২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গার পল্লি প্রাণি চিকিৎসক নজরুলের বিরুদ্ধে গরুর অপচিকিৎসার অভিযোগ

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
জানুয়ারি ১০, ২০২৫
61
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: গরু খামারি লিটন জোয়ার্দার। তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলার মধুপুর গ্রামের আমির আলী জোয়ার্দ্দারের ছেলে। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর দুবাই ছিলেন। বিদেশ বিভূঁইয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বেশ কয়েক লাখ টাকা জমিয়েছিলেন। দেশে ফিরে সিদ্ধান্ত নেন আর কত বছর পরিবার পরিজন ছেড়ে বিদেশে থাকবেন? তার চে' জমানো টাকা দিয়ে দেশেই ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করেন। ৭ মাস পূর্বে তিনি জমানো ২২ লাখ টাকা দিয়ে ২১ টি গরু কেনেন মোটাতাজা করে বিক্রির জন্য। রাতদিন গরুগুলি খাওয়ানো ও যত্ন -আত্তি করেন। চার মাসে প্রায় ৮ লাখ টাকা গরুগুলির পেছনে খরচ করেছেন। গরুগুলি বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। খামারি লিটন জোয়ার্দ্দার স্বপ্ন দেখেন আগামি ঈদকে সামনে রেখে গরুগুলি বিক্রি করবেন। কম করে হলেও ৫০ লাখে বিক্রি হবে তার গরুগুলি। তাতে ১২ থেকে ১৫ লাখ লাভ হবে তার। গ্রামের অভিজ্ঞ অনেক খামারি তাকে এমন লাভ হবে বলে আস্বস্ত করেছেন।


মধুপুরের পাশের গ্রাম ঘোষবিলা। ওই গ্রামের নজরুল ইসলাম পল্লি প্রাণি চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন গ্রামে গ্রাম। তিনি লিটন জোয়ার্দ্দারের খামারে আসেন মাঝে মধ্যে ঘুম । গরুগুলি দেখে পরামর্শ দেন কলিজায় ইঞ্জেকশন দেওয়ার। তা না হলে আর দ্রæত মোটাতাজা হবে না। লাভ বেশি হবে না বলে সাবধান করে যান। নজরুল ইসলামের পীড়াপীড়িতে লিটন জোয়ার্দার গরুগুলির চিকিৎসা করাতে রাজি হন। ৩ নভেম্বর দিন পূর্বে তিনি ২১ গরুর কলিজায় ইঞ্জেকশন দেন। ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর পরই গরুগুলি অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরুল ইসলামকে জানালে তিনি মুখে খাওয়ার ট্যাবলেট ও পাউডার ঔষধ দেন। পাতলা পায়খানা শুরু হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে চিন্তায় পড়ে যান খামারি। তিনি নজরুল ইসলামকে বার বার ডাকলেও নজরুল ইসলাম সাড়া দেননি। বাধ্য হয়ে খামারি উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসে অভিযোগ দেন।


উপজেলা প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. এ এন এম মোস্তাকিম মুকুট চিকিৎসক পাঠিয়ে চিকিৎসা করেন। তবুও অবস্থার উন্নতি হয়নি। গরুগুলি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিটা গরু এখন হাড্ডিসার অবস্থা। একবার শুয়ে পড়লে আর উঠতে পারছে না। এরই মাঝে দুটি গরু মারা গেছে। অপেক্ষাকৃত বেশি অসুস্থ ৫ টি গরু বিক্রয় করতে বালিয়াপাড়া হাটে নিয়ে যান। বেশি অসুস্থ হওয়ায় তা ৩ টি বিক্রি হয়নি। গরু ৩ টি এতটাই অসুস্থ ছিল যে অবিক্রিত গরুগুলি আর বাড়িতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। দোবিলা নামক গ্রামে ফেলে রেখে চলে এসেছেন খামারি মালিক। চোখের সামনে বাকী ১৪ টি গরু মরতে চলেছে। এতে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হবে বলে খামারি দাবি করেছেন। অনেক প্রত্যাশায় গড়ে তোলা খামারের স্বপ্ন, তার আর্থিক স্বাচ্ছন্দময় ও নিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্নসাধ সব ধুলিস্মাত হয়ে গেছে। একেবারে পথে বসেছেন তিনি।


খামারি লিটন জোয়ার্দ্দারের পরিবার এখন শোকবিহ্বল। জমানো সমস্ত অর্থ হারানোর বেদনায় মলিন হয়ে পড়েছে বাড়ির সকলের মুখ। ভেঙ্গে গেছে বুক। বোবা কান্নায় গুমরিয়ে গুমরিয়ে উঠছে সে বুক।


খামারি লিটন আলী বলেন গরু কেনার পর গরু গুলো সুস্থ ছিল এ সময় নজরুল ডাক্তার এসে গরুর কলিজা ইনজেকশন দেয়ার কথা বলে এবং সে নিজে ওষুধ কিনে নিয়ে আসে এবং ইনজেকশন দেয়ার পর ওষুধের প্যাকেট গুলো নিয়ে যায় এবং একটি পাউডারের নাম কাগজে লিখে যায়। পাউডারটি খাওয়ানোর পরেই গরুর পাতলা পায়খানা ও ত্রুটি ফোলা শুরু হয়।


আমি ১৭ বছর বিদেশ ছিলাম আমার সমস্ত ইনকাম আমি এই খামারের লাগিয়েছিলাম । ব্যাংকে আমার ঋণ আছে। বর্তমানে আমি নিঃস্ব। এই গরু গুলো যদি আমি ভালোভাবে বিক্রি করতে পারতাম তাহলে ৫০ লক্ষ টাকার উপরে বিক্রয় হতো। আমি এর বিচার চাই । এ বিষয়ে আমি প্রাণিসম্পদ অফিসার মুকুট স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।


প্রতিবেশী শামীম রেজা বলেন, "গরুগুলো কেনার সময় সবই সুস্থ ছিল। নজরুল ডাক্তার ক্রিমি ও কলিজার ইনজেকশন করে। সেখান থেকেই গরুর এই অবস্থা। আলমডাঙ্গা থেকে ডাক্তারের এনে দেখানো হয়েছে। তারা বলেছে নজরুল ডাক্তারকে ডাকতে। ডাকলেও তিনি আর আসছেন না।"


আরেক প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন বলেন, "গরুগুলো সুস্থই ছিল নজরুল ডাক্তার কি এক কলিজার ইনজেকশন দেয়ার পরে গরুর এই অবস্থা। লাখ টাকার দামে কেনা গরু এখন ২০ হাজার টাকায়ও কউ নেবে না।"
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘোষবিলা গ্রামের পল্লি প্রাণিসম্পদ চিকিৎসক নজরুল ইসলাম আলমডাঙ্গা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ভেটেরিনারি পাবলিক হেলথ সার্ভিস জোরদার প্রকল্পে ফিল্ড ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে ৪ বছর চাকুরী করেছেন। তিনি ঝিনাইদাহ যুবউন্নয়ন থেকে ৬ মাসের পাণিসম্পদ চিকিৎসার উপর কোর্স করেছেন। তিনি এলাকায় প্রাণি চিকিৎসা করেন।


অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম বলেন, শীতে মানুষের মত গরুরও ঠান্ডা লাগে, টনসিলে সমস্যা হয়। সেজন্য ৩ নভেম্বর আমি গরুগুলির ভিপ্লেক্স ও রেনাসিন ইঞ্জেকশন করেছিলাম। এতে গরুর পাতলা পায়খানা হওয়া কিংবা অসুস্থ হওয়ার কথা না। পরে তারা কি ঔষধ খাওয়ায়েছে তা জানিনা। আমাকে আর বলেনি। তারা আলমডাঙ্গা থেকে ডাক্তার এনে চিকিৎসা করাচ্ছে। আর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। "


উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: এস এম মাহমুদুল হক জানান, তিনি ঘটনাস্থলে চিকিৎসক দল পাঠিয়েছিলেন। চিকিৎসা দেওয়ার পর এখন কিছুটা সুস্থ। ধারণা করা হচ্ছে এটা গরুর " বোটল জ্ব" রোগ। নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ খামারি করছেন, নজরুল ইসলাম তা স্বীকার করছেন না।"

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram