রামদিয়ার শরিফকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় ৩৫ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ৮/১০ জন আসামি
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার রামদিয়া গ্রামের আহমেদ শরিফ ওরফে ছোট বুড়োকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বড় ভাই ওয়ার্ড কৃষকলীগ সভাপতি গোলাম রসুল বাদী হয়ে ওই হত্যা মামলা দায়ের করেছে। একই গ্রামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা আনসার আলীকে ১ নং, ফরিদ আলীকে ২ নং ও শুকচাঁদ আলীকে ৩ নং আসামি করাসহ ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৮/১০জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ওই হত্যা মামলায়। গতকাল ২৩ ডিসেম্বর রাতে এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামের আহমেদ শরিফ ওরফে বুড়োকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষরা কুপিয়ে হত্যা করে। রোববার রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রােমের মাঝেরপাড়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিহত শরীফ ওরফে বুড়ো রামদিয়া গ্রামের মৃত বিশারত আলীর ছেলে। এ সময় আরও ৪জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এ সময় প্রতিপক্ষেরও কয়েকজন আহত হয়েছে। তাছাড়া, প্রতিপক্ষেরও ৫ জন আহত হয়েছে।
আহতরা হলেন- একই গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে আব্দুল আলিম(৪০), সেলিম (৫৫) ও সেলিমের ছেলে সোয়েব (৩৩), পল্টু আহম্মেদ।
প্রতিপক্ষের আহত ৫ জন হলেন - মৃত মঙ্গল হোসেনের ছেলে ফরিদ মন্ডল (৭০), আমির জোয়ার্দ্দারের ছেলে জমির জোয়ার্দ্দার (৪২), মন্ডলের ছেলে মঙ্গল (৩৫), রয়জদ্দীনের ছেলে রকি (২৪) ও ইবাদত মন্ডলের ছেলে মহাসিন (৪৬)।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রাম দিয়া গ্রামের আনসার আলী ও ফরিদ জোয়ার্দ্দার গ্রুপের সাথে একই গ্রামের পল্টু ও হালিম গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। আনসার আলী গ্রুপ বিএনপি ও পল্টু- হালিম গ্রুপের লোকজন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
গত ৫ আগস্ট দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর ৬ আগস্ট পল্টু -হালিম গ্রুপের সাথে আনসার আলী গ্রুপের কয়েক দফা হামলা পাল্টা হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে পল্টু-হালিম গ্রুপের লোকজন বাড়ি ছাড়া ছিল। এরই এক পর্যায়ে গত রোববার সন্ধ্যায় আহম্মদে শরীফ ওরফে ছোট বুড়োসহ কয়েক জনকে মাঝেরপাড়ার মসজিদের সামনে পেয়ে প্রতিপক্ষ আনসার জোয়ার্দ্দার গ্রুপের লোকজন আতর্কিত হামলা চালায়।
এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে শরীফ ওরফে ছোট বুড়োকে হত্যা করে। একই সময় তাদের পক্ষের পল্টু, আলিম, সেলিম ও সোয়েব আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
নিহতের বেয়াই আওলাদ হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আনসার আলী ও ফরিদ জোয়ার্দ্দার গং আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে আসছে। গত ৬ আগস্ট মাঠে কাজ করা অবস্থায় আনসার আলী গ্রæপের লোকজন হালিমকে মারধর করে। পরদিন গ্রামের পল্টুর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। হামলার কারণে আমাদের লোকজন বাড়ি ছাড়া। রোববার এশার নামাজের পর আমার বিয়াই আহ্ম্মদ শরীফসহ কয়েকজনকে মসজিদের সামনে পেয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আরও ৪ জন গুরতর আহত হয়েছে।
এলাকাসূত্রে জানা যায়, গত সোয়া এক যুগ ধরে আওয়ামীলীগের শাসনামলে বিএনপি সমর্থকরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। শুধু আওয়ামী লীগের লোক নিজেরাই নির্যাতন করেনি, প্রশাসন দিয়েও নির্যাতন করিয়েছে। জমি, বাওড় ও মাছের ব্যবসা দখল করে নিয়েছিল। বিএনপি পন্থীদের জন্য তারা গ্রামে শ্বাস্রুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। কয়েক মাস আগে বিএনপি নেতা আনসার আলীর ভাতিজা মাছেম আলীকে নিহত আহমেদ গং পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে মৃতপ্রায় অবস্থায় ফেলে রাখে। ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি সমর্থকেরা সুবিধাজনক অবস্থায়। এই অবস্থায় গতকাল তারা সংগঠিত হয়ে প্রতিপক্ষ আহমেদকে কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনার বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান বলেন, রাতে নিহতের ভাই বাদী হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৮/১০ জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে এজাহার দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সোমবার বিকালে আহমদ শরীফের লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।