চেহারা সুন্দর না হওয়ায় বিয়ের ১ মাসের মাথায় দেবর ও শাশুড়ির কটাক্ষে রক্তাক্ত মেধাবী তরুণী রেশমার জীবনের পরিসমাপ্তি
চেহারা সুন্দর না হওয়ায় কটাক্ষে রক্তাক্ত তরুণী রেশমার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে রহস্যজনক আত্মহননের মধ্য দিয়ে। শাশুড়ী ও দেবরের বিরামহীন কটাক্ষে জর্জরিত রেশমার লাশ অবশেষে উদ্ধার হয় তার শয়নকক্ষ থেকে। বিয়ের ঠিক একমাস পর রেশমার এই দু:খজনক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের মাতম চলছে তার পরিবারে। তার আগে রেশমা অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে লেখাপড়ার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন পাড়ি দেন। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করা সংগ্রামী মেয়ে তিনি। একাধিকবার সরকারি চাকরীর মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত গেলেও তার কপালে চাকরী নামের সোনার হরিণ জোটেনি।
নিহত রেশমা আলমডাঙ্গার পাঁচলিয়া বাজার পাড়ার রেজাউল হকের মেয়ে। একমাস আগে রেশমার বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী ডাউকি গ্রামের ছের আলীর ছেলে রিপনের সাথে।
গ্রামসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার পাঁচলিয়া বাজারপাড়ার রেজাউল হকের অনেক আরাধ্য মেয়ে রেশমা তাদের বিয়ের ২৫ বছর পর ভূমিষ্ঠ হয়। চেহারা ভাল না হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই রেশমা পড়াশোনায় গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠেন। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পড়াশোনার এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে রেশমাকে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়েছে। কুষ্টিয়া শহরে প্রাইভেট পড়িয়ে তার শিক্ষা জীবন পার করতে হয়েছে।
পড়াশোনা শেষে নিজের চেহারা ভাল না হওয়ায় রেশমা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে পরীক্ষা দিতে শুরু করেন। বেশ কয়েকটি চাকরীতে ভাইভা পর্যন্ত এগিয়ে যান। কমপক্ষে পাঁচটি ভাইভা থেকে আউট হন তিনি। এরই মধ্যে সরকারি চাকরির বয়সও শেষ হয়ে যায়। একপর্যায়ে মনোবল ভেঙে যায় তার।
এরপর রেশমার পরিবার তাকে বিয়ে দিতে চেষ্টা তদবির করতে থাকেন। গতমাসে পাশের গ্রাম ডাউকির ছের আলীর বিপতœীক ছেলে রিপন আলী রেশমাকে বিয়ে করার আগ্রহ দেখান। গত মাসের তিন তারিখে ঘরোয়াভাবে রিপন- রেশমার বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবেশীরা জানায়, বিয়েতে রিপনের আগ্রহ থাকলেও তার মা ও ছোটভাই শিপন মেনে নিতে পারেনি। বিয়ের পর থেকেই রেশমার চেহারা নিয়ে তারা সবসময় কটুক্তি করতে থাকেন। বিয়ের একমাসের ব্যবধানে রেশমার নতুন সংসার তার কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে। তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবন স্বামীর ঘরে মুখথুবড়ে পড়তে থাকে। শাশুড়ী ও দেবরের বিভিন্ন খোঁচায় রেশমার এক মাসের সংসার নরকে পরিনত হয়। এরই মধ্যে গতকাল সকালে গলায় ফাঁস লাগানো রেশমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রতিবেশীসূত্র জানায়, গতকাল সকালে রেশমার স্বামী রিপন প্রতিবেশী গ্রাম্য চিকিৎসক সানোয়ার হোসেনকে গোপনে তার ঘরে ডেকে নেন। এর আধাঘন্টা পর সানোয়ার ফিরে আসেন। এরও আধাঘন্টা পর রেশমার আত্মহত্যার খবরটি বাড়িতে প্রচার করা হয়। একই সময়ে রেশমার লিখে যাওয়া "তার মৃত্যুর জন্য স্বামী ও তার পরিবার দায়ী নয়" লেখা একটি চিরকুট দেখানো হয়। এতেই প্রতিবেশীদের মধ্যে রেশমার মৃত্যু রহস্য দানা বেঁধে ওঠে।
নিহত রেশমার স্বজনরা অভিযোগ করেন, রেশমা একজন সংগ্রামী মেয়ে। সে আত্মহত্যা করতে পারেনা। তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে।
সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়।
আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে। মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করতে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তি সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।