লক্ষীপুরের বুকে আলমডাঙ্গাকে একটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে-ইউএনও

'আমি আলমডাঙ্গা আসার পর শুনেছি ও ফেসবুকে দেখেছি আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি কী চমৎকার কাজ করেছে! আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির স্বেচ্ছাসেবক টিম শৃঙ্খলার সাথে দীর্ঘদিন ধরে এ কার্যক্রম করেছে। আমি মনে করি আলমডাঙ্গার গণত্রাণ কমিটি তাদের অপরিসীম সেবা, ত্যাগ আর আন্তরিকতা দিয়ে লক্ষীপুরের বুকে আলমডাঙ্গাকে একটি ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আমরা সবাই যদি একতা বদ্ধ থাকি যে কোন সমস্যা, যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। যে কোন দূর্যোগে আমরা অনেক আগে থেকেই সাহায্য করে আসছি। এটি তারই একটি প্রমাণ।"
আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি কর্তৃক ২০০ স্বেচ্ছাসেবককে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম।
উপজেলা পরিষদের সহযোগিতায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা শাফায়েতুল ইসলাম। এ সময় প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরও বলেন, "আমি চাই শুধু ত্রাণ কার্যক্রমই নয়, আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি আরও ভাল ভাল কাজ তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসবে। কারণ তারুন্যের যে উচ্ছ্াস, তারুণ্যের যে শক্তি এটা আমরা টের পাচ্ছি এখন তাদের প্রতিটি কাজের মাধ্যমে। এই শক্তিটাকে যদি আমরা প্রতিটা ভাল ভাল কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমরা উন্নত আলমডাঙ্গা গড়তে পারবো। সেখান থেকে আমাদের জেলা, আমাদের বিভাগকে উন্নত করে গড়ে তুলতে পারবো। সর্বপরি, আমাদের দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবো। আমি চাই আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি ত্রাণ কার্যক্রমের পরে তারা আরও ভাল কার্যক্রম চালিয়ে যাক। তারা ছাত্রছাত্রীদের সম্পৃক্ত করে আমাদের সমাজিক সমস্যাগুলো প্রতিহত করার জন্য কাজ করবে।"
সমন্বয়কদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, " আপনারা পিছন থেকে ত্রাণ কার্যক্রমে যেভাবে এই ছোট ছোট সদস্যদের পরিচালিত করেছেন। পরবর্তিতেও এই কর্মযোদ্ধাদের সাথে থাকবেন এবং যে কোন সময় যে কোন বিষয়ে এ সকল সদস্যদের পরিচালিত করবেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন যেকোন ভাল কাজে আপনাদের সাথে আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে।
স্বেচ্ছাসেবকরা যারা দিনের পর দিন রাতের পর রাত কষ্ট করেছেন। তাদের সময় ও পরিশ্রম দিয়েছে। তাদের পরিবারের সকলকে এ মহতি কাজে সন্তানদের পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। যারা গণত্রাণ কমিটির স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে যারা ছিলেন তাদেরকেও ধন্যবান জানান তিনি।"
আলমডাঙ্গা উপজেলা গণত্রাণ কমিটির সম্বয়ক এমদাদ হোসেন ও নূর মোহাম্মদ হুসাইন টিপুর উপস্থাপনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আল মামুন। তাছাড়া, বক্তব্য রাখেন সমন্ময়ক ফজলুল হক শামীম মাস্টার, রহমান মুকুল, নূর মোহাম্মদ হুসাইন টিপু ( স্বাগত বক্তব্য), আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আব্দুল্লাহ আল মামুন, শায়খ ইমদাদুল হক, মাওলানা আকরাম হোসেন সাইরাফী, হাবিবুল করিম চনচল, মীর উজ্জ্বল, ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরিফুল ইসলাম পিন্টু, আবির আলম, স্বেচ্ছাসেবক লিডার মুসাব তাওহীদ, লক্ষীপুর ভিবিডি প্রধান আসিফ মাহমুদ ও খুলনা বিভাগীয় প্রধান সজিব আহমেদ।
এ পর্বে আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির স্বেচ্ছাসেবক ও সমন্বয়কদের হাতে প্রধান অতিথি সার্টিফিকেট ও ক্রেস্টসহ নানা সম্মাননা তুলে দেন।
ইতোপূর্বে বেলা ১১ টায় আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি শহরে এক বর্ণাঢ্য র্যালিঁ বের করে।
পরে গণত্রাণ কমিটির সমন্বয়ক ডা মো আব্দুল্লাহ আল মামুনের পরিচালনায় প্রথম পর্ব পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয়। কোরআন তেলোয়াত করেন স্বেচ্ছাসেবক আব্দুল হাকিম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক মওলানা আকরাম হোসেন সাইরাফী। এরপর স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে ইসলামের আলোকে মানব কল্যানে কাজ নিয়ে আলোচনা করেন সমন্বয়ক শায়খ ইমদাদুল হক। “স্বেচ্ছাসেবক থেকে নেতৃত্ব " শীর্ষক প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন ভলেন্টিয়ার ফর বাংলাদেশের খুলনা বিভাগীয় প্রধান মো সজিব।
এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দের নিয়ে বিভিন্ন প্রকার কুইজ ও লটারির আয়োজন করা হয়।
রাতে তৃতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক তানজিল তাবাসসুম তনয়া ও রাকিব মাহমুদের উপস্থাপনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন যারিন হোসেন, ওহী ইশরাক, শারিকা আমিন, সিনথিয়া, প্রীতি সাহা, মাইশা ইশরাফি এশা, জেসমিন, রাহা, পরী, মাসুদ, মালিহা মেহনাজ শায়েরী, তানজিলা তাবাসসুম তনয়া, আরফিন জামান অবিকা, অরিত্র সূত্রধর, জান্নাতুল ফেরদৌস রাহা, নাজিফ হাসনাত, কামরুজ্জামান সিফাত, শারিকা আমিন, তাসনিম ফাতেমা, রজনী, আবিদ, জুঁই, মায়াবী, সাকিব, অর্ঘ্য, আহাদ, সোহান, তাসিন, শীতল, ইরা, নাফি ও মায়া।
প্রসঙ্গত, আকস্মিক ভয়াবহ বন্যায় ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী ও লক্ষ্ীপুর জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে অসহনীয় অবস্থায় নিপতিত হয়। বন্যাদুর্গত মানুষের সহযোগিতার লক্ষ্যে আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটি গঠণ করা হয়। এই কমিটির অধীনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ুয়া প্রায় দু'শ স্বেচ্ছাসেবক ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করেন। প্রায় এক মাস তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে ত্রাণ সংগ্রহ করেন। ১৫ সদস্যের এক রেসকিউ টিম প্রথমে দুর্গত লক্ষ্ীপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ১৫ দিন অবস্থান করে রেসকিউ করেন। পরে ৯টি ক্যাম্পের প্রতিদিন ১৫ হাজার মানুষকে খাবার, শিশুখাদ্য ও সেনিটারী সামগ্রী প্রদান করেছে। পরে মেডিকেল টিম গিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। সবশেষে, পূণর্বাসন টিম গিয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পূণর্বাসন করেন। তারা বসতঘর পূণর্নিমাণ, টি স্টল, দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন। সেলাই মেশিন, ছাগল ও অটোরিক্সা কিনে দিয়েছেন। সব মিলে প্রায় ৫০ লাখ টাকার সহযোগিতা করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কেন্দ্রের এই নজিরবিহীন সহযোগিতায় মুগ্ধ লক্ষীপুরবাসী। তারা আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির টিমকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করে নিয়েছেন। লক্ষীপুর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ে বড় অক্ষরে আলমডাঙ্গাবাসীর অবদানকে স্মরণ করে রাখতে লিখে রেখেছেন " ধন্যবাদ আলমডাঙ্গা"। বহু টি স্টলের নাম রেখেছেন "আলমডাঙ্গা"।
আলমডাঙ্গা গণত্রাণ কমিটির টিমকে লক্ষীপুরবাসী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অত্যুষ্ণ সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়েছে। গতকালের স্বেচ্ছাসেবকদের সংবর্ধনায় যোগ দিতে লক্ষীপুর থেকে একটি টিম আলমডাঙ্গায় এসেছিল। তারা আলমডাঙ্গাবাসীর প্রতি লক্ষীপুরবাসীর অপরিসীম কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার সঘন রসায়নের স্মৃতিচারণ করে গেলেন।