আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার গ্রেফতার
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ২৯ ডিসেম্বর রবিবার আলমডাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তকালে উপস্থিত হলে ছাত্রজনতা আটকে রেখে পরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পুলিশ তাকে ২০২৩ সালের বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা মামলার আসামী হিসেবে গ্রেফতার করেছে। তাছাড়াও তিনি বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় মামলার আসামি। ৪ আগস্ট আলমডাঙ্গা এ টিম মাঠে বৈষম্যবিরোধি ছাত্ররা উপস্থিত হলে ইয়াকুব আলীর নেতৃত্বে তাদের উপর পৈশাচিক হামলা চালানো হয়। ওই মামলায় তিনি প্রধান আসামি। বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে ওই মামলায় তিনি জামিনে আছেন।
জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী মাস্টার হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তন হলে তিনি আর বিদ্যালয়ে উপস্থিত হননি। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির লিখিত অভিযোগ করা হয়।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্য বিরোধি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আলমডাঙ্গা এ টিম মাঠ, হারদী ও ভাংবাড়িয়া গ্রামে সমাবেশের কর্মসূচি দেয়। আলমডাঙ্গা ও হারদী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা আসা শুরু করলে তাদের উপর আতর্কিতে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনে আসা ৪৭ জন শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। এদের মধ্যে ১৯ জন গুরুত্বর জখম হয়।
ইয়াকুব আলী মাস্টার নিজে উপস্থিত থেকে ওই হামলার নেতৃত্ব দেন অভিযোগ তুলে তাকে প্রধান আসামী করে পরবর্তীতে মামলা করা হয়েছে।
ইয়াকুব আলীর বিরুদ্ধে বিদ্যালয় কেন্দ্রিক নানা দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে।
তার প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগই ছিল সম্পূর্ণ রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত নিয়োগ, প্রধান শিক্ষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষকের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না।
একদিকে তিনি ছিলেন প্রধান শিক্ষক, অন্যদিকে ছিলেন রাজনীতিবিদ, আলমডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। স্বৈরশাসকের আজ্ঞাবহ দাস। প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতি ছাড়া যেখানে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে, সেখানে তিনি মাসে ২/৫ দিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় প্রতিদিনের স্বাক্ষর করতেন। যা ছিল সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
জাতীয় দিবসগুলিতে অনুপস্থিত থেকে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশ নিতেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। অভিভাবকদের কোন অভিযোগেই তিনি কোনদিনই আমলে নেননি। তার আজ্ঞাবহ ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন মাসের পর মাস এই অনিয়ম গুলি চালিয়ে গেছেন।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার স্বার্থে মসজিদের দানকৃত সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার কোন হিসাব বিদ্যালয়ের আয় ব্যয় খতিয়ানে উল্লেখ নাই। বিদ্যালয়ের নামে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন বরাদ্দের টাকায় কোন কাজ না করেই অথবা নাম মাত্র কাজ করেই ম্যানেজিং কমিটির যোগসাজসে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি কখনোই কোন কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন নাই। এমন অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে।
গতকাল ছিল তদন্ত কমিটিতে শুনানীর দিন। উপজেলা মাধ্যমিক অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ইমরুল হককে প্রধান করে বাকী দুজন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শরিফুজ্জামান লাকি ও হাটবোয়ালিয়ার বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমকে ওই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। গতকাল বেলা ১১ টায় ইয়াকুব আলী মাস্টার তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে হাটবোয়ালিয়া এলাকা থেকে বহু মানুষ ইয়াকুব আলীর বিচারের দাবিতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সামনে চড়াও হন। আলমডাঙ্গার ছাত্র জনতাও উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে ইয়াকুব আলীকে শিক্ষা অফিসের রুমে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ উপস্থিত হলে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ তাকে ২০২৩ সালে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা মামলায় গ্রেফতার করেছে। আজ সোমবার সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।