১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি নেতা কামাল হত্যা মামলার পরোয়ানাভুক্ত প্রধান আসামীকে ২ বছরেও গ্রেফতার করা হয়নি

প্রতিনিধি :
শরিফুল ইসলাম রোকন
আপডেট :
অক্টোবর ৪, ২০২৪
124
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

দীর্ঘ সোয়া ১ বছরেও গ্রেফতার করা হয়নি আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হোসেন হত্যা মামলার আসামিদের। হাইকোর্টের জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও নিম্ন আদালতে হাজির না হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। অভিযোগ উঠেছে,শ্যালিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ৪ দিন অবস্থান করলেও প্রধান আসামী স্বাধীন আলীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।


জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ মে রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বিএনপি নেতা কামাল হোসেনকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠালে পথের মধ্যেই তিনি মারা যান।


নিহত কামাল হোসেন আলমডাঙ্গা উপজেলায় জেহালা গ্রামের মাঝেরপাড়ার মৃত জাহান আলী মাস্টারের ছেলে। তিনি স্থানীয় বিএনপির থিঙ্ক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঠিকাদারি করতেন।


স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে ক্লিনিকপাড়ার মৃত মোতালেব হোসেনের সাথে দীর্ঘদিন যাবত কামাল হোসেনের শরিকানা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মোতালেব হোসেনের ঘরজামাই স্বাধীন আলী। ঘটনার দিন সকালেও কামাল হোসেন ও স্বাধীন আলীর মধ্যে গন্ডগোল হয়।


এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে ১১ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।


নিহতের স্ত্রী সেলিনা খাতুন বলছেন, ক্লিনিকে নেয়ার পর তার স্বামী স্বাধীনের নাম বলেছেন। সেলিনা খাতুন বলেন, আমার স্বামীর সাথে শরিকানা জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল স্বাধীনের শ্বশুর পক্ষের সাথে। এরই জের ধরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে স্বাধীন। মৃত্যুর আগে জিজ্ঞাসা করতেই স্বাধীন মেরেছে বলে তাকে জানায়।


পরবর্তীতে পুলিশ প্রধান আসামিসহ আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করে। হত্যাকান্ডের পর ১৯ মে দিনগত রাতে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। সে সময় প্রধান আসামী ঘরজামাই স্বাধীন আদালতে হত্যাকান্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছিলেন। পরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন রাহুল কুমার দাস ও আশিকুর রহমান বাদশা।

পরবর্তীতে, মামলার এক পর্যায়ে আসামীরা হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। পরে আর আদালতে হাজির হননি প্রধান আসামী স্বাধীন আলী। ফলে গত বছর ১৪ মে চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জজ মো: জিয়া হায়দার স্বাধীন আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।


আত্মস্বীকৃত খুনি স্বাধীন আলী একই উপজেলার বামানগর গ্রামের দরিদ্র কাশেম আলীর ছেলে। কলেজে পড়তে গিয়ে বখে যাওয়া স্বাধীনের সাথে ওভার স্মার্ট নাইমা নিগারের প্রেম হয়। পরে পালিয়ে গিয়ে তারা বিয়ে করেন।
এদিকে, জমি নিয়ে কামাল হোসেন ও স্বাধীনের শ্বশুর পক্ষের বিরোধ তুঙ্গে উঠলে স্বাধীনের শ্বশুর শ্বাশুড়ি বখে যাওয়া রাফ এন্ড টাফ স্বাধীনকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেন। দরিদ্র পরিবারের বখে যাওয়া সন্তানকে মেনে নেন ঘরজামাই হিসেবে। এক পর্যায়ে এই দরিদ্র পরিবারের বখে যাওয়া ঘরজামাই স্বাধীন হত্যা করেন বিএনপি নেতা ঠিকাদার কামাল হোসেনকে।


এরই মধ্যে এক বছর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বিএনপি নেতা হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী স্বাধীনকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানাভূক্ত আসামি গ্রেফতার করতে আগ্রহী হলে এত দিনেও কি গ্রেফতার করা সম্ভব ছিল না? এমন প্রশ্ন তুলেছেন হত্যাকান্ডের শিকার কামাল হোসেনের পরিবার। কামাল হোসেনের ছেলে দীপ অভিযোগ করে বলেন, "গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রধান আসামী স্বাধীন আলীর শালিকা নাইমা নিগারের বিয়ে হয়েছে। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে একটানা ৪ দিন উপস্থিত ছিল স্বাধীন। তবুও পুলিশের চোখে পলাতক আসামি ।"


আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ জানান, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার করতে পুলিশ মরিয়া। বাদীর পরিবার আসামির অবস্থান জানলে পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। বাদী পক্ষের সহযোগিতা পেলে খুব দ্রæত আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
ছবি: বিএনপি নেতা কামাল হত্যাকারী স্বাধীন।

সর্বশেষ খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram