আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সীমানা প্রাচীরের দুটি পিলার ভেঙ্গে রড কেটে নেওয়ার অভিযোগ
আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরের সীমানা প্রাচীরের দুটি বিম ভেঙ্গে রড কেটে নেওয়ার ঘটনায় আলমডাঙ্গা পাইলট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শহীদ মিনার মাঠ উদ্ধার আন্দোলনকারিদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি মাঠের পূর্ব দিকের প্রাচীরের নির্মিতব্য দুটি বিমের রড কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। জাকারিয়া হিরো এই অপকর্ম করেছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
গতকাল সোমবার ২১ অক্টোবর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জমি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। ওই জমির পূর্ব সীমান্তে ব্রাইট মডেল স্কুলের মালিক জাকারিয়া হিরোর বিল্ডিং। তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠের পূর্ব দিকের বেশ কয়েক শতক জনি দখল করে নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আলমডাঙ্গার ছাত্রজনতাসহ সর্বস্তরের মানুষ। দখলকৃত জমি উদ্ধার করতে সোচ্চার হয়ে উঠেন ছাত্রজনতা। এক পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসন ও যৌথবাহিনির মধ্যস্ততায় দুই বার জমি মাপজোক করা হয়। হিরোর দখলকৃত অংশ লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে উত্তর দিকের সীমানা চিহ্নিত করতে গিয়ে দেখা গেছে এদিকের প্রত্যেক ভবন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দু:খজনক বলে মন্তব্য করেছেন সবাই।
ভূমিদস্যুর কালো থাবা থেকে শহীদমিনার মাঠের জমি উদ্ধার করতে গিয়ে বার বার হোচট খেতে হচ্ছে আন্দোলনকারীদের। দফায় দফায় ষড়যন্ত্রকারিদের জলদ গম্ভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে যে দফায় দফায় দেদার অর্থ ছড়ানো হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক ছাত্র-জনতা শহীদ মিনার মাঠের প্রকৃত সীমানা পুণরুদ্ধার করে প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করে। এর পরেও দফায় দফায় নানা অজুহাত তুলে প্রাচীর নির্মাণে ব্যাহত করে। গত ২৮ আগস্ট দুপুরে মাঠের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেন দখলদার জাকারিয়া হিরো। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের ছাত্র-জনতা। তোপের মুখে পিছু হটেন দখলদার। দখলদারের পক্ষাবলম্বন করার অভিযোগ তুলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাসের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে আলমডাঙ্গার ছাত্র-জনতা। সে সীমানাপ্রচীর নির্মাণ কাজ এখনও চলমান।
জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাকারিয়া হিরো। সন্ত্রাসী সিরাজ বাহিনীর রাজত্বকালে তাদের পরিবারের অবিশ্বাস্য উত্থান। এক পর্যায়ে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গায় শহীদ মিনারের পাশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক খন্ড জমি লিজ নেন। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। সেই বিল্ডিংয়ে পরিচালিত হচ্ছে তার নিজস্ব ব্রাইট মডেল স্কুল। পরবর্তীতে নানা কৌশলে অর্থ ছিটিয়ে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ব্যামায়াগার করায়ত্ত করে সেখানেও গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। এমনকি ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম ইসলাম খানের বাড়ি ছিল পাশে। ইসলাম খানের বিধবা স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অসহায় পরিবারটির মাথা গোজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
কয়েক মাস আগে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গা কলেজের অভ্যন্তরে থাকা খাস জমি দখল করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। সর্বস্তরের মানুষ ফুসে উঠে। ফলে সেটি আর দখলে নিতে পারেন নি।
এদিকে, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ ( আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি) উল্লেখযোগ্য পরিমান দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। সেই অংশেও বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। অভিযোগ উঠে - হিরো তার বহুতল ভবনের পায়খানার টাংকি তৈরি করেছেন শহীদ মিনার স্থাপনার ভেতরে ( শহীদ মিনার স্থাপনার মাটির নীচে)। এমন অভিযোগের কারণে শহরের আম জনতা ফুঁসছিল দীর্ঘ বছর। জাকারিয়া হিরো প্রভাবশালী হওয়ায় ও আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের এমপি ও নেতাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করেই এতকাল তিনি এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়রকে ব্রাইট মডেল স্কুলের সভাপতিসহ প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের সভাপতি করে নির্বিঘ্নে ভূমি দস্যুতা অব্যাহত রেখেছিলেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিনর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও মাঠটির চৌদিকে সীমানা প্রাচির নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ইতোপূর্বে সীমানা প্রাচির নির্মাণ প্রক্রিয়া বার বার নস্যাৎ করেছিলেন হিরো। বর্তমানে বিদ্যালয়টির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণে অটল সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হলে জাকারিয়া হিরো বাঁধা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শহরের ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় জাকারিয়া হিরো ব্রাইট মডেল স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারিকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যলয়ে চড়াও হন। ছাত্র-জনতাও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাচির নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল সিদ্ধান্তের কথা পূণর্ব্যক্ত করেন। ছাত্র-জনতার কাছে তেমনটাই প্রত্যাশা করেন। এমন পরিস্থিতে পিছু হটেন হিরো। সারাদিন ছাত্র-জনতা মাঠে উপস্থিত ছিল। তারা জাকারিয়া হিরোর অপতৎপরতা রুখে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করে নানা শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখেন।
পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে যথারীতি প্রাচির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সারা শহর দখলদার জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠে। ছাত্র-জনতার স্পস্ট দাবি - শহীদ মিনার মাঠের পবিত্র মাটি এক ইঞ্চিও অবৈধ দখলদারদের নজরানা দেবো না, কাউকে দিতে দেবো না। কারও জমি এক ইঞ্চিও অবৈধভাবে নেবো না।
এসব দাবিতে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে নতুন করে মাপজোক করে সীমানা লাল রঙ দিয়ে চিহ্নিত করে।