস্তের আগে যে পানাহার বৈধ নয় এটা সকলের কাছেই মোটামুটি পরিষ্কার। কিন্তু সুবহে সাদিকের পরের ব্যাপারটা অনেকের কাছেই অস্পষ্ট আছে বলে মনে হয়।
অনেকের প্রশ্ন শুনে বোঝা যায়, জনসাধারণের মাঝে এ ধারণা ব্যাপক যে, ফজরের আযান হওয়াই সাহরির শেষ সময়। কিন্তু বাস্তবতা হল, শরীআত কর্তৃক সাহরির পানাহার গ্রহণের সীমারেখা হল সুবহে সাদিক উদিত হওয়া।
মহান আল্লাহ বলেন, আর তোমরা কালো রেখা ভেদ করে প্রভাতের শুভ্র রেখার উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে থাকো (সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৭)।
তবে রমাযানে সাধারণত সুবহে সাদিকের সাথে সাথেই আযান দেওয়া হয়। কিন্তু কখনো যদি সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগে আযান হয়ে যায় তাতে খাবার বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি আযান শোনে আর তার হাতে খাবার পাত্র থাকে তবে সে প্রয়োজন না মেটা পর্যন্ত খাবার বর্জন করবে না (আবু দাউদ)।
এ বিধান সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগে হওয়া আযানের ক্ষেত্রে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সময় দুজন মুআযযিন ছিলেন, বিলাল ও ইবন উম্মে মাকতুম রা.। বিলাল রা. আযান দিতেন সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগে রাত থাকতে, যেন তাহাজ্জুদ আদায় কারীরা বাড়ি ফিরে যায় আর ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জাগ্রত হয়। আর ইবন উম্মে মাকতুম আযান দিতেন সুবহে সাদিক উদিত হলে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, ইবন উম্মে মাকতুম আযান দিলে তোমরা আর সাহরি খাবে না। তবে বিলালের আযানের পরও তোমরা পানাহার চালিয়ে যেতে পারবে (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি ও ইবনে মাজাহ)।
যেহেতু সুবহে সাদিক উদিত হওয়াই সাহরির শেষ সময়, সুতরাং মুআযযিন কোনোদিন দেরি করে আযান দিলেও সে পর্যন্ত পানাহার করা চলবে না, বরং সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার সাথে সাথেই বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতা কাম্য।
লেখক: মুহতামিম, দারুস সুন্নাহ একাডেমি, আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা।