আলমডাঙ্গার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠের সীমানা প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে মারামারি
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার শহীদ মিনারের জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। শহীদ মিনারের প্রাচীর নির্মাণ কাজে ব্রাইট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক জাকারিয়া হিরো বাঁধা দিলে দুপক্ষের মধ্যে হট্টগোলের একপর্যায়ে হিরো মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে জখম হন । পুলিশ কর্তৃক এক যুবদল কর্মিকে থানায় নেওয়াকে কেন্দ্র করে শহরে বিক্ষোভ করা হয়। এরই এক পর্যায়ে হিরোর লোকজন সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম আজমের বাড়িতে চড়াও হয়।
গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটানাস্থলো উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নেন। এসময় এক যুবদল কর্মিকে ঘটনাস্থল থেকে থানায় নেয় পুলিশ।
এ ঘটনায় থানায় আহত জাকারিয়া হিরো এখনও অভিযোগ করেননি। তবে শিক্ষক-জনতা পক্ষ তিনটি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেছেন। হামিদুল ইসলাম আজম, শিক্ষক আব্দুল হান্নান অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও জাকারিয়া হিরোপক্ষ কর্তৃক আঘাতের অভিযোগ তুলে ভিজে স্কুল শিক্ষক আহসান হাবিব লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানাগেছে, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে কয়েক বছর আগে ব্রাইট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক জাকারিয়া হিরো বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে জোরপূর্বক শহীদ মিনারে জমি দখল করে ওই বহুতল বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন । এছাড়াও আলমডাঙ্গাবাসীর প্রাণের প্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী ব্যামাগারের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণেরও অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনায় আলমডাঙ্গার মানুষ তার বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। গঠন করা হয় ব্যামাগার উদ্ধার কমিটি। ইতোপূর্বে
উদ্ধার কমিটি,স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ছাত্র-জনতা জমি উদ্ধারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। তারা জমি উদ্ধারের জন্য হিরোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মানবন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
এ ঘটনায় দফায় দফায় বিরোধপূর্ণ জমির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সেনাবাহিনী ও আলমডাঙ্গা থানাপুলিশের উপস্থিতিতে বৈঠক করা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমি মাপজোক করে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ইতোপূর্বে নির্ধারিত স্থানে জেলা পরিষদের বরাদ্ধে প্রথম ধাপের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের কাজের প্রথম দিন ছিল গতকাল শনিবার। অভিযোগ উঠেছে -- আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট স্কুল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে কাজ শুরু হলে নির্মাণ কাজে বাঁধা দেন জাকারিয়া হিরো ও তার লোকজন । সে সময় স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনতার সাথে বাকবিতন্ডা সৃষ্টি হয়। চরম হট্টগোল ও হাতাহাতির এক পর্যায়ে জাকারিয়া হিরো রক্তাত্ত জখম হন। পরবর্তীতে হিরোর বড় ভাই হাসানসহ বেশ কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তারা সাংবাদিক হামিদুল ইসলাম আজমের বাড়িতে চড়াও হন। আজম ও তার ছেলে হাসিবকে খুঁজতে থাকে। তারা উত্তেজিত স্বরে তাদের বাপ-ছেলেকে হুমকি দেন।
সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মি মুন্নিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় পরে পুলিশ মুন্নিকে ছেড়ে দেন।
আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষপাতহীন আচরণ ও দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে শহরের অনেককেই মন্তব্য করতে দেখা গেছেন। পুলিশের ইতিবাচক ভুমিকায় অনেকেই প্রশংসা করেছেন।
ব্রাইট মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালক আহত জাকারিয়া হিরো জানান, প্রাচীর নির্মাণকে কেন্দ্র করে বেলা ১১ টার দিকে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ উভয় পক্ষকে আলোচনার জন্য থানায় ডাকেন। জাকারিয়া হিরোপক্ষ থানায় উপস্থিত হলেও আন্দোলনকারী পক্ষ তার সাথে আলোচননায় বসতে অনীহা প্রকাশ করে শুধুমাত্র অফিসার ইনচার্জের সাথে বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে সময় জাকারিয়া হিরো ঘটনাস্থলে ফিরছিলেন। পৌঁছানোমাত্র পেছন দিক থেকে কেউ মাথায় আঘাত করেন। কী দিয়ে আঘাত করেছেন তা বুঝতে পারেন নি। তবে ওই আঘাতে হিরোর মাথা কেটে রক্তাক্ত জখম হয়েছেন বলে জানান। মামলা করেছেন কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, " আমি যতেষ্ট অসুস্থ। একটু সুস্থ হলে মামলা করা হবে। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কারও জন্য কাম্য না।"
আলমডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান বলেন, "দুপক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা জানার সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করা হয়। পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের জন্য একজনকে ধরে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তার সম্পৃক্তা না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। এ নিয়ে নতুন করে অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সকলকে দায়িত্বশীল হতে অনুরোধ করছি।"