আলমডাঙ্গায় মোটরসাইকেল ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে ফেলার অপচেষ্টা
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গায় এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পুরাতন মোটরসাইকেল কেনার কথা বলে ডেকে নিয়ে সবুজ আলী নামের এক যুবককে হত্যা করে পরে তার লাশ এবং মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই ভয়াবহ ঘটনা ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে ফরিদপুর গ্রামের গজারিয়া মাঠের একটি নির্জন মেহগনি বাগানে ঘটে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ বুধবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে পুড়ে যাওয়া লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত সবুজ আলী (২৫) পেশায় পুরাতন মোটরসাইকেল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নের বাদেমাজু গ্রামের বাসিন্দা। তার পিতা জয়নাল আবেদীন একজন গরু ব্যবসায়ী। সবুজের পরিবারের সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে সবুজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল ব্যবসার কাজের জন্য বের হয়েছিলেন। রাতে তিনি বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করেন এবং পুলিশকে বিষয়টি জানান। পরের দিন সকালে সংবাদ আসে যে ফরিদপুর গ্রামের গজারিয়া মাঠের একটি নির্জন জায়গায় এক যুবকের লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সবুজের পরিবার সেখানে পৌঁছে লাশটি শনাক্ত করে।
সবুজের ভাই সুরুজ জানান, তার ভাই পুরাতন মোটরসাইকেল কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। সবুজের ব্যবসায়িক সহযোগী ছিলেন বন্ডবিল গ্রামের জিহাদ। জানা যায়, ১২ নভেম্বর বিকেলে এক ব্যক্তি অনিক নামে পরিচয় দিয়ে সবুজকে ফোন করে মোটরসাইকেল কেনার জন্য দেখা করতে বলে। সবুজ তখন জিহাদকে মোবাইল ফোনে জানায় যে একজন ব্যক্তি ডিসকভার ১২৫ মডেলের মোটরসাইকেলটি কিনতে চায় এবং তাকে গাড়িটি প্রস্তুত রাখতে বলে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সবুজ মোটরসাইকেলটি নিয়ে বের হন। এরপর থেকেই তার সাথে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে বুধবার সকালে জানা যায়, তাকে মেরে মোটরসাইকেলসহ পুড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান এবং পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আজগর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান জানান, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং মোটরসাইকেলসহ পুড়ে যাওয়া এক যুবকের লাশ দেখতে পায়। পরে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে এটি সবুজ আলীর লাশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে এবং পরে তার লাশ নির্জন মাঠের মেহগনি বাগানে নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেলসহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ উদ্ঘাটনে পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং খুব শীঘ্রই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আগে কখনো দেখেননি। এক যুবককে ডেকে এনে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে তার লাশ পুড়িয়ে ফেলার নৃশংসতা এলাকাবাসীকে স্তম্ভিত করেছে। হত্যাকাণ্ডের দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত করছে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।