আলমডাঙ্গার আসাননগরে পরকীয়ার জেরে স্বামীর হাতে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর হত্যার অভিযোগ
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আসাননগরে পরকীয়ার জেরে স্বামীর হাতে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত পলি খাতুন (২৬) ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার স্বামী রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে পলিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ করেছে তার পরিবার। জানা যায়, ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে রবিউল তার স্ত্রী পলিকে ঘরের ভেতর নির্দয়ভাবে মারধর করেন। এ সময় রবিউলের পরিবার মারধরের ঘটনা স্বীকার করলেও তারা দাবি করে যে, মারপিট ও ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে পলি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তবে পলির পরিবারের দাবি, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
নিহত পলি খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা এবং তার বাবার বাড়ি হারদী ইউনিয়নের গোপালদিয়াড় গ্রামে। রবিউল একজন ট্রাক চালক এবং তার স্ত্রী ও দুটি সন্তান রয়েছে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের মতে, রবিউল দীর্ঘদিন ধরে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং ওই নারীর সাথে ভিডিও কলে কথোপকথন চালাতেন। এমনকি পলির সামনেই এসব কথোপকথন চলত, যা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক হতো। মঙ্গলবার বিকেলেও এ নিয়ে ঝগড়ার এক পর্যায়ে রবিউল তার স্ত্রী পলিকে ঘরে মারধর শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মারধরের সময় পলি কান্নাকাটি করলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। তখন রবিউলের বাবা দাবি করেন, পলি বিষ খেয়েছেন। পরে তাকে স্থানীয় ডাক্তার শহিদুল ইসলামের কাছে নেওয়া হয়, তবে তিনি জানান, পলির মৃত্যু আগেই হয়েছে। এই খবর পেয়ে পলির পরিবারের সদস্যরা গোপালদিয়াড় গ্রাম থেকে ছুটে আসেন এবং থানায় গিয়ে রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা অভিযোগ করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গেলে দেখে রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। পলির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় নেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।
পলির বাবা ফরিদ উদ্দিন জানান, তার সাত মেয়ের মধ্যে পলি ছিল নোয়া মেয়ে। ১০ বছর আগে তার বিয়ে হয় এবং সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। পলি গর্ভধারণের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। মাঝে মাঝে এই নির্যাতনের কারণে পলি তার বাবার বাড়ি বা বোনদের বাড়িতে চলে যেতেন। পরিবারের সবার অনুরোধে তিনি আবার শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতেন। ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ, এবার রবিউল, তার বাবা এবং মা মিলে পরিকল্পিতভাবে পলিকে হত্যা করেছে।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নজরুল ইসলাম জানান, তিনি রবিউলের বাবার ফোন পেয়ে বাড়িতে গিয়েছিলেন। রবিউলের বাবা মারধরের ঘটনা স্বীকার করেন, তবে বিষের গন্ধ পাননি বলে জানান। মেম্বার আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি এলাকায় চাউর হলে রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যান।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশ পলির লাশ উদ্ধার করেছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পুলিশ ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কাজ করছে।
এ ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় লোকজন এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।